যোশীমঠের মতো যে কোনও সময়ে একই পরিণতি হতে পারে রানিগঞ্জ এলাকার। এমনকী, পাহাড়ি এলাকার মধ্যে মিরিকের কপালেও এমন পরিণিতি আসতে পারে বলেই মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যোশীমঠের মত অবস্থা হতে চলেছে বাংলার রানিগঞ্জের। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে ফাটল তৈরি হয়েছে। আর সেই ফাটল থেকে বেরিয়ে আসছে ধোয়া, গ্যাস। পশ্চিমবঙ্গের খনি এলাকায় বিশেষ করে আসানসোল ও রানিগঞ্জের সীমানা এলাকায় ভূগর্ভস্থ মাটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বলেই বারবার রিপোর্টে এসেছে। এই সব এলাকায় বহু সময়েই ভূপৃষ্টের উপরিভাগ বসে যাচ্ছে, বাড়িতে বাড়িতে ফাটল দেখা দেওয়া থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও ঘর-বাড়ি ভেঙেও পড়েছে।
মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ সফরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথোপকথনের সময় যোশীমঠ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই তিনি বলেন যে, যোশীমঠের মতো যে কোনও সময়ে একই পরিণতি হতে পারে রানিগঞ্জ এলাকার। এমনকী, পাহাড়ি এলাকার মধ্যে মিরিকের কপালেও এমন পরিণিতি আসতে পারে বলেই মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দায় চাপিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে! আর তা নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। পশ্চিম দুর্গাপুরের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুই-এর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা ঠিক বলেছেন। তবে এর জন্য দায়ী থাকবে রাজ্য সরকার। আমাদের ডেকে, আড্ডার সঙ্গে বৈঠকে বসুক। একসঙ্গে যাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আমাদের ওরা ডাকেও না, জানাও না। রাজ্য সরকার কিছুই করে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটা সময় টানা এই এলাকা থেকে গর্ত খুঁড়ে বেআইনিভাবে কয়লা তোলা হত। রানিগঞ্জ বিধানসভার এগারা, হরিশপুর, মহাবীর, বাঁশঢ়া--এই সব এলাকা অত্যন্ত ধসপ্রবণ। কারণ এইসব এলাকা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ইসিএলের কয়লাখনি। ফাটলের জেরে কোনও বাড়ি হেলে পড়েছে! কোনওটি আবার পুরোটাই বসে গেছে! যাদের আর্থিক সামর্থ আছে, তাঁরা অন্যত্র চলে গেছেন। কিন্তু যাঁদের সেই ক্ষমতা নেই, প্রাণ হাতে করে তাদের এখানেই থেকে যেতে হয়েছে! এখনও প্রায় ৪০০ পরিবারের বাস এখানে!
রানিগঞ্জের পরিস্থিতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং কোল ইন্ডিয়া ও ইসিএল-এর দিকেই আঙুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, রানিগঞ্জের ধস প্রবণ এলাকা থেকে মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরাতে ইসিএল-কে জমিও দিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ হয়নি। এমনকী, এর জন্য রাজ্য সরকারকে একটা অর্থও কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়নি বলে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রানিগঞ্জ ও আসানসোল-এর সীমানার কয়লা খনি এলাকায় ভূগর্ভ যেভাবে ফাকা হয়ে গিয়েছে তাতে যে কোনও মুহূর্তে বড় ধরনের ধস নামতে পারে এবং এতে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পার বলেও মন্তব্য করেন।