জেলায় প্রায় ৪৫০ এর অধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছেন। এবার তাঁরা সকলেই ওই প্রকল্পে আবেদন করতে চলেছেন বলে জানা গিয়েছে জেলা প্রশাসন সূত্রে।
আজও যেন তাঁরা 'ব্রাত্য' সমাজের বুকে। তাঁদের পথে-ঘাটে দেখলে অনেকেই নাক উঁচু করে চলেন। পোশাকি নাম 'রূপান্তরকামী' ।সরকারি খাতায় অবশ্য তাঁরা ঠাঁই পেয়েছে 'তৃতীয় লিঙ্গ' এর মানুষ হিসেবেই। সমাজের বুকে নানান বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের জীবন যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য।আর সেই মতো মুর্শিদাবাদ জেলায় নজির সৃষ্টি করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
রূপান্তরকামী (Transgender people) দের আরোও একধাপ এগিয়ে দিতে তথা সমাজে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সমান অধিকার নিয়ে মিলেমিশে থাকার জন্য সদ্য চালু হওয়া 'লক্ষীর ভান্ডার' (Lakshmi Bhander) প্রকল্পে এই প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের (Transgender) মানুষদের নথিভূক্ত করা হল। শুধু তাই নয় আগামী দিনে জেলার এমন আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবহেলার শিকার হওয়া 'তৃতীয় লিঙ্গ' এর মানুষরা যাতে একইভাবে সমমর্যাদা নিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে সেই উদ্যোগ নেওয়ার পথে এক ধাপ এগোল জেলা প্রশাসন।
জেলার সর্বত্র বুদ্ধিজীবী মহল কুর্নিশ জানাচ্ছে এমন ভাবনাকে। শুধু তাই নয় যাদের জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ সেই তৃতীয় লিঙ্গে'র মানুষেরাও রীতিমতো আপ্লুত। মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত অরুণাভ নাথ জেলার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সংগঠনের প্রতিনিধি। তিনি নিজের নানান ধরনের সাংস্কৃতিক মূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। মোবাইলে প্রথম ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের ‘আইডি’ নম্বর চলে আশায় রীতিমতো আবেগ তাড়িত তিনি।
জেলায় প্রায় ৪৫০ এর অধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছেন। এবার তাঁরা সকলেই ওই প্রকল্পে আবেদন করতে চলেছেন বলে জানা গিয়েছে জেলা প্রশাসন সূত্রে। মুর্শিদাবাদের উচ্চ প্রশাসনিক আধিকারিক জানান, “ সীমান্তের জেলা মুর্শিদাবাদে জেলার ১৫ লক্ষ এর বেশি মহিলা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে আবেদন করেছেন। অরুণাভ নাথের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের অনুমোদন এসে গিয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও ওই প্রকল্পে আবেদনের সুযোগ করে দেওয়া হলো। তাঁদের আবেদনও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশা করছি। ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে স্থানীয় ব্লক অফিসে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও আবেদন করতে পারেন। এটা এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত” ।
জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করেছিলেন বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের বাসিন্দা তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি অরুণাভ নাথ। হাজারো বাধা বিপত্তি কাটিয়ে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পের আওতায় চলে এলেন তৃতীয় লিঙ্গের অরুণাভও।
যাকে নিয়ে এত কথা সেই অরুণাভ নাথ বলেন, “আমি আশা নিয়েই নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে আবেদন করেছিলাম। আবেদন পত্রে ‘স্ত্রী’ বা ‘কন্যা’ ছাড়া আর কোনও ‘অপশন’ ছিল না। ফলে কোথায় টিক দেব, তা ভেবেই পাচ্ছিলাম না। সেখানে তৃতীয় লিঙ্গের কোনও উল্লেখ ছিল না। ফলে ওই জায়গা ফাঁকা রেখেই আবেদন করেছিলাম। আবেদন করেও সন্দেহ ছিল আমার। মোবাইলে এসএমএস এসেছে। আমি খুবই খুশি। নতুন একটা দিগন্ত খুলে গেল আমাদের জন্য। ফোনে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরাও এবার এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাবে"।