সংক্ষিপ্ত
বিশ্বব্যপী করোনাভাইরাস মহামারীর জেরে এখন অনেককেই বাড়ি থেকে কাজ করতে হচ্ছে
বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন-কেও ১৬৬৫ সালে এমনই এক গুরুতর মহামারীর মুখোমুখি হতে হয়েছিল
প্রায় একবছর কলেজ ছেড়ে তাঁকেও বাড়িতে বসে থাকতে হয়েছিল
আর সেই সময়েই আবিষ্কার হয়েছিল ক্যালকুলাস, গতিসূত্র, মহাকর্ষ সূত্র
করোনাভাইরাস সংক্রমণ-কে বিশ্বব্যপী মহামারী বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভয়ানক ছোঁয়াচে এই রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে পৃথিবীর অনেক দেশেই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন-কেও তাঁর সময়ে এক গুরুতর মহামারীর মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তাঁকেও প্রায় একবছর কলেজ ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকতে হয়েছিল। আর সেই সময়েই আবিষ্কার করেছিলেন মহাকর্ষ সূত্র।
আরও পড়ুন - বাতিল সেক্স পার্টি থেকে চুমুহীন মিলন - করোনাভাইরাস থাবায় কাতর যৌনজীবন
গোটা বিশ্বে ৫০০০-এরও বেশি মানুষ ইতিমধ্যেই কোভিড-১৯ রোগে প্রাণ হারিয়েছেন। ভয়ঙ্কর গতিতে ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস ঘটিত রোগ। গুগল, অ্যাপেল, অ্যামাজন-এর মতো বিশ্বের প্রথম সারির সংস্থাগুলি যেমন তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছে, তেমনই বিভিন্ন দেশেই স্কুল-কলেজেও ইন্টারনেটে ক্লাস নেওয়া বা পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্রিটিশ গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিউটন-কেও এই অবস্থার সামনা করতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন - করোনা নিয়ে উদ্বেগে ইসলামিক স্টেট-ও, জঙ্গিদের জন্য জারি বিশেষ স্বাস্থ্যবিধি
১৬৪২ সালে জন্ম হয়েছিল স্যার আইজ্যাক নিউটন-এর। আর ১৬৬৫ সালে ব্রিটেনে ভয়াবহ মহামারীরূপে দেখা দিয়েছিল প্লেগ, যাকে 'গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন' বলা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতেই প্রথম সপ্তাহেই ৭,১৬৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে মৃত্যুর হার অনেকটা কমলেও রাজা ষষ্ঠ জর্জ সেই সময়ে প্রায় এখনকার মতোই লকডাউন-এর নির্দেশ দিয়েছিলেন। এখন যেমন সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা দূরত্বের মাধ্যমে করণোভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা চলছে, তখনও সেই রকমই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন - ভাইরাসের ভয়ের মধ্যেই বিকোচ্ছে কেজি প্রতি ২০০০ টাকায়, খাবেন নাকি 'করোনা' মাছ
নিউটন-র তখন মাত্র ২৩ বছর বয়স। কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনা করতেন। প্লেগ ছড়াতে শুরু করার পরই অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতোই ট্রিনিটি কলেজ থেকেও সেখানকার ছাত্রদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। স্যার নিউটন-কেও উলস্থর্প ম্যানর-এ নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছিল। গ্রেট প্লেগ-এর প্রভাব পুরোপুরি কাটতে সময় লেগেছিল প্রায় একবছর। ১৬৬৬ সালের গ্রেট ফায়ার অব লন্ডন বা লন্ডন অগ্নিকাণ্ডে প্রচুর পরিমানে ইঁদুর মারা যাওয়াতেই এই মহামারী প্রতিরোধ করা গিয়েছিল বলে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন - করোনা আতঙ্কের জেড়, ট্রেনের এসি কোচে কম্বল দেওয়া বন্ধ করল রেল
এই একটা বছর পুরোপুরি কলেজের পড়াশোনা থেকে দূরে সরে থাকতে হয়েছিল নিউটনকে। আর এই সময়েই মহাকর্ষ, গতিসূত্র সহ বিজ্ঞানের একের পর এক যুগান্তকারী অবিষ্কারে ডুবে গিয়েছিল তাঁর মস্তিষ্ক। বাড়িতে বসে বসে প্রথম যে নিবন্ধটি প্রকাশ করেছিলেন নিউটন, তা গণিতে ক্যালকুলাস-এর প্রাথমিক ধারণা তৈরি করে দিয়েছিল। আলোকবিদ্যা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব প্রকাশ করেছিলেন। তবে ওই সময়ে তাঁর আবিষ্কারের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত অবশ্যই মাধ্যাকর্ষণের তত্ত্ব এবং গতিসূত্রের তত্ত্ব।
আরও পড়ুন - মাত্র ২ টাকায় ফেস মাস্ক, করোনাতঙ্কের বাজারে এই দোকান যেন দৈত্যকূলে প্রহ্লাদ
পরবর্তীকালে নিউটনের ঘনিষ্ঠ সহকারী জন কন্ডুয়েট জানিয়েছিলেন, বাড়ির বাগানে বসে চিন্তা করতে করতেই তাঁর মাথায় প্রথম মহাকর্ষের ধারণা আসে। যে আপেল পড়ার গল্প শোনা যায়, তা সত্যিই ঘটেছিল কিনা জানা নেই, তবে বাগানে বসেই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন মহাকর্ষের শক্তি পৃথিবী থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বেই সীমাবদ্ধ নেই, চাঁদ বা অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তু পর্যন্ত এই শক্তি রয়েছে।
আরও পড়ুন - হ্যান্ড স্যানিটাইজার নয়, সাবানই করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র, কেন জানেন
একবছর বাড়িতে থেকে এইসব বিবিধ বিষয়ে যুগান্তকারী সব তত্ত্ব আবিষ্কার করে ১৬৬৭ সালের এপ্রিল মাসে কেমব্রিজে ফিরে এসেছিলেন নিউটন। আর অক্টোবর মাসেই ট্রিনিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কাজেই, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে যদি অফিস যাওয়া বন্ধ করে বাড়ি থেকে কাজ করতে হয়, তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কে বলতে পারে পরের নিউটন আপনিই হবেন না?