সমগ্র দেশ তথা বাংলায় শেষ হল লোকসভা নির্বাচন। আর এই ভোটে রাজ্যের একাধিক হাইভোল্টেজ কেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দমদম। এই কেন্দ্রে কে জিতবে, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।
সমগ্র দেশ তথা বাংলায় শেষ হল লোকসভা নির্বাচন। শনিবার, সপ্তম দফার ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটল চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের। আর এই ভোটে রাজ্যের একাধিক হাইভোল্টেজ কেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দমদম। এই কেন্দ্রে কে জিতবে, সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে অনেকের মনে।
শনিবার, সারাদিন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অশান্তির ঘটনা সামনে আসে। কোনও বুথে এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তো কোথাও আবার ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটে। নানা এলাকায় ভোট কেন্দ্রের বাইরে বহিরাগত এবং বাইক বাহিনীর দাপটের কথাও শোনা যায়। এমনকি, এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত খড়দহ শশীভূষন হাইস্কুলের ২১৮ নম্বর বুথের সিপিএম এজেন্টকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে পৌঁছে যান সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী এবং ফের বাম এজেন্টকে বুথের ভিতরে বসান তিনি।
অন্যদিকে, এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ও জানান যে, তাঁর কেন্দ্র থেকে একাধিক অশান্তির খবর পাওয়া গেছে। আর এই সবকিছুর মাঝেই গোটা দমদম লোকসভার অঙ্ক যেন কার্যত ধাঁধার থেকেও জটিল, মোটেই সহজ নয়। অঙ্কের মারপ্যাঁচে আটকে আছে প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ণয়। দমদম লোকসভা কেন্দ্রের লড়াই একেবারে হাড্ডাহাড্ডি।
প্রসঙ্গত, ভোটের আগের রাত থেকেই এই এলাকায় শুরু হয় অশান্তি। দমদমের বিশরপাড়া এবং বেদিয়াপাড়া অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় শুক্রবার রাত থেকেই পোলিং এজেন্টদের ওপর আক্রমণ, বাড়ি ভাঙচুর এবং কর্মীদের মারধরের মতো ঘটনা ঘটে। ভোটের দিন সকালেও অশান্তির খবর আসতে শুরু করে বিভিন্ন এলাকা থেকে। দমদম মাঠকল এলাকাতেও একই ছবি ধরা পড়ে। এইসব ঘটনার মাঝেই চলছে সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপের পালা।
অন্যদিকে, সকাল থেকেই বিভিন্ন বুথে ঘুরতে থাকেন দমদম লোকসভার সিপিএম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। এদিকে আবার তৃণমূল অভিযোগ করে বসে যে, বিরোধীরা নাকি শুক্রবার রাতে খড়দহে তাদের একটি কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেই দাবি মিথ্যে বলে দাবি করে বিরোধীরা। তাদের কথায়, পুরোটাই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং নিজেদের মধ্যে মারপিটের ফলাফল।
ওদিকে আবার রাজারহাট-গোপালপুর অঞ্চলে সিপিএমের একটি বুথ ক্যাম্প ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর এবং বন্দুক নিয়ে তাড়া করার অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। একই অভিযোগ তোলে বিজেপিও। এই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত বলেন, পানিহাটি, খড়দহ, নিউ ব্যারাকপুর, দমদম উত্তর এবং রাজারহাট-গোপালপুরে তাদের পোলিং এজেন্টদের বসতে বাধা দেয় তৃণমূল। এমনকি তাদের ওপর করা হয় শারীরিক নির্যাতনও।
বাম প্রার্থী দাবি করেছেন, সিপিএম কর্মীরা সমস্ত আক্রমণ প্রতিহত করেছেন। একই দাবি করেছেন বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্তও। আর তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় বলেছেন, কোনও সন্ত্রাসই হয়নি।
আর এই লড়াইয়ের মাঝেই উঁকি দিচ্ছে ভোটবাক্সের এক কঠিন অঙ্ক। হিসেব বলছে, এবার বামেদের শক্তি বৃদ্ধি হলে আখেরে লাভ তৃণমূলেরই। কারণ, গতবার একটা বড় অংশের বাম ভোট চলে গেছিল বিজেপিতে। কিন্তু চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে দমদমে, সিপিএম প্রার্থী করেছিল পোড়খাওয়া বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে। যিনি একাধারে প্রাক্তন সাংসদ এবং প্রাক্তন বিধায়কও বটে।
সবথেকে বড় বিষয়, এই প্রথম তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতা জেলার বাইরে কোনও আসন থেকে ভোটে লড়লেন। তাছাড়া স্বচ্ছ ভাবমূর্তিও একটি বাড়তি সুবিধা সুজনবাবুর ক্ষেত্রে। ফলে, বামেদের কমিটেড ভোটারদের ভোট এবং যে ভোট গতবার বিজেপিতে গেছিল, তা যদি এবার সিপিএমে ফিরে আসে তাহলে অনেক হিসেবই ওলটপালট হয়ে যেতে পারে এই কেন্দ্রে। অর্থাৎ, রামের ভোট বামে ফিরে এলেই দমদম লোকসভার হিসেব ধাঁধার থেকেও জটিল।
সেইসঙ্গে, তৃণমূলের কমিটেড ভোটারদের বাইরেও যে দোদুল্যমান অংশটি রয়েছে, তাদের ভোট কোনদিকে যায় তার ওপরেও অনেক কিছু নির্ভর করে রয়েছে। অন্যদিকে, বিরোধীরা দাবি করেছে এবার তৃণমূলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই সমস্যা তৈরি হয়। তাই সব তৃণমূল সমর্থকের ভোট কি আদৌ সৌগত রায় পাবেন? নাকি সেই ভোট সিপিএম এবং বিজেপির মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে? সামনে আসছে একাধিক অঙ্কের হিসেব। তবে তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায়ের দাবি, তিনি জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।
তাই এই কেন্দ্রে লড়াই যেন কার্যত ত্রিমুখী। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই কিছুটা যেন বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন বিরোধীরাই।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।