আইআইটি খড়গপুরে সুযোগ পেয়েছে মেধাবী ছোটন, খরচ জোগাতে সরকারের কাছে কাতর আর্জি ফেরিওয়ালা বাবার

Published : Nov 05, 2022, 11:15 AM IST
IIT Kharagpur

সংক্ষিপ্ত

‘‘ভর্তির জন্য অনেক টাকা জোগাড় করা বাকি”, জানিয়েছেন বাংলার মেধাবী ছাত্র। বাবা কানাই জানেনই না, ছেলের জন্য আসলে কতখানি টাকার প্রয়োজন।

বাবার ভরসা সস্তার মোপেড, ছেলের সঙ্গী বাইসাইকেল। সকাল সকাল বাঁকুড়া শালতোড়ার কাচা-পাকা রাস্তা ধরে দুজনেই বেরিয়ে পড়তেন মালা, চুড়ি, চুলের ফিতের মতো রকমারি জিনিসপত্র ফেরি করতে। ছোটবেলা থেকে এভাবেই চলেছে সংসার। সেই ছেলে আর বাবা একদিন পৌঁছে গেল খড়গপুরের আইআইটি প্রতিষ্ঠানের গেটে। দ্বাররক্ষীরা প্রথমে বুঝতেই পারেননি, কেন এক সামান্য ফেরিওয়ালা নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষার ময়দানে।

এরপরেই জানা যায় আসল কারণ। বাঁকুড়ার পাবরা গ্রামে হতদরিদ্র ফেরিওয়ালা কানাই কর্মকার। ছোটবেলা থেকেই তাঁর ছোটছেলে ছোটন পড়াশোনায় তুখড়। মেধাবী ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। পরামর্শদাতাদের উৎসাহে অতি টানাটানির মধ্যে দিয়ে সংসার চললেও ছোট ছেলের পড়ার খরচ জোগাড় করার কথা কোনওদিন ভোলেননি দরিদ্র কানাই। কিন্তু, অভাবের সংসারে হঠাৎ এল বদল। মেধাবী কানাই সমস্ত বাধাবিপত্তি জয় করে পেয়ে গেছেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ। তাও আবার আইআইটি খড়্গপুরের মতো নামজাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা রয়েছে ছোটনের। এখন মোপেডে চড়ে সংসার সংগ্রামে বাবা একা। সেই দুশ্চিন্তার চেয়েও বড় চিন্তা হল, তার ৪ বছরের কোর্সের খরচ পড়বে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা!

বাঁকুড়ার শালতোড়ার যে গ্রামের নামই শোনেনি পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ বাসিন্দা, সেই প্রত্যন্ত পাবরা গ্রামের লড়াকু পড়ুয়া ছোটন, ছোটবেলা থেকে গ্রামের স্কুলে পড়ে প্রশংসা জিতেছিলেন শিক্ষকদের। গ্রামের স্কুল থেকে মাধ্যমিকের পর বাঁকুড়া শহরের একটি স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে ভর্তি হন তিনি। শুরু থেকেই তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল অন্যান্য ছাত্রদের চেয়ে একেবারে আলাদা। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখে এবছর জেইই মেইন এবং অ্যাডভান্স পরীক্ষার বেড়া টপকে ফেলেছেন। সুযোগ পেয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরে।

ছেলের সাফল্যে কর্মকার পরিবারে আনন্দের রেশ এলেও আর্থিক অনটনের আশঙ্কাতে ঘুম উড়েছে বাবা মায়ের। পড়াশোনায় তাঁর আগ্রহ দেখে শত কষ্টেও তাতে বাধা দেননি মা-বাবা। কিন্তু এখন ছেলের পড়ার খরচ সামলাবেন কী ভাবে, তা ভেবেই কূলকিনারা পাচ্ছেন না কানাই এবং ববিতা কর্মকার। স্বামী স্ত্রী দু’জনেই অভাবের তাড়নায় হাইস্কুলের সীমানা পার করতে পারেননি। মা-বাবার মতো একই দশা পরিবারের বড় ছেলেরও। টানাটানির সংসারে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে রোজগারের পথে মন দিয়েছেন তিনিও। কিন্তু, ছোটনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ম্লান হতে দিতে চায় না তাঁর পরিবার।


 

আইআইটি খড়্গপুরে ভর্তির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ১ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা জোগাড় হবে কী ভাবে। শুধু কাউন্সেলিং করাতেই দরকার ৩৫ হাজার টাকা। কীভাবে আসবে এতও টাকা? ছোটনের স্বপ্নপূরণের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু, শিক্ষক ও পাড়াপ্রতিবেশীরা। গ্রামের শিক্ষক অভিজিৎ মণ্ডল নিজে এসেছিলেন ছোটনকে ট্রেনে তুলে দিতে, তিনি ছাত্রের হাতে দিয়েছেন একটি গীতা ও বেশ কিছুটা অর্থসাহায্য। এতও মানুষের আর্থিক সহায়তায় আইআইটিতে কাউন্সেলিংয়ের খরচ উঠে গিয়েছে ছোটনের।

এরপর খড়্গপুরের ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তির জন্য লক্ষাধিক টাকা জমা দিতে হবে ছোটনকে। ‘‘ভর্তির জন্য অনেক টাকা জোগাড় করা বাকি। সরকারি সাহায্য পেলে ভালো হয়”, জানিয়েছেন মেধাবী ছাত্র।

ছেলের পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাবা কানাই কর্মকারও। তাঁর বিষয়টি একটু অন্যরকম, তিনি আসলে জানেনই না যে আইআইটি খড়্গপুরে পড়াশোনার জন্য ঠিক কত অঙ্কের টাকার প্রয়োজন হয়। কানাইয়ের বক্তব্য, ‘‘আমরা তেমন লেখাপড়া জানি না। আইআইটিতে পড়ার সুযোগ পেয়েছে ছেলে। কিন্তু সেখানে পড়ার খরচ কেমন, তা-ই জানি না। পাড়াপ্রতিবেশীরা বলছেন, ‘খরচ অনেক।’ কী ভাবে সে টাকার জোগান দেব, ভাবলেই রাতের ঘুম উড়ে যাচ্ছে।’’ ছোটনের মা ববিতা কর্মকার আক্ষেপ করেছেন, ‘‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয় আমাদের। সরকারি সাহায্য না পেলে ছেলের পড়ার খরচ চালাতে পারব না আমরা।’’

 

আরও পড়ুন-
ডিআরএম নয়, ভারতীয় রেলের প্ল্যাটফর্ম টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করবে কেন্দ্র সরকারই, বড়সড় ঘোষণার পরেই স্বস্তি যাত্রীদের
সপ্তাহ জুড়ে শুকনো আবহাওয়া, জলপাইগুড়ির চেয়েও কমে গেল কলকাতার তাপমাত্রা
সায়গল হোসেনকে আর নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায় না ইডি, আদালতের নির্দেশ মেনে ঠাঁই হল তিহাড় জেলে

PREV
click me!

Recommended Stories

কেন যান নি গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে? দেখুন কী বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Suvendu Adhikari: বঙ্কিমদা বলায় মোদীকে তুলোধনা তৃণমূলের, পাল্টা দিয়ে চরম আক্রমণ শুভেন্দুর