লন্ডন, আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান থেকে শুরু করে নেদারল্যান্ডস এমনকি পৃথিবীর বহু দেশেই বাঙালির বাস। আর সেই কারণে বিশ্বের একাধিক দেশে দুর্গাপুজো হয়
বাপের বাড়ি আসতে উমার এখনও ঢের দেরী। উমা এখন কৈলাসে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছে। তবে আগে থাকতেই কুমোর পাড়ার মৃতশিল্পীরা নিজেদের তাড়নায় এবং জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে বেঁচে থাকার জন্য উমাকে সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে পাঠাতে এখন রীতিমতো ব্যস্ত। কলকাতা থেকে শুধু লন্ডন-সহ একাধিক দেশে যাচ্ছে দেবী দূর্গা। আর সেই কারণে বসন্তের প্রাক্কালেই দিনরাত এক করে বাড়তি দুটো পয়সার মুখ দেখার জন্যই কুমোরপাড়ার মৃৎ শিল্পীরা মৃন্ময়ী মাকে চিন্ময়ীতে রূপ দিতে ব্যস্ত এখন সারাদিন রাত।
লন্ডন, আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান থেকে শুরু করে নেদারল্যান্ডস এমনকি পৃথিবীর বহু দেশেই বাঙালির বাস। আর সেই কারণে বিশ্বের একাধিক দেশে দূর্গাপুজো হয়। কোথাও বড় করে পুজো হয়, কোথাও আবার ছোট করে পুজো হয়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিমা যায় কলকাতা বা বঙ্গের কুমোর পাড়া থেকে। দুর্গাপুজোর অনেক আগেই ঠাকুর তৈরি করে পাঠানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। সাত তাড়াতাড়ি জাহাজে চড়ে উমা সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে পাড়ি দিতে চলেছে। জাহাজে যেতে অনেক সময় লাগবে তাই আগে থাকেই কুমোর পাড়ার মৃৎশিল্পীরা মা দুর্গার প্রতিমা গড়ে চলেছেন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে।
শহর কলকাতা থেকে শুরু করে বাংলার বুকে আজ সেই অর্থে সাবেকিয়ানা একপ্রকার হারাতে বসেছে, কালের বিবর্তনে প্রায় প্রতি মন্ডপেই এখন থিমের ছোঁয়া। কিন্তু বিদেশের মাটিতে কোথাও যেন সেই সাবেকিয়ানার ছোঁয়ায় আজও যেন প্রাধান্য পায় সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়েও। অনেক বাঁধা অনেক বিপত্তিকে পিছনে ফেলে আজ শহর কলকাতার কুমোরটুলি থেকে প্রতিবছরের মত এই বছরও উমা সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে পাড়ি দিতে চলেছে।
একদিকে নিজেদের রুজি দুটির টান অন্যদিকে বাপ ঠাকুরদার সেই হাতে-কলমে তৈরী করা মা দুর্গার অবয়ব আর তাকে বাঁচিয়ে রাখতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে এখনকার মৃৎশিল্পীদের। যেভাবে প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচামালের দাম সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মা দুর্গার মূর্তি তৈরী করতেই তাঁরা যেন হিমশিম খাচ্ছেন। একদিকে কাঁচামালের দাম অন্যদিকে শ্রমিকের মজুরী কোন কিছুই যেন থেমে থাকছে না আর সেই সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে দিয়েই এই বছর শহর কলকাতার কুমোরটুলি থেকে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে সুদূর লন্ডনে পাড়ি দিচ্ছেন উমা।
কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীরা আশায় বুক বাঁধছেন এবার যেন বাপের বাড়ি এসে উমা একটু হলেও যেন তাঁদের দিকে ফিরে তাকান। তার কারণ পেটের জ্বালা আর ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে আজ কত কষ্ট করে কুমোরটুলির মৃত শিল্পীরা বেঁচে আছে সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না। আর এত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও তাঁদের মুখে শুধু ছোট্ট হাসিটুকুই ফুটে ওঠে যখন বিদেশ থেকে ডাক আসে তাদের উমাকে সুন্দর করে গড়ে দেওয়ার জন্য। এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা তারপরেই শহর কলকাতার কুমোরটুলি থেকে জাহাজে চড়ে উমা পাড়ি দেবে সাতসমুদ্র তেরো নদীর পাড়ে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।