জমি বিতর্কের মাঝেই অমর্ত্য সেনের আইনজীবীর দাবি অধ্যাপক সেনের পিতা আশুতোষ সেনের নামে ১.৩৮ ডেসিমেল জমি রয়েছে। তাই সম্পূর্ণ জমি রেকর্ড সংশোধন'এর জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আবেদন করেছিলেন অমর্ত্য সেন।
অমর্ত্য সেনের বসত বাড়ির জমি 'রেকর্ড সংশোধনে'র শুনানিতে আইনী আপত্তি জানালো বিশ্বভারতী। সেই আপত্তি জনিত কারণে পরবর্তী শুনানি হবে। তবে সেই দিন এখনো ধার্য হয়নি। সোমবার বিএলআরও অফিসে অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী ও বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস জোর সওয়াল করেন।
জমি বিতর্কের মাঝেই অমর্ত্য সেনের আইনজীবীর দাবি অধ্যাপক সেনের পিতা আশুতোষ সেনের নামে ১.৩৮ ডেসিমেল জমি রয়েছে। তাই সম্পূর্ণ জমি রেকর্ড সংশোধন'এর জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আবেদন করেছিলেন অমর্ত্য সেন। সেই মোতাবেক সোমবার ২০ ফেব্রুয়ারি শুনানির জন্য বিএলআরও অফিসে দুপক্ষকে ডেকে ছিল। সোমবার বোলপুরের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সঞ্জয় দাসের তত্ত্বাবধানে অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী ও বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস, কর্মসচিব অশোক মাহাত জমি সংক্রান্ত শুনানিতে আসেন।
বিএলআরও দপ্তরে বসে দীর্ঘক্ষণ দুপক্ষের আইনজীবীর মধ্যে জোর বাকবিতণ্ডা চলে। জানা গিয়েছে, এদিন ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের সামনে প্রয়াত আশুতোষ সেনের একটি উইল দেখান অমর্ত্য সেনের আইনজীবী। যুক্তি হল, উত্তরাধিকার সূত্রে আশুতোষ সেনের জমি তাঁর ছেলে অমর্ত্য সেনের নামেই রেকর্ড সংশোধন হওয়া উচিত। পালটা জমি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি জমা দেন বিশ্বভারতীর আইনজীবী। নথি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অমর্ত্য সেনের জমি নিয়ে রাজনীতি করছেন, অভিযোগ বিশ্বভারতীর আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাসের৷
সূত্রের খবর, বিশ্বভারতীর কাছ থেকে অমর্ত্যর বাবা আশুতোষ সেনের জমি লিজ নেওয়ার নথিপত্রও প্রকাশ্যে এসেছে। ১৯৪৩ সালে ওই চুক্তিপত্র হয়েছিল। সেই নথি অনুযায়ী, ১.২৫ একর জমিই লিজ নেওয়া হয়েছিল বলেও সূত্রের খবর। সোমবার ওই নথিপত্র বিএলআরও-র কাছে জমা দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করে, অমর্ত্যর বাবা আশুতোষকে ৪৩ সালে কখনই ১.৩৮ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়নি। ১.২৫ একর জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল। তার ভিত্তিতে বিশ্বভারতী ১৩ ডেসিম্যাল জমি দখলের অভিযোগ করেছে অমর্ত্যের বিরুদ্ধে। সে জমি ফেরতের দাবি তুলেছে বিশ্বভারতী। ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, ১৯৪৩ সালে বিশ্বভারতী এবং আশুতোষ সেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত লিজ়ের নিবন্ধিত দলিল ও ২০০৬ সালে কর্মসমিতিতে পাশ হওয়া প্রস্তাব থেকে পরিস্কার আশুতোষ বা অমর্ত্যকে ১.৩৮ একর জমি তো দূরের কথা, বিশ্বভারতীর কোনও জমিরই মালিকানা দেওয়া হয়নি। তাই বিশ্বভারতী দাবি অমর্ত্য সেনের প্রাপ্য ১.২৫ ডেসিমেল জমি।
যদিও এদিন শুনানি শেষে অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, "প্রয়াত আশুতোষ সেনের একটি উইল আমরা জমা দিয়েছি উত্তরাধিকার সূত্র বোঝাতে। জমি দখলের কোন প্রশ্নই ওঠে না। আজ বিশ্বভারতীর আইনজীবী নানান কাগজপত্র ও ভুল যুক্তি এনে জমি দখল প্রমাণ করতে চাইলেন। শুনানি হবে। দিন এখনও ঠিক হয়নি।" গোরাচাঁদ বাবু আরও দাবি করেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সময় চেয়ে নেওয়া হয়েছে। যদিও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস আরও বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী এসে রাজনীতি করছেন৷ বিশ্বভারতীর জমি এভাবে দখল করা যায় না। ১.২৫ ডেসিমেল জমি অমর্ত্য সেনের৷ বাকিটা দখল করে রাখা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তিনি এই জমির রেকর্ড করতে পারেন না। এ নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি।’'