বাড়ি যাওয়ার জন্য টিকিট কেটেও শেষ পর্যন্ত কি মাঝপথেই নেমে গিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্র হৃষিক কোল? মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুর তদন্তে নেমে এমনই তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে।
বৃহস্পতিবার সকাল দশটা নাগাদ হোস্টেল থেকে কলকাতায় কলেজে হস্টেল থেকে বেরিয়েছিল হৃষিক। এর পর সকাল এগারোটা নাগাদ হাওড়া স্টেশন থেকে সিঙ্গুরের একটি টিকিট কাটে সে। যার অর্থ, সিঙ্গুরের বাড়িতে যাওয়ার জন্যই ট্রেন ধরেছিল হৃষিক। মৃত ছাত্রের পকেটেই ওই টিকিট পেয়েছে পুলিশ। কিন্তু টিকিট কেটেও শেষ পর্যন্ত সিঙ্গুর যায়নি হৃষিক। হাওড়ার মাত্র চারটি স্টেশন পরেই উত্তরপাড়ায় নেমে যায় ওই ছাত্র।
আরও পড়ুন- শহরে এসে দমবন্ধ, চিঠি লিখে আত্মঘাতী সেন্ট জেভিয়ার্সের মেধাবী ছাত্র
প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঘটনার দিন বেলা এগারোটার থেকে বারোটার মধ্যে বেশ কয়েকজন তাকে উত্তরপাড়া থেকে হিন্দমোটরের দিকে আপলাইন ধরে হেঁটে যেতে দেখেছিলেন। স্থানীয় একটি কাঠাল বাগানেও রেল লাইনের ধারে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল ছাত্রকে। যে ট্রেনের চাকার নীচে হৃষিক কাটা পড়ে, সেটির চালক দুর্ঘটনার পরে রেল দফতরকে দেওয়া নোটে জানিয়েছিলেন, লাইনে শুয়ে থাকা একজন উত্তরপাড়া এবং হিন্দমোটরের মধ্যে ট্রেনের নীচে কাটা পড়েছে। পরে ওই এলাকা থেকেই হৃষিকের দেহ উদ্ধার করে বেলু়ড় জিআরপি।
হৃষিকের মৃত্যুর তদন্ত আলাদাভাবে শুরু করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। প্রশ্ন উঠছে, আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকলে কেন সিঙ্গুরে যাওয়ার টিকিট কেটেছিল ঋষিক?
তদন্তকারীদের ধারণা, সম্ভবত বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দিয়ে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদল করে হৃষিক। ওই ছাত্র যে তীব্র টানাপোড়েনের মধ্যে ছিল, তা তদন্তকারীদের কাছে স্পষ্ট। সম্ভবত আত্মহত্যা করার আগেই সুইসাইড নোট লিখেছিল সে। যদিও, সুইসাইড নোটের হাতের লেখা হৃষিকেরই কি না, তা খতিয়ে দেখতে হস্তরেখা বিশারদের সাহায্যও নিতে পারেন তদন্তকারীরা।
হৃষিকের পকেট থেকে পাওয়া চিঠি পড়ে পুলিশের সামনে বেশ কিছু তথ্য উঠে আসে। চিঠিতে লেখা ছিল, হুগলির সিঙ্গুর থেকে কলকাতায় এসে শহরে জীবনযাপনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিল না হৃষিক। শুধু তাই নয়, ওই ছাত্র চিঠিতে এও লেখে যে, ইংরেজিতে পড়াশোনা করতে তাঁর বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। তার উপর, পছন্দের বিষয় অঙ্কের বদলে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করাটাও মন থেকে মেনে নিতে পারেনি ওই মেধাবী ছাত্র।
ময়নাতদন্তের পরে এ দিন দুপুরেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় হৃষিকের দেহ। সিঙ্গুরের বাড়িতে দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। হৃষিকের প্রতিবেশী, বন্ধু, শিক্ষকদের চোখের জলও বাঁধ মানেনি।