২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে রক্তে স্নান করেছিল বাংলা। অশান্তি ও প্রাণহানিতে উত্তপ্ত বাংলার ভোটে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সাধারণ ভোটারদের মনে। তবে শুধু অশান্তিই নয়, পঞ্চায়েত ভোটের রাজনৈতিক অঙ্ক শক্ত করে দিয়েছিল ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের পায়ের তলার জমি।
ভরা বর্ষাতে পঞ্চায়েত ভোট। ভোটগ্রহণের দিন ৮ই জুলাই ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ২০১৮ সালের মতই কয়েক দফা নয়, এক দফাতেই ভোট হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা জানান ‘‘দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এ দ্বিস্তর এবং বাকি রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটগ্রহণ ৮ জুলাই, শনিবার করা হবে। মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে ৯ জুন থেকেই।’’ এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্যে নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে গিয়েছে। ফলে রাত ১০টা থেকে সকাল ৮ পর্যন্ত মিটিং মিছিল করা যাবে না।
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে রক্তে স্নান করেছিল বাংলা। অশান্তি ও প্রাণহানিতে উত্তপ্ত বাংলার ভোটে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল সাধারণ ভোটারদের মনে। তবে শুধু অশান্তিই নয়, পঞ্চায়েত ভোটের রাজনৈতিক অঙ্ক শক্ত করে দিয়েছিল ২০১৯ সালের বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের পায়ের তলার জমি। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতে প্রায় ৩৪ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নেয় তৃণমূল। সেখানে কোনও বিরোধীই প্রার্থী দিতে পারেনি বলে অভিযোগ ওঠে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই ক্ষোভেরই প্রতিফলন ঘটেছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে।
২০০৯ সালে বাম আমলে যেখানে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের আসন সংখ্যা ৩৪ ছিল, তা ২০১৯ সালে নিজেদের শাসনকালেই আসন সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২-এ। সেই সুযোগে মাথা তুলে দাঁড়ায় বিজেপি। দুই থেকে বেড়ে ১৮ টি আসনে জেতে বিজেপি। মোট ৬২১টি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে যায় ৩৫১টি আসন, বিজেপি, বাম এবং কংগ্রেস পায় যথাক্রমে ৯টি, ২টি এবং ৪টি জেলা পরিষদ। প্রসঙ্গত, মোট ৬১২৩টি পঞ্চায়েত সমিতি সিটের মধ্যে তৃণমূল পায় ২৫৪৩টি এবং বিজেপি ১৬২টি। বাম এবং কংগ্রেসের ঝুলিতে যায় ৭৯ এবং ৬৭টি পঞ্চায়েত সমিতি।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, লোকসভা ভোটে এমনিতেই প্রেক্ষাপট আলাদা হয়। তাছাড়া ২০১৮ সালে যে নির্বাচনে খুব সহজেই তৃণমূলের জেতার কথা ছিল, সেখানেও লাগামছাড়া হিংসার জেরে মানুষের মনে বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছিল।
তবে নিজেদের ঘাড় থেকে সমস্ত দায় ঝেড়ে সেই সময় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন বাংলাদেশ, অসম ও ঝাড়খণ্ড থেকে তাদের সমর্থকদের নিয়ে এসে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। দক্ষিণ দিনাজপুর, বাগদা, দেগঙ্গা প্রভৃতি জায়গায় বহিরাগতদের ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে বিজেপি। কাজে লাগানো হয়েছে বিএসএফ-কে। লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন জওয়ানরা। তবে সাধারণ মানুষ সে কথায় খুব বেশি প্রভাবিত হননি, তার প্রমাণ ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটবাক্স। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠেছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত! একছত্রভাবে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের অশান্তি নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।