Kartick Puja- রাতভর শতাব্দী প্রাচীন উৎসবের লড়াইয়ে জমজমাট মুর্শিদাবাদ

মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী কয়েক শতাব্দী প্রাচীন উৎসব বেলডাঙ্গার কার্তিক পুজোর 'কার্তিক লড়াই'। হাইকোর্টের অনুমতি মেলার পরই পরম্পরা মেনে ৩০০ বছরের অধিক 'কার্তিকের লড়াই' হয়।

Parna Sengupta | Published : Nov 19, 2021 2:19 PM IST

কোর্টের শর্তসাপেক্ষে মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) চলল শতাব্দী প্রাচীন উৎসবের (centuries-old festival) রাতভর 'লড়াই', সামিল হলো স্থানীয় (Locals) থেকে বহিরাগত পর্যটকরাও (Tourist)।জমে উঠলো রাতভর 'লড়াই'! তবে না এ লড়াই আক্ষরিক অর্থের 'লড়াই' নয়‌। এ হল মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী  কয়েক শতাব্দী প্রাচীন উৎসব বেলডাঙ্গার কার্তিক পুজোর 'কার্তিক লড়াই'। দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে জগদ্ধাত্রী পূজা, সকলকে ছাপিয়ে হাইকোর্টের অনুমতি মেলার পরই পরম্পরা মেনে ৩০০ বছরের অধিক 'কার্তিকের লড়াই' এ বৃহস্পতিবার রাতভর উৎসবে মেতে উঠলো স্থানীয় থেকে শুরু করে দূরদূরান্ত এমনকি ভিন রাজ্য থেকে আসা মানুষজন। 

এই বিশাল আয়োজনকে সম্পূর্ণ করতে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় পৌরসভা সকলে মিলে ঝাঁপিয়ে পড়ে একযোগে। সিসিটিভি নজরদারি থেকে শুরু করে, সাদা পোশাকের পুলিশ, মহিলা আধিকারিক, ভলেন্টিয়ার, ফায়ার ব্রিগেড, স্বাস্থ্যকর্মী সব রকমের 'টিম' তৈরি করে প্রস্তুত রাখা হয়। শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহাসিক এই উৎসবে মেতে উঠে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা। করোনা বিধিনিষেধের যাবতীয় সর্তকতা মেনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান,আলোর সাজে সেজে উঠে শহর। দিন-রাত শ’তিনেক ছোট-বড় মূর্তির নিরঞ্জনকে ঘিরে যাবতীয় উন্মাদনা। বড় মূর্তিগুলির গড় উচ্চতা ১২-১৫ ফুট। 

সেগুলিকে কাঠামো-সহ বাঁশের মাচায় চাপিয়ে শহরের রাস্তা দিয়ে বাদ্যযন্ত্র-সহ শোভাযাত্রা বেরয় যখন বাস্তবিকই দেখার মতো দৃশ্য। কে-কত ভাল শোভাযাত্রা করল, তা নিয়ে মূলত শতাধিক কার্তিকের এই 'লড়াই'।কয়েকশো বছরের পুরনো ছুতারপাড়ার বাথানগড়ের বুড়ো শিব দেখতে উৎসাহ সবচেয়ে বেশি। শহরের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা হয় বুড়ো শিবের। 

এই পুজোর উদ্যোক্তারা বলেন, যে কোনো রকমের পরিস্থিতি সামলাতে এবার  প্রোজেক্টর লাগিয়ে  যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় ওপর নজরদারি চালানো হয়"। সবচেয়ে পুরনো হিসাবে ধরলে আবার বেনেপাড়ার বাবু কার্তিক এগিয়ে। এছাড়া হাতিঢিপির হাতি কার্তিক, ঘোষ পাড়ার হাতি কার্তিক, চ্যাটার্জি পাড়ার রাজ কার্তিক, ছুতার পাড়া অমর সঙ্ঘের রাজ কার্তিক, বাজার পাড়ার রাজলক্ষ্মী, বারোয়ারিতলা ও ছাপাখানা মোড়ের শিবদুর্গা যেমন রয়েছে, তেমনই নেতাজী পার্কের সামনের কমলাকামিনী, তাঁতি পাড়ার বিরাট সরস্বতী, আশ্রম পাড়ার বিশ্বকর্মা, বড়ুয়া কলোনির বুড়ো শিব, নেতাজী পার্ক রোডের মহাপ্রভু সঙ্ঘের শ্রী চৈতন্য, বাউরি পাড়া বালক সঙ্ঘের সুবিশাল রাম-লক্ষ্মণ কাঁধে হনুমান, মিলন সঙ্ঘের চার হাতের ভৈরব, লোকনাথ সঙ্ঘের শঙ্খ হাতে নীল শিব, কাছারি পাড়ার নীল শিব, বাগদিপাড়া তমালতলার বিশ্বরূপ, বেতাল সমিতির বাল গণেশ, দরগা তলার পাশের গলির রামকৃষ্ণ নজর কেড়েছে শোভাযাত্রায়। 

ছাপাখানা নবারুণ সঙ্ঘের দক্ষযজ্ঞ পুজোর আলোকসজ্জায় মোহিত বেলডাঙাবাসী। আলোর সাজে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে শিশির সঙ্ঘ। এছাড়া রক্ষা মা তলা, বোলতলার ২৫ ফুট উচ্চতার বেশি ষাঁড়ের উপর শিব দেখতে রাত পর্যন্ত মেতে থাকলেন সকলে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন  করতে যেমন অন্ধকার রাস্তাগুলিকে আলোকিত করতে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সঙ্কীর্ণ রাস্তার দু’দিকের নিকাশি নালাকে কাঠের তক্তা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে, যাতে পড়ে গিয়ে কেউ জখম না হন। 

প্রধান মোড়গুলিতে পুরসভা অস্থায়ী তাবু বানিয়ে সেখান থেকে মাইকে বিসর্জন অনুষ্ঠানের ধারাবিবরণী প্রচার করেছে। ওই তাবুতে প্রাথমিক চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বেলডাঙার পুরো প্রশাসক বলেন, ‘‘পুরসভা থেকে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলাররাও থাকছেন। ভিড়ে কেউ হারিয়ে গেলে বা কোনও মোড়ে যানজট হলে মাইকে তা ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে।” 

এলাকার বিধায়ক হাসানুজ্জামান এই প্রসঙ্গে বলেন, বেলডাঙার একটি বিশেষ উৎসব হচ্ছে এই শতাব্দী প্রাচীন কার্তিকের লড়াই। যার জন্য স্থানীয় মানুষজন তো বটেই বহিরাগত পর্যটকরাও অপেক্ষা করে থাকেন সারা বছর ধরে। এবছর নানান নিয়ম নিষেধ এর মধ্যে দিয়ে এই কার্তিঁকের লড়াই মানুষকে তার পূর্বের স্মৃতি ফিরিয়ে দিল অনেকখানি তা বলাই যায়"। 

উৎসবের আমেজে 'কার্তিকের লড়াই' এ মুর্শিদাবাদ যেন রাতভর মেতে থাকল এক অভিনব স্মৃতির মধ্যে দিয়ে। উৎসবে যোগদান কারী পর্যটকরা জানান,"করোনার কারণে খানিকটা হলেও উৎসবের টান দেখা দিলেও, ঐতিহ্য কে বাঁচিয়ে রাখতে এই 'কার্তিকের লড়াই' মুর্শিদাবাদ বাসীর কাছে তাদের অস্তিত্বের ধারক-বাহক"।

Share this article
click me!