
ফল প্রত্যাশিতই ছিল। সোমবার চার পুরনিগমের নির্বাচনে জয়জয়কার হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC)। কিন্তু, কলকাতা পুর নির্বাচন ২০২১-এর (KMC Election 2021) পর এই চার পুরনিগমের নির্বাচনেও মিলল রাজ্য-রাজনীতিতে বিরোধী মুখে বদলের ইঙ্গিত। রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি (BJP) হলেও, ভোট প্রাপ্তির শতাংশ হিসাবে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বামেরা (Left Front)। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে ধারাবাহিকভাবে বিজেপির ভোট বেড়েছিল। পিছিয়ে পড়েছিল বামেরা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এর চূড়ান্ত রূপ দেখা গিয়েছিল। প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল বিজেপি। তবে, তারপর থেকেই আবার চাকা উল্টো দিকে ঘুরতে শুরু করেছে।
উত্তরবঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই ভোট বেড়েছিল বিজেপির। কিন্তু, এবার চিত্রটা বদলে গিয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভা এলাকায় বিধানসভা নির্বাচনের সময়ও ভোট প্রাপ্তিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এবার শিলিগুলির পুরসভায় (Siliguri Municipal Corporation) বোর্ড গড়ছে তৃণমূল। ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৭টিতেই জিতেছে শাসক দল। আর বিরোধীদের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ৫টি ওয়ার্ডে, বামেরা ৪টিতে, কংগ্রেস ১টি ওয়ার্ডে। তবে ভোট প্রাপ্তির শতাংশ হিসাবে বিজেপিকে জোর টক্কর দিচ্ছে বামেরা। শিলিগুড়িতে তৃণমূল পেয়েছে ৪৭.২৪ শতাংশ ভোট। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি পেয়েছে ২৩.২৪ শতাংশ। বামেরা তৃতীয় হলেও, তাদের প্রাপ্ত ভোট ১৮.২৮ শতাংশ আর কংগ্রেস (Congress) পেয়েছে ৫.৩২ শতাংশ ভোট। এমনকী শিলিগুড়িতে জয়ী বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষও (Shankar Ghosh) পুর নির্বাচনে ১৯ ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন - বিধাননগরে প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের নামে পড়ল ভোট, অভিযোগ বামেদের
আরও পড়ুন - 'বিধানননগরে মেয়র মমতা' - চমকে দিলেন সব্যসাচী, স্ত্রী পেলেন দিদির ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপহার
দক্ষিণবঙ্গে বিধাননগর (Bidhannagar) এবং চন্দননগর (Chandannagar), দুই পুরসভাতেই ভোট প্রাপ্তির শতাংশ হারে বিজেপিকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বামেরা। বিধাননগরে প্রায় হোয়াইট ওয়াশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৯টিতেই জিতেছে তারা। বাকি ২টি ওয়ার্ডের ১টি পেয়েছে কংগ্রেস, আরেকটিতে জিতেছে নির্দলরা। এখানে তৃণমূল ভোট পেয়েছে ৭৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বামেরা পেয়েছে ১১ শতাংশ। বিজেপি পেয়েছে ৮ শতাংশ। কংগ্রেস একটি আসন জিতলেও তাদের ভোট প্রাপ্তির হার ৩ শতাংশ। অন্যান্যরা ৩ শতাংশ।
চন্দননগরেও প্রায় একই চিত্র। ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ভোট হয়েছে ৩২টিতে। তৃণমূল জিতেছে ৩১টিতে। ভোট পেয়েছে ৫৯ শতাংশ। বামেরা মাত্র ১টি আসন জিতলেও, তাদের ভোট প্রাপ্তির হার ২৮ শতাংশ। আর বিজেপি নেমে গিয়েছে ৯ শতাংশ ভোটে, আসন জোটেনি একটিও। কংগ্রেস পেয়েছে ১ শতাংশ ভোট।
আসানসোলে (Asansol), কিছুটা মুখ রক্ষা হয়ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের। আসানসোলের নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফল এখনও সামনে আসেনি। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ১০৬ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছে বা এগিয়ে রয়েছে ৯১টি আসনে। বিদেপি এগিয়ে বা জয়ী ৭টি আসনে। আর বাম ও কং পেয়েছে যথাক্রমে ২ ও ৩টি আসন। নির্দলরা জয়ী হয়েছে ৩টি ওয়ার্ডে। ভোট প্রাপ্তির মোটামুটি যে হিসাব এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, তাতে তৃণমূল পেয়েছে ৬৫ শতাংশের মতো ভোট। আর বিজেপির প্রাপ্তি ১৬ শতাংশ ভোট। মাত্র ৪ শতাংশ ভোট কম পেয়েছে বামেরা, অর্থাৎ ১২ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস ও অন্য়ান্যরা পেয়েছে যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ১ শতাংশ ভোট।
শুধু ভোটপ্রাপ্তির শতাংশ হিসাবেই নয়, চারটি পুরনিগমেই দ্বিতীয় স্থানে থাকার নিরিখেও সম্ভবত বিজেপিকে পিছনে ফেলতে চলেছে বামেরা, এখনও পর্যন্ত সেরকমই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে কলকাতা পুর নির্বাচনেও, তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) ১৩৪টি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছিল। বিজেপির (BJP) ঘরে গিয়েছিল ৩ টি, বামেদের (Left Front) ২ টি, কংগ্রেসের (Congress) ২ টি এবং নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন ৩ টি ওয়ার্ডে। তবে, ৬৫ টি আসনে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বামেরা। ৪৮টি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় ছিল বিজেপি, ১৬টি ওয়ার্ডে হয়েছে কংগ্রেস। তৃণমূল কংগ্রেস ভোট পেয়েছিল ৭২ শতাংশ। বামেরা পেয়েছিল ১১ শতাংশ, বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯ শতাংশের আশেপাশে।
বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে বামেদের ক্রমাগত রক্তক্ষয় দেখা গিয়েছিল। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসাবে দ্রুত উত্থান ঘটেছিল বিজেপির। বলা হচ্ছিল বামের ভোট গিয়েছে রামে। কিন্তু, বিধানসভা নির্বাচনে গেরুয়া শিবিরের বাংলা জয়ের স্বপ্ন ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে, প্রথমে কলকাতা পুর নির্বাচন এবং তারপর এই চার পুরনিগমের নির্বাচনেও কিন্তু, বিরোধী ক্ষেত্রে বিজেপিকে পিছনে ফেলে বামেদের পুনরুত্থানের ইঙ্গিত দেখা গেল। তৃণমূল বিরোধী ভোট, রাম শিবির থেকে বাম শিবির মুখী হচ্ছে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।