সিএএ এবং এনআরসির প্রতিবাদ জানিয়ে ফের গেরুয়া শিবিরে ভাঙন। ঘরের ছেলেরা অবশেষে ফিরে এল ঘরে। আর এই ফিরে আসায় বছরের শেষে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ফের জোয়ার লাগল তৃণমূলীদের ঘরে। জেলা সভাধিপতি বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ বিজেপির হাত থেকে ফের তৃণমূলের দখলে এল। ১৮ আসনের জেলা পরিষদের মধ্যে এখন ১৪ টি তৃণমূল ১টি নির্দল ৩টি বিজেপির দখলে রয়েছে।
আজ বালুরঘাট শহরের তৃণমূলের দলীয় অফিসে বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে যোগ দেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি লিপিকা রায়। তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন দলের জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ। আজকের এই ঘরে ফেরার অনুষ্ঠানে অর্পিতা ঘোষ ছাড়াও জেলার অনান্য বিশিষ্ট তৃণমূল নেতা নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। বিজেপি ছেড়ে আসার কারণ নিয়ে সদ্য তৃণমূলে ফেরা সভাধিপতি লিপিকা রায় দাবি করেন, বিজেপির এনআরসি ও সিএএ-র প্রতিবাদ জানানোর জন্যই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন ।পাশাপাশি তার ফের তৃণমূলে ফিরে আসার ফলে এতদিন জেলা পরিষদের যে উন্নয়ন স্তব্ধ হয়েছিল, তা তিনি শুরু করে দিতে চান বলে মন্তব্য করেন লিপিকা রায়।
নাগরিকত্ব বিল সংসদে পাশ হওয়ার পর থেকেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া পাঁচ জনের মধ্যে একজন পূর্তকর্মাধক্ষ মফিজউদ্দিন মিঁয়া আগেই বিজেপি ছেড়ে নির্দল হিসেবে কাজ করতে চান। সাংবাদিক বৈঠক করে সেই কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আজ জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফের তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় মাত্র চারজন এখনও বিজেপিতে রয়ে গেলেন। যদিও আজ দলে যোগ দিয়ে লিপিকা রায়ের দাবি তারাও ফের তৃণমূলে যোগ দেবে। সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
অপরদিকে জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ জানান, উনি বেশ কিছুদিন আগে থেকেই ফের দলে ফেরার কথা জানিয়েছিলেন আমায়। পাশাপাশি উনি বিজেপির চালু করা কালা কানুনের প্রতিবাদে দল ছেড়ে ফের আমাদের তৃণমূল নেত্রীর এই লড়াইয়ে সামিল হয়ে লড়াই করতে চান। সে কারণেই তিনি ওই দল ছেড়ে ফের তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। উনি যোগ দেওয়াতে জেলা পরিষদে সংখ্যার বিচারে আমরা ১৪ জন হয়ে গেলাম। তাই জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে এল। এবার জেলার উন্নয়ন করাই আমাদের লক্ষ্য়। বাকি ৩ জন বিজেপি ও ১ জন এই সময় নির্দল হয়ে আছেন, তারাও আগামী দিনে দলে চলে আসবেন বলে দাবি করেন তিনি।
গত লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্রের মতো বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রেও রাজ্যের শাসক দলের পরাজয় হয়েছিল। যদিও হারের কারণ নিয়ে দলনেত্রী দলের জেলা সভাপতিকেই দায়ী করে তৎকালীন তার বহুদিনের কর্মী বিপ্লব মিত্রকে সরিয়ে তার জায়গায় লোকসভা ভোটে পরাজিত প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকেই জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেন। কেননা দলের প্রার্থীকে প্রথম থেকেই বিপ্লব মিত্র মেনে নিতে চাননি বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। আর এরপরেই ক্ষুদ্ধ বিপ্লব মিত্র গত ২৪ জুন জেলা পরিষদের তার অনুগামী বলে পরিচিত সভাধিপতি লিপিকা রায় সমেত ১০ জনকে নিয়ে দিল্লির বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। ফলে জেলা পরিষদ তৃণমূলের হাতছাড়া হয়ে পড়ে। তার জায়গায় রাজ্যে প্রথম কোনও জেলা পরিষদ বিজেপি দখল নিল বলে সে সময় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য বিজেপির নেতা নেত্রীরা দাবি জানাতে থাকে।