স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সচরাচর কোনও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে বা দলীয় অনুষ্ঠানে দেখা যায় না। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির তৃণমূলের কার্যালয়ে এহেন উপস্থিতি ভাল চোখে দেখছেন না কেউ।
দায়িত্ব নিয়েছেন সপ্তাহ খানেক আগেই। এরই মধ্যে তৃণমূলের কার্যালয়ে গিয়ে বিতর্ক তৈরি করে ফেললেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নব নির্বাচিত সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া নিয়ে রীতিমত জলঘোলা শুরু হয়েছে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
তৃণমূলের উত্তরীয় পরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে সেই ছবি। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পিছনে ২১ জুলাই, তৃণমূলের 'শহিদ দিবস'-এর ব্যানার ঝুলছে। তার উপরে লেখা তৃণমূল-কংগ্রেস। ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি। আশেপাশে শাসকদলের লোকজন। তাঁদের অনুকরণেই গলায় তেরঙ্গা উত্তরীয় ঝুলছে তাঁর গলায়। হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। এই ছবি প্রকাশ্যে আসার পরেই হইচই শুরু হয়েছে।
বরাবরই একটি বিষয় দাবি করে আসা হয়েছে যে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ একটি স্বতন্ত্র সংস্থা। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু যদি এই দাবি সত্যি হয়, তবে কীভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সম্বর্ধনা সভায় উপস্থিত থাকেন তিনি, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। স্কুল সার্ভিস কমিশনে নিয়োগের অভিযোগ নিয়ে যখন উত্তাল রাজ্য, সেই সময় তৃণমূলকে বিতর্ক থেকে দূরত্ব বাড়াতে দেখা গিয়েছিল। তবে এবার খোদ রাজ্যের শাসকদলকে নিয়েই তৈরি হল বিতর্ক।
স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের সচরাচর কোনও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে বা দলীয় অনুষ্ঠানে দেখা যায় না। তাই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির তৃণমূলের কার্যালয়ে এহেন উপস্থিতি ভাল চোখে দেখছেন না কেউ। তবে কীভাবে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে গেলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি? এই প্রশ্নকে আমল দিতে রাজী নন রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "শিক্ষকদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা নিয়েছি। পদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।"
গত সপ্তাহেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। বারাসাত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রামানুজ। কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এসএসসি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ায় তাঁর জায়গায় বসানো হয় রামানুজকে। সিবিআই-এর জেরার মুখেও পড়েন কল্যাণময়।
এর আগে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের মামলাতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে সিবিআই দফতরে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিনই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সচিব ও সভাপতিকে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন মানিক ভট্টাচার্য তদন্তে সহযোগিতা না করলে সিবিআই তাকে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী টেটের পরীক্ষা হয় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। ফলপ্রকাশ হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। ওই বছরই প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। পরের বছর অর্থাৎ, ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বা অতিরিক্ত মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এই নিয়োগে প্রায় ২৩ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৪২ হাজার প্রার্থীকে শিক্ষককে হিসাবে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়।