বিজেপির দাবি 'বিজ্ঞাপন', মমতার বাজেটের সিংহভাগই পেল সমাজকল্যান প্রকল্প


বুধবার পেশ হয়েছে ২০২০-২২'এর রাজ্য বাজেট

বাজেটের মোট পরিমাণ ৩,০৮,৭২৭ কোটি টাকা

কোন কোন প্রকল্পে বরাদ্দ হল বেশি

কোন কোন বিষয়ে পাওয়া গেল আর্থিক স্বস্তি

Asianet News Bangla | Published : Jul 8, 2021 10:16 AM IST

বুধবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পেশ করা হয়েছে ২০২০-২২ অর্থবছরের রাজ্য বাজেট। মোট ৩,০৮,৭২৭ কোটি টাকার বাজেটে মূল জোর দেওয়া হয়েছে উন্নয়মূলক প্রকল্প, পরিকাঠামোর উন্নয়ন, স্ট্যাম্প শুল্কে বিশেষ ছাড় এবং সড়ক শুল্কের সংশোধনের উপর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের দাবি ফেব্রুয়ারির অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে যেমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেই মতোই আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র অসুস্থ থাকায়, বুধবার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্য বাজেট পেশ করেন। তাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রের সহায়তা অনুদান সহ ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রাজস্ব সংগ্রহ হবে ১,৮৬,৬৮১.২৬ কোটি টাকা এবং এই সময়ের জন্য মোট ব্যয় হবে ২,১৩,৩৪৬.৫১ কোটি টাকা। এরমধ্যে সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির পিছনেই ব্যয় করা হবে ১,০৭,৪৯৪.৭৪ কোটি টাকা।

বাজেটের বক্তৃতায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, গত দশ বছরে অবিচ্ছিন্নভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে রাজ্যের অর্থনীতি। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে মোট রাজ্য়ের উৎপাদিত পণ্য (GSDP) ছিল ৪,৬০,৯৫৯ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩,৫৪,৫১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ১০ বছরে জিএসডিপি বেড়েছে ২.৯৪ গুণ। সামাজিক খাতে ব্যয় ২০১০-১১ এর থেকে ২০২০-২১ এ ১০.১১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে কৃষি ও কৃষির সঙ্গে জড়িত পরিষেবা খাতে বৃদ্ধি হয়েছে ১০.৫ গুণ এবং পরিকাঠামো খাতে বৃদ্ধি হয়েছে ৫.৫৮ গুণ।

ভারতের সঙ্গে তুলনা করে রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি ৭.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, সেখানে বাংলার জিডিপি ১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কৃতত্ব তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেন, কোভিড-১৯ মহামারী এবং ঘূর্ণিঝড় আমফান ও যশের কারণে গত এক বছরে মারাত্মক আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও রাজ্য সমস্ত আর্থিক পরামিতি সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্য সাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মতো বেশ কয়েকটি সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্পকে বাজেটে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাজেটে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু আর্থিক স্বস্তির প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জনগণের অর্থনৈতিক কষ্ট লাঘব করার লক্ষ্যে, রাজ্য সরকার মোটর যানবাহন শুল্ক ও অতিরিক্ত শুল্কের এককালীন ছাড়ের মেয়াদ ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়াচ্ছে। এছাড়া, রিয়েল এস্টেট সেক্টরের সংকটকে বিবেচনা করে সরকার, বৈশিষ্ট্য এবং সম্পত্তির দামের উপর নির্ভর করে স্ট্যাম্প শুল্কের হার ২ শতাংশ কমিয়েছে। সেইসঙ্গে জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট বাড়ি ইত্যাদির কাজের রেজিস্ট্রেশনের জন্য সার্কেল রেট বা বাজার মূল্য ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই এই দুই সুবিধা গ্রহণ করা যাবে।

বাজেট পেশের পর ভার্চুয়াল মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেছেন, চাহিদা তৈরির উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষের হাতে যত বেশি সম্ভব অর্থ প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করা হয়েছে এই বাজেট তৈরির সময়ে। চাহিদা বাড়লে, শিল্প উত্সাহিত হবে। পুরো বিশ্বই এখন ম্যাক্রো অর্থনীতিতে ফোকাস করছে। অন্যদিকে কেন্দ্রের নীতি হ'ল ঋণ দেওয়া এবং কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করা। এতে কী লাভ হচ্ছে, প্রশ্ন করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, এই বাজেট দেখিয়ে দিয়েছে, নির্বাচনী ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তৃণমূল সরকার ঠিক সেগুলিই করছে।

অন্যদিকে, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল, বিজেপি এই বাজেটের কড়া সমালোচনা করে বলেছে এটি তৃণমল কংগ্রেসের বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কিছুই না। অর্থনীতিবিদ তথা বিজেপি বিধায়ক অশোক লাহিড়ী জানিয়েছেন, জিএসডিপি গণনা করার সময় রাজ্যগুলিকে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। বাংলা সরকার যে বৃদ্ধির হার দেখিয়েছে তা সঠিক নয়। আসলে বৃদ্ধির হার হল ২.৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জাতীয় গড়ের তুলনায় বাংলার অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে। যদি সত্য়িই এত উন্নয়ন হত, তাহলে বাংলা থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিতেন না। এটাই প্রমাণ করে যে বাংলা পিছিয়ে পড়েছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাজেটে সরকার কল্যাণমূলক প্রকল্পের কথা বলেছে, কিন্তু কতটা তা কেন্দ্রের সহায়তায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় করা হয়েছে, তা বলেনি।

 

Share this article
click me!