বাচ্চাদের পাতে পুষ্টিকর খাবার জোগাতে লড়ছে 'আম্মা', ন্যায্য পারিশ্রমিক, মাতৃত্বকালীন ছুটি-সহ একাধিক দাবিতে রাজপথে মিড ডে মিল কর্মীরা

বাচ্চাদের মুখে পুষ্টিকর খাবার তুলে দিতে চায় ‘আম্মা’। নিজেদের সম্মান ও স্বীকৃতির জন্য রাজপথে মিড ডে মিল কর্মীদের ‘অধিকার বুঝে নেওয়ার’ লড়াই। 

দীর্ঘদিন ধরে সরকারি এবং সরকার পোষিত স্কুলের শিশুদের মুখে খাবার তুলে দেন ওঁরা। বাচ্চারা যাতে স্কুলে এসে দুপুরে ঠিক মতো খাবার পায় তার জন্য রান্নার জোগাড় করা থেকে জ্বালানির ব্যবস্থা করা, রান্না করা, বাচ্চাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে খাইয়ে দেওয়া পর্যন্ত সবই ওঁদের দায়িত্ব। ওঁরা মিড ডে মিল কর্মী। যদিও খাতায় কলমে জোটেনি কর্মীর স্বীকৃতি। সরকারি খাতায় এঁরা 'সহায়িকা'। দেশের আইনে 'সহায়িকা'দের জন্য বিশেষ দায়িত্ব নিতে হয় না সরকারকে। মাসিক কিছু টাকা দিলেই মিটে যায় দায়। কিন্তু সেই টাকার অঙ্কও সন্তোষজনক নয়। প্রত্যেকদিন কমপক্ষে রান্না করতে হয় পাঁচ কেজি চাল। সঙ্গে আনুসঙ্গিক কাজ তো রয়েছেই। এসবের পর মাস গেলে হাতে আসে মাত্র হাজার, কোথাও দেড় হাজার আবার কোথাও ১৬০০। তাও এই মাইনেও জোটে কেবল ১০ মাসের। যে দু'মাস স্কুল বন্ধ থাকে সেই দু'মাসের টাকা পান না 'সহায়িকা'রা। অনেক ক্ষেত্রে আবার এই সামান্য টাকাও ভাগ হয়ে যায়। কয়েক জন কাজ করেন বলে ভাগ করে নিতে হয় টাকা। মিড ডে মিল কর্মীরা জানিয়েছেন এই টাকাও তাঁদের নিজেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকে না। আগে সেই ব্যবস্থা থাকলেও করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে তাঁদের মাইনে আসে স্কুলের শিক্ষকের অ্যাকাউন্টেই। ফলে এই ন্যূনতম স্বীকৃতিও হারিয়েছেন তাঁরা। এছাড়া চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চিয়তা, এমকি মাতৃত্বকালীন ছুটিও পাননা এই 'সহায়িকা'রা। অর্থাৎ এঁদের লড়াইয়ের প্রাথমিক শর্ত নূন্যতম সামজিক নিরাপত্তা এবং সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার। গত দেড় বছর ধরে এই লড়াই চালাচ্ছে ওঁরা।

২০২১ সালের শেষের দিক থেকে শুরু হয়েছিল অ্যাসোসিয়েশন অব মিড-ডে মিল অ্যাসিস্ট্যান্টস, সংক্ষেপে 'আম্মা'র লড়াইয়ের প্রস্তুতি। ২০২২ সালের গোড়ার দিক থেকেই শুরু হয় কাজ। হাজারো বাধা, বিপত্তি, সামাজিক এবং আর্থিক অনিশ্চিয়তা সত্ত্বেও 'আম্মা'র শ্রমজীবী মেয়েদের প্রথম দাবি বাচ্চাদের খাবারের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি। নিজেদের আগে বাচ্চাদের স্বার্থকেই বড় করে দেখছেন তাঁরা। শিশুদের সারাবছর পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করার দাবিই স্থান পেয়েছে সবার প্রথমে। এই প্রসঙ্গে 'আম্মা'র উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা কমিটির এক সম্পাদক রুকসানা বেগম জানিয়েছেন, 'আমরা তো মিড ডে মিল রান্না করেছি, আমরা দেখেছি, যেদিন মাংস বা ডিম দেওয়া হয় সেদিন সবচেয়ে বেশি বাচ্চা স্কুলে আসে। তাই আমরা চাই বাচ্চাদের এই খাবার যেন সারা বছর দেওয়া হয়।' নদিয়া জেলার শান্তিপুরের অপর এক মিড ডে মিল কর্মী তথা 'আম্মা'র সদস্যা পুষ্পা বিশ্বাস জানিয়েছেন,'সবাই তো গ্রামেরই বাচ্চা। ওদের পেটে খাবারটা না গেলে ওরা পড়াশোনা করবে কী করে? তাই আমরা চাই প্রত্যেক দিনের খাবারের সঙ্গে বাচ্চাদের একটা করে ডিম দিক, একটু সবজি দিক। কিন্তু ৫ টাকা ৪২ পয়সায় কি সেটা সম্ভব?' এছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি, দশ মাসের জায়গায় বারো মাসের ন্যায্য পারিশ্রমিক, সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি, কাজের নিশ্চয়তা-সহ একধিক দাবি নিয়ে এবার পথে নামেন মিড ডে মিল কর্মীরা।

Latest Videos

মঙ্গলবার দুপুরে রাজপথে প্রতিবাদে নামল শ্রমজীবি মেয়েরা। সমাজে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার ও ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে শহরের রাস্তা কাঁপাল 'আম্মা'। মিড ডে মিল কর্মীদের অধিকারের দাবিতে কলকাতায় মহামিছিলে পা মেলালেন ভাঙড়, নাকাশিপাড়া, দেগঙ্গা, শান্তিপুরের দু-তিন হাজার মহিলা। ৩০ মে দুপুর ১২টায় রামলীলা ময়দান থেকে বেরোয় বিশাল প্রতিবাদ মিছিল। ধর্মতলার রানি রাসমণি রোডে এসে শেষ হয় মিছিল। সেখানেই চলে দীর্ঘ সভা। গ্রাম মফস্বল থেকে উঠে আসা মেয়েরা মঞ্চে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন নিজেদের অধিকারের কথা। লড়াই যখন বেঁচে থাকার, সেখানে আলাদা করে সংগ্রামী বক্তৃতার প্রয়োজন হয় না। মঙ্গলবার একথা আবার প্রমাণ করে দিলেন 'আম্মা'র মেয়েরা। তাঁদের বক্তৃতায় উঠে এল রোজকার জীবনের সংগ্রামের কথা। সরকারের কাছে নিজেদের অধিকার চাইছেন তাঁরা। এই মর্মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ডেপুটেশনও জমা দেন মিড ডে মিল কর্মীরা। নবান্ন থেকে কোনও সারা না মিললে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও বলেছেন তাঁরা। উল্লেখ্য তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বহু কর্মী। তবু লড়াই এতটুকু দমেনি।

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari Live: এগরায় জনসভা শুভেন্দুর, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
'কুমিল্লা ছেড়ে চলে যা' কুমিল্লায় বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা! | Bangladesh News |
'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
Viral Video! আবাসের টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাইছেন TMC কর্মী | Murshidabad Latest News
‘Bangladesh-কে মারতে হবে না চোখ দেখালেই যথেষ্ঠ’ বাংলাদেশকে ধুয়ে দিলেন Dilip Ghosh | Bangladesh News