Jagadhatri Puja 2023: দেবী জগদ্ধাত্রীর সামনে কী হয়েছিল ছোট্ট সারদা মায়ের? জেনে নিন জয়রামবাটীর পুজোর এক অজানা কাহিনী

একবার বড় ছেলে প্রসন্ন-কে শ্যামাসুন্দরী পাঠিয়েছিলেন জামাই শ্রীরামকৃষ্ণকে নেমতন্ন করতে, রামকৃষ্ণ তখন দক্ষিণেশ্বরে থাকতেন।

Sahely Sen | Published : Nov 17, 2023 8:49 AM IST

বাংলার উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের স্ত্রী ছিলেন সারদাময়ী দেবী। তাঁর মা শ্যামাসুন্দরী দেবী বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটীতে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা করেছিলেন। পুজোর শুরুটা তিনি করলেও পরের বছর থেকেই এই পুজোর ভার সম্পূর্ণ গিয়ে পড়েছিল সারদা মায়ের ওপর। 

জগদ্ধাত্রী পুজোর কিছুদিন পরেই সারদা মায়ের জন্ম হয়েছিল। জানা যায়, স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্যামাসুন্দরী দেবী শুরু করেছিলেন জগদ্ধাত্রী আরাধনা। তাই জগদ্ধাত্রী পুজোয় জয়রামবাটীতেই হাজির থাকতেন সারদা মা। খুব ছোটোবেলায় একবার জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় বালিকা সারদা জগদ্ধাত্রী প্রতিমার সামনে গভীর ধ্যানে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায় রামহৃদয় ঘোষাল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি অনেকক্ষণ ধরে তাঁকে দেখছিলেন। অনেকক্ষণ ধরে দেখেও তিনি ঠিক করতে পারছিলেন না যে, দুজনের মধ্যে কে 'চিন্ময়ী' মা, আর কে 'মৃন্ময়ী' মা। তাঁর মনে হয়েছিল মাতৃপ্রতিমার সঙ্গে ছোটো সারদা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন। 

-

জয়রামবাটীতে মা সারদার বাসভবনে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূত্রপাত হয়েছিল ১২৮৪ বঙ্গাব্দে, ইংরেজির ১৮৭৭ সালে। মা সারদার জন্মস্থান জয়রামবাটীতে গ্রামের লোকেরা সবাই মিলে কালীপুজোয় বেশ আনন্দ করতেন। প্রতি বছর শ্যামাসুন্দরী দেবী প্রতিবেশী নব মুখুজ্যের বাড়ির কালীপূজা উপলক্ষে ‘নৈবেদ্যের চাল’ পাঠাতেন। সেই বছর কোনও বিবাদের কারণে নব মুখুজ্যে তাঁর পাঠানো চাল নিতে অস্বীকার করেন। নৈবেদ্যদানে অসমর্থ হয়ে শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত মর্মাহত হন। তিনি বলতে থাকেন, “কালীর জন্যে চাল দিলাম, আমার চাল নিলে না। এ চাল আমার এবার কে খাবে? এ কালীর চাল তো কেউ খেতে পারবে না।” 


-
সেইদিন রাতে শ্যামাসুন্দরী স্বপ্ন দেখলেন, দেবী জগদ্ধাত্রী এসে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, “তুমি কাঁদছ কেন? কালীর চাল আমি খাব, তোমার ভাবনা কী?’’ শ্যামাসুন্দরীর ঘুম ভেঙে গেল। পরদিন তিনি আত্মীয়-স্বজন পাড়া-পড়শী, সকলকে ডেকে জানালেন নিজের স্বপ্নের কথা। সবাই শুনলেন এবং শ্যামাসুন্দরীকে জগদ্ধাত্রী পুজো করার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু, পুজো বললেই তো আর পুজো করা যায় না। শ্যামাসুন্দরীর কাছে পুজো করাটা যথেষ্ট চিন্তার কারণ ছিল। কারণ, তখন তাঁর আর্থিক অবস্থা এমন ছিল না, যে নিজেরাই একটা পুজোর আয়োজন করেন।

-

সারদা মায়ের বাবা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় চাষ-আবাদ করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। তিন বছর আগে তিনি দেহ রেখেছিলেন। শ্রীমা তখন থাকতেন দক্ষিণেশ্বরে, শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে। তাঁর ভাইরা ছিলেন খুবই ছোটো। জমি থেকে যে ধান পাওয়া যেত, তাতে সারা বছরের খরচ চলত না। সারদা মায়ের মা শ্যামাসুন্দরী দেবী প্রতিবেশীর বাড়িতে ধান ভেনে দুঃখ কষ্টে দিন কাটাতেন। এরকম অবস্থায় জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা খুব সহজ কাজ ছিল না তাঁর কাছে। কিন্তু স্বপ্নে দেবী দেখা দিয়েছেন। সেই দেবস্বপ্ন তাঁর মনে খুব গভীর রেখা পাত করেছিল। ঠিক করলেন যে-ভাবেই হোক, যত কষ্টই হোক পুজো করতে হবে। 



সেই বছরটি কোনওরকমে কম খরচে পুজো সম্পন্ন করেই পুজো বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন মা সারদা। কিন্তু, তারপর তাঁর স্বপ্নে দেখা দেন, দেবী জগদ্ধাত্রী, আর তাঁর দুই সখী, জয়া আর বিজয়া। তাঁদের স্বপ্নে চলে যেতে দেখে খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন মা সারদা। তখন তিনি মা জগদ্ধাত্রীকে থেকে যেতে বলেন। এবং তার পর থেকেই তাঁর বাসভবনে প্রত্যেক বছর জগদ্ধাত্রী পুজো পালিত হয়। 

Share this article
click me!