বয়স একশো ছুঁই ছুঁই, তিনশো লক্ষ্মী গড়েও দুশ্চিন্তায় সপ্তগ্রামের অনন্ত পাল

  • হুগলির আদি সপ্তগ্রামের প্রবীণ মৃৎশিল্পী অনন্ত পাল
  • বয়স প্রায় একশো ছুঁয়েছে অনন্তবাবুর
  • সরকার থেকে স্বীকৃতিও পেয়েছেন প্রবীণ মৃৎশিল্পী

debamoy ghosh | Published : Oct 13, 2019 4:33 AM IST / Updated: Oct 13 2019, 10:05 AM IST


উত্তম দত্ত, হুগলি: বয়সের ছাপ তাঁর শরীরের সর্বত্র। কিন্তু এখনও মা লক্ষ্মীর চোখ বা ঠোঁট আঁকতে গিয়ে তাঁর হাত কাঁপে না। সেই কারণেই একশো ছুঁই ছুঁই বয়সেও এবছরও তিনশো লক্ষ্মী মূর্তি গড়ে ফেলেছেন অনন্ত পাল। তার পরেও মনের কোণে অজানা আতঙ্ক উঁকি দিয়ে অনন্তবাবুর। কারণ দিন দিন প্রতিমার বরাত যে কমছে!

হুগলির আদিসপ্তগ্রামের বাসিন্দা মৃৎশিল্পী অনন্ত পাল একসময় থাকতেন বাংলাদেশে। দেশভাগের পরে এ দেশে এসে প্রথমে মাটির পুতুল তৈরি শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে শেখেন প্রতিমা তৈরির কাজ। সেই শুরু, তার পর দুর্গা, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী বা জগদ্ধাত্রী, বিশ্বকর্মার মূর্তি তৈরিতে সুনাম অর্জন করে ফেলেন তিনি। একই কাজ শিখিয়েছেন ছেলে এবং দুই নাতিকেও। অনন্তবাবুর ছেলে শ্রীদাম পালেরই বয়স হয়ে গেল ৬৭ বছর। কিন্তু প্রতিমা তৈরির কাজ থেকে এখনও 'অবসর' নেননি অনন্তবাবু। 

আরও পড়ুন- কোজাগরী পূর্ণিমায় কোন রাশির উপর কেমন প্রভাব পড়বে, দেখে নিন

আরও পড়ুন- এই নিয়মে লক্ষ্মীপুজো করলে দেবীর কৃপাদৃষ্টি সর্বদা বজায় থাকবে আপনার সংসারে

আজও একইরকম একাগ্রতা নিয়ে প্রতিমাকে রূপ দেন অনন্তবাবু। কিন্তু তার পরেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে মুখের বলিরেখাগুলো যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর। লক্ষ্মী পুজোতেই আগের তুলনায় দিন দিন কমছে বরাত। কারণ অনেকেই প্রতিবছর মাটির প্রতিমা না কিনে একবারে পেতলের মূর্তি কিনে নিচ্ছেন। চিন্তিত মুখেই অনন্তবাবু তাই বলেন, 'আমার ছেলেকেই দশ বছর বয়সে প্রতিমা তৈরির কাজ শিখিয়েছিলাম। তিন পুরুষ ধরে এই কাজ করছি আমরা। কিন্তু এর পর কী হবে জানিনা।'

প্রতিমা শিল্পী হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছেন অনন্তবাবু। মৃৎশিল্পী  হিসেবে একটা মাসিক ভাতা তিনি পান। কিন্তু তাতে তো দুশ্চিন্তা দূর হয় না। অনন্তবাবুর ছেলে শ্রীদাম পাল বলেন, 'এটাই আমাদের পিক সিজন। বাকি ছ' মাস তো বসেই থাকতে হয়।'
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একই ভাবে প্রতিমা গড়ে যেতে চান অনন্ত পাল। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তাঁর চিন্তা যেন কিছুতেই দূর হচ্ছে না। পেতল বা অন্য মূর্তি না কিনে ক্রেতারা একদিন ফের মাটির প্রতিমার দিকেই ঝুঁকবেন, এই আশাতেই এখন দিন কাটছে অনন্তবাবু এবং তাঁর ছেলের। 

Share this article
click me!