আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা, তারপরেই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে চন্দ্রযান। সারা দেশ সেই মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। বাংলার একটি পরিবারে আবেগ-উত্তেজনা একটু বেশি।
ইসরোর কন্ট্রোল রুমে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত নেই ইসরোর ডিরেক্টর (অপারেশনস) সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়েরও। বুধবার তাঁর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাতে সফলভাবে অবতরণ করতে পারে ইসরোর মহাকাশযান, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। সৌম্যজিৎ যেমন ব্যস্ত, তেমনই বাড়িতে উৎকণ্ঠায় তাঁর বাবা দেবদাস চট্টোপাধ্যায় ও মা নন্দিতা চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের আশা, এই অভিযান সফল হবে। তবে যতক্ষণ না চন্দ্রযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করছে, ততক্ষণ সারা দেশের মতোই চট্টোপাধ্যায় পরিবারেও আবেগ-উত্তেজনা থাকছে। ছেলে এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত, ফলে চট্টোপাধ্যায় দম্পতির যেমন গর্ব, তেমনই বুধবার সন্ধে ৬টা বেজে ৪ মিনিটের জন্য স্নায়ুর চাপও রয়েছে। এই সময়েই যে সফট ল্যান্ডিং হওয়ার কথা।
সৌম্যজিতের বাবা জানালেন, 'আজ আর সৌম্যজিতের সঙ্গে কথা হয়নি। মনে হয় না আজ আর কথা হবে। ও আজ প্রচণ্ড ব্যস্ত। গতকাল শেষবার কথা হয়েছে। ও প্রচণ্ড আশাবাদী, সফট ল্যান্ডিং ভালোভাবে হবে। আমরাও ৯৯.৯ শতাংশ নিশ্চিত, সফট ল্যান্ডিংয়ে সমস্যা হবে না। এবার ইসরো অনেক বেশি সাবধানী। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভালোভাবে তৈরি হয়েছে ইসরো। ফলে আশা করি কোনও সমস্য হবে না। সারা দেশের সঙ্গে আমরাও প্রার্থনা করছি, এই অভিযান যেন সফল হয়। ছেলের জন্য আমাদের গর্ব তো আছেই, তবে শুধু সৌম্যজিতের জন্যই নয়, ইসরোর সবার জন্যই আমরা প্রার্থনা করছি। ওঁরা যে পরিশ্রম করেছেন, সেটা আশা করি সফল হবে। এই অভিযানে যে দায়বদ্ধতা, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানসিকতা, সাফল্যের জেদের পরিচয় দিয়েছেন ইসরোর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকে, তাতে সাফল্য পাওয়াই উচিত।'
গত কয়েকদিন ধরে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ছবি পাঠাচ্ছে চন্দ্রযান-৩। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ মেরুতে নানা জায়গায় গর্ত, পাথর, অসমান জমি রয়েছে। ফলে সফট ল্যান্ডিং অত্যন্ত কঠিন। এ প্রসঙ্গে সৌম্যজিতের বাবা বললেন, 'সফট ল্যান্ডিং খুব কঠিন। এমন একটি জায়গা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে যেখানে পাথর বা গর্ত নেই, সমতল জমি আছে। সেখানেই সফট ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করা হবে।'
বাংলার অনেক বিজ্ঞানীই অতীতে স্মরণীয় নজির রেখেছেন। এখন সৌম্যজিৎও দেশের গর্ব হয়ে উঠেছেন। এখনও পর্যন্ত কোনও দেশের মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি। ইসরো সেটা করে দেখাতে পারলে সৌম্যজিৎও ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন। সেই আশাতেই আছেন এই বাঙালি বিজ্ঞানীর বাবা-মা।
আরও পড়ুন-
Chandrayaan-3: চন্দ্রযানের চাঁদে অবতরণের জন্য ২৩ অগাস্ট দিনটিকেই কেন বেছে নেওয়া হল? যুক্তি দিল ইসরো
চাঁদের আরও কাছে চন্দ্রযান-৩, পজিশন ডিটেকশন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে চাঁদের ছবি