যে গ্রাম একসময় কুখ্যাত ছিল ‘লালবাজার’ নামে, সেই গ্রামেই এসেছে রঙের বাহার। সাঁওতাল মানুষদের পড়াশোনা শেখাচ্ছে কলকাতার চালচিত্র একাডেমী সংস্থা।
দার্জিলিং কিংবা পাহাড় ঘেরা পুরুলিয়া অথবা দীঘার সমুদ্র কিংবা জঙ্গল অবস্থিত সুন্দরবনে পর্যটনের স্বাদ নিতে কে না ভালবাসে। তাই পুজোর মরশুম থেকে শুরু হয়ে যায় পর্যটকদের আনাগোনা এই পর্যটন স্থানগুলোতে। তবে এবার বিশ্বের মানচিত্রে পর্যটনের জায়গা হিসেবে দখল নিতে চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়িয়ে ঝাড়গ্রাম অধ্যুষিত খোয়াব গাঁ। এই গ্রামের ইতিহাস বলতে গেলে বলা যায় একসময় এই গ্রাম লালবাজার নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে এই দায়িত্ব নিয়ে এই গ্রামের ভোল পাল্টে দেন কলকাতারই চালচিত্র একাডেমী সংস্থার লোকজন। মূলত এই একাডেমির লোকজন এই গ্রামে ঘুরতে আসেন বেশ কয়েক বছর আগে। তাঁরা এসে এই লোধা, শবর ও কুড়মি পরিবারদের দেখে শিক্ষিত, স্বনির্ভর এবং পর্যটনে উন্নত করে তুলতে একটি পরিকল্পনা করেন।
এই পিছিয়ে পড়া আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে লোধা শবরদের পরিবার এবং বাচ্চাদের ট্রেনিং দেওয়া শুরু করেন চালচিত্র একাডেমী সংস্থার সদস্যরা। এই গ্রামের সব মিলিয়ে রয়েছে ১৩টি বাড়ি। তাই সেই বাড়িতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকা শুরু করেন তাঁরা। প্রতি বছরই এই চিত্র পরিবর্তন করেন এই সদস্যরা। প্রথম প্রথম এই চিত্র অংকন করতেন সদস্যরা কিন্তু পরবর্তীকালে এই দৃশ্য অংকন করেন এলাকার এই লোধা শবর পরিবারের ছেলেমেয়েরা। তাদের সেই ভাবেই দক্ষ করে তোলা হয়। এছাড়াও এই এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা,গাছপালাকে ফেলে না দিয়ে তাকে ব্যবহারযোগ্য গড়ে তোলা। গাছের মূল শিকড় দিয়ে কাটুম কুটুম করে একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হয়েছে। ছাঁচ নিয়ে এসে ডোকরার কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এরই সঙ্গে কুঁড়েঘর তৈরি করার ভাবনাচিন্তা চলছে। এই পরিবার গুলিকে আর্থিক দিক সাহায্য করে তাদের আধুনিক যুগের সঙ্গে প্রস্তুত করে ফেলেছেন এই সংস্থার সদস্যরা। যদিও বহু রাজ্য ও জেলার মানুষ ছাড়াও এই গ্রামে এখন ঘুরতে আসেন দেশ বিদেশের বহু পর্যটক।এছাড়া সামনেই বয়ে যাওয়া কেচেন্দা খালের জল এবং এই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করেন পর্যটকেরা। আগামী দিনে প্রথম সারিতে পর্যটনের কেন্দ্র হিসেবে ছাপ ফেলতে চলেছে এই জঙ্গলমহল লোধা শবর অধ্যুষিত খোয়াব গাঁ।
চালচিত্র একাডেমির দায়িত্বে থাকা মৃণাল মন্ডল বলেন, ‘বছর কয়েক আগে ঘুরতে আসি এই গ্রামে। এসেই ভালো লেগে যায়। এরপর আমাদের সংস্থা থেকে ভাবনা চিন্তা করে গত ২০১৮ সাল থেকে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। এলাকায় লোধা ও শবর পরিবারদের কাঁথা সেলাই, কাটুম কুটুম শেখানো হয়। এছাড়া তাদের বাচ্চাদের এই বাড়ি অঙ্কন করার ট্রেনিং-ও দেওয়া হয়। আমাদের ভবিষ্যত তারাই। আমরা চাই জঙ্গলমহলের এই লোধা শবর পরিবার শিক্ষিত হয়ে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলুক।’
এই গ্রামের পূজা আহির ও শিখা আহির নামে কিশোরীরা জানায় আমাদের গ্রাম আমরা সাজিয়ে তুলেছি। আমাদের দক্ষ করে তুলেছে এই চালচিত্র সংস্থার লোকজন। আমরা খুবই উৎসাহী। ভালো লাগে এই ধরনের কাজ করতে। মাঝে মাঝে পর্যটকরা আসে, আর খোঁজ খবর নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন-
আমেরিকার পর এবার কানাডাতেও নজরদারি চিনের? রহস্যময় বস্তুটিকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিলেন জাস্টিন ট্রুডো
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেল ৩১ ডিগ্রি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র আগেই তীব্র গরমে হাঁসফাঁস কলকাতাবাসীর
অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কত বাড়ল জ্বালানির দাম? দেখে নিন আজকের রিপোর্ট