সংক্ষিপ্ত

মালা পড়িয়ে চিকুকে সাজিয়ে দেন তিনি। বেদিতে ছড়িয়ে দেন ফুলের পাপড়ি, রজনীগন্ধা। মাটির থালায়, বাটিতে গুছিয়ে দেন চিকুর জন্য আনা খাবার।

ছেলের জন্মদিন। ১০ বছরে পা দিল সে! হাজার কাজের মধ্যেও ব্যস্ত ‘মা’ সময় কাটালেন তার সঙ্গে। ছেলে সারমেয় পোষ্য ‘চিকু’। ‘মা’ মিমি চক্রবর্তী! গত বছর ‘চিকু’ তাঁকে ছেড়ে গিয়েছে। বেঁচে থাকলে বৃহস্পতিবার তার বয়স হত ১০। ছেলের জন্মদিন মা ভোলেন কী করে? তাই ছেলের জন্য ফুল, মালা, প্রিয় খাবার। আর ছেলের বন্ধুদের পছন্দের জিনিস নিয়ে নিখিল বঙ্গ কল্যাণ সমিতির আশ্রমে। নীল বাতি লাগানো গাড়িটা ঢুকতেই চিকুর বন্ধুরা হাজির! তারা যেন গন্ধ পেয়েছে, চিকুর ‘মা’ আসছেন। মিমির শুধু গাড়ি থেকে নামার অপেক্ষা। সঙ্গে সঙ্গে ল্যাজ নাড়তে নাড়তে বাকি সারমেয়রা ঘিরে ফেলেছে তাঁকে। সাংসদ-তারকার মুখ ঝলমল করছে প্রশ্রয়ের হাসিতে।

কালো টি শার্ট আর ক্যাজুয়াল জিন্স এ দিন মিমির পোশাক। সমিতিতে প্রায়ই যাতায়াত তাঁর। এ দিন চিকুর সমাধি বেদি ফুল দিয়ে সাজানো। মিমিও নিয়ে গিয়েছিলেন রজনীগন্ধার স্টিক, গোড়ার মালা, ফুলের পাপড়ি। বেদির ফলকে ছেলের ছবি খোদাই করা। তাতেই মালা পড়িয়ে চিকুকে সাজিয়ে দেন তিনি। বেদিতে ছড়িয়ে দেন ফুলের পাপড়ি, রজনীগন্ধা। মাটির থালায়, বাটিতে গুছিয়ে দেন চিকুর জন্য আনা খাবার। বেদিতে তখন মোমবাতির নরম আলো, ধুপের গন্ধ। ছেলের মা নিজের হাতে ছেলেকে খাবার সাজিয়ে দিলেন। খোলা চুলের আড়াল থেকেই দেখা গিয়েছে তাঁর অল্প ভেজা চোখ।

এর পর ছেলের বন্ধুদের নিজের হাতে খাওয়ানোর পালা। চিকুর জন্মদিনের মেনু কী ছিল? কেক, আইসক্রিম সামনে ধরতেই সবাই উল্লসিত। চেটেপুটে নিমেষে সাফ! মিমির মুখে তৃপ্তির হাসি। খাওয়া শেষ হতেই পুরো পোষ্য এবং পথপশুদের আশ্রম ঘুরলেন তিনি। আশ্রমে থাকা সারমেয়রা তাঁর গায়ে লেপ্টে ঘুরছে। এ ভাবেই বেশ কিছু ক্ষণ কাটিয়ে বাড়ির পথে মিমি। নীল বাতি দেওয়া গাড়িটা দেখতে দেখতে দূরে। ছেলের জন্মদিন উদযাপনের ঝলক মিমি এ দিন ভাগ করে নিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে। সেখানেই তাঁর অনুরোধ, ‘বিনীত অনুরোধ, অনুগ্রহ করে আপনার পোষ্য বড় হয়ে গেলে বা অসুস্থ হলে ওদের পরিত্যাগ করবেন না। ওদের প্রতি একটু সদয়, মানবিক হোন।’

 

View post on Instagram
 

 

মিমির চিকু ক্যান্সারের কাছে হেরে গিয়েছে। পোষ্য অসুস্থ। জানার পরেই কলকাতায় নানা চিকিৎসকের কাছে ছোটাছুটি করেছেন সাংসদ-অভিনেত্রী। কোনও সুরাহা হয়নি। তার পরেই চিকুর চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে চেন্নাইয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ২৪ এপ্রিল চিকুর চলে যাওয়ার দিন। সন্তান-সম পোষ্যকে হারিয়ে মানসিক দিক থেকে ভেঙে পড়েছিলেন নায়িকা। সেই সময় সারা ক্ষণ তাঁর মনে হত, সব আছে। সবাই আছে। নেই ‘ছেলে’ চিকু! সপ্তাহ ঘুরে নতুন দিন এসেছে। সাংসদ-তারকার তখনও মানতে কষ্ট, তাঁর পোষ্য আর ফিরবে না। তিনি কাজ থেকে ফিরলে আর গায়ের উপরে ঝাঁপাবে না। ঘরজুড়ে থাকবেও না। কথাগুলো মনে পড়লেই চোখ ভিজে এসেছে তাঁর। বেশি করে আশ্রয় খুঁজছেন চিকুর পুরনো ছবি, ভিডিয়োয়।

ঘুরেফিরে পোস্ট করেছেন পোষ্যর ছবি, ভিডিয়ো। কখনও ভিডিয়োয় চিকুর সঙ্গে বাড়ির ছাদে তোলা খেলাধুলোর ঝলক। লিখেছিলেন, ‘এক বার ফিরে আয়’! কখনও চিকুকে জড়িয়ে ধরে তোলা ছবি। ভাগ করে নেওয়া ছবি বলেছে, মাতৃস্নেহেই পোষ্য সারমেয়কে আদরে ভরিয়ে দিয়েছেন অভিনেত্রী। মিমির কথায়, জলে ঝাপসা তাঁর চোখ। চিকুর কথা মনে পড়লেই তাঁর দম যেন আটকে আসে। দু’হাত চিকুকে জড়ানোর জন্য আকুল। বুকটাও যেন খালি খালি। চিকুই যে নেই, কোত্থাও নেই!

আরও পড়ুন

সৌমিত্রর অভাব পূরণীয়? ভাবীকাল মনে রাখবে তাঁকে? জানালেন কমলেশ্বর, ঋতব্রত, দীপ্সিতা, শ্রীকান্ত

মাটির থালায় ভাত পাশে পঞ্চব্যঞ্জন! ভাইরাল ভিডিয়ো বলছে, সোহিনীর আইবুড়ো ভাত?

আমাদের বিচ্ছেদ নিয়ে অকারণ গুঞ্জন, আমরা মানুষ না?: মিথিলা।। উটকো গুজব নিয়ে কথা বলার সময় নেই: সৃজিত