মাধ্যমিকে ৯৯ শতাংশ নম্বর, মেধাবী ছাত্রী উৎসার স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে অভাবে

পারিবারিক প্রতিকূলতাকে জয় করেই মাধ্যমিকে ৯৯ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের উৎসা দাস। কিরণবালা বালিকা বিদ্যাশ্রমে পড়াশুনা করত সে।

বাবা টিউশন পড়ান। লকডাউনে টিউশন প্রায় জোটে না বললেই চলে। কষ্টেসৃষ্টে দিন কাটে। কিন্তু পারিবারিক প্রতিকূলতাকে জয় করেই মাধ্যমিকে ৯৯ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়েছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের উৎসা দাস। কিরণবালা বালিকা বিদ্যাশ্রমে পড়াশুনা করত সে। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি। কিন্তু উৎসা বরাবরেরই মেধাবী বলে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। ক্লাসে বরাবর সে প্রথম হত। শুধু স্কুলে সবার মধ্যে সর্বোচ্চ নয়। চাঁচল মহকুমার স্কুলগুলির মধ্যেও তার প্রাপ্ত নম্বর সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বলে জানা গিয়েছে। তার প্রাপ্ত মোট নম্বর ৬৯৪। 

কিন্তু প্রতিকূলতাকে জয় করে ভালো ফল করলেও পরিবারের অর্থাভাব কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। যদিও সব বাধাকে দূরে সরিয়ে আপাতত অধ্যাপক হওয়ার লক্ষে অবিচল উৎসা! তার প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৯৯, ইংরেজিতে ৯৯, অঙ্কে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯৯ ও ভূগোলে ৯৯ পেয়েছে।

Latest Videos

 হরিশ্চন্দ্রপুরের কলমপাড়ায় বাড়ি উৎসার। বাবা উজ্জ্বল দাস ও মা অজন্তা দাস। উজ্জ্বল বাবুর ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হবেন। কিন্তু বিকম পাশ করার পর সংসারের চাপে আর্থিক সমস্যায় আর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেননি।

সংসার চালাতে টিউশন শুরু করেন তিনি। উজ্জ্বল দাসের একমাত্র মেয়ে উৎসা। সঙ্গে একটি বইখাতার ছোট দোকানও রয়েছে। কিন্তু করোনাকালে সেই দোকানও কার্যত বন্ধ। ঠিকমতো জোটে না টিউশনও। তারপরেও হার মানেননি তিনি। মেয়ের যাতে পড়াশুনায় কোনও সমস্যা না হয় সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন। আর তার মান রেখেছেন মেয়ে উৎসাও। শুধু পড়াশুনাতেই মেধাবি নয়। নাচ, গান, আঁকা, আবৃত্তিতেও পারদর্শী উৎসা। ইচ্ছে থাকলে যে সব বাধাকেই দূর করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছে সে।

উৎসার পরিবার, তার স্কুল ও এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের অভাবে বেশিদূর পড়াশুনা করতে পারেননি। অভাবের জন্য মেয়ের সমস্যার কথাও জানেন বাবা উজ্জ্বল দাস। তাই নিজের অভাবের মধ্যেও অনেককেই নিখরচায় টিউশন পড়িয়েছেন তিনি। এমনকি কিরণবালা বালিকা স্কুলে যখন অঙ্কের শিক্ষক ছিল না তখন তিন বছর বিনা পারিশ্রমিকে সেখানে পড়িয়েছেন তিনি।

মেধাবী ছাত্রী উৎসা দাস বলে," নবম শ্রেণীতে ৯৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলাম। মাধ্যমিকে সেই রকম আশা ছিল। আশা পূর্ণ হয়েছে। আমি ৬৯৪ পেয়েছি। বড় হয়ে অধ্যাপিকা হতে চাই। দুস্থ পরিবারের যে সব ছাত্র-ছাত্রীরা টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারে না তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।"

উৎসার বাবা উজ্জ্বল কুমার দাস বলেন, "মেয়েকে নিয়ে আমাদের আশা পূর্ণ হয়েছে।ও ভবিষ্যতে অধ্যাপিকা হতে চাই।যাতে হতে পারে আমরা ওর পাশে থাকবো।আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল।ওদের স্কুলে পার্টটাইম তিন বছর পড়িয়েছি।আমার স্বপ্ন মেয়ের মধ্যে দিয়ে পূরণ হতে দেখে খুব ভালো লাগবে। আমি প্রাইভেট টিউশন পড়াই।সাথে একটি ছোট বই-খাতার দোকান রয়েছে।কিন্তু লকডাউনের ফলে ব্যবসার অবস্থা খারাপ।আমার কাছে যারা টিউশনি পড়ত অনেকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এবার নিজের মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখে আরো ভালো লাগছে।"

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা যুথীপুষ্প ভৌমিক বলেন,"উৎসা ছোট থেকেই পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল। ওকে নিয়ে আমাদের তাই আশা ছিল। ওর এই ফলাফল আমাদের স্কুলকে গর্বিত করেছে। ও অন্যান্য ছাত্রীদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শুধু পড়াশোনা নয় সাথে সব কিছুতেই ও মেধাবী খুব ভালো। নাচ, গান, আঁকা সব খুব ভালো পারে। আমাদের স্কুলে যখন গণিতের শিক্ষিকা ছিল না। তখন ওর বাবা বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়েছে। আমরা শিক্ষিকারা আজ খুব আনন্দিত।"

Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury