সংক্ষিপ্ত
আশার খবর, এই মুহূর্তে ঐন্দ্রিলা এক প্রকার সাপোর্ট ছাড়াই আছেন। এমনকি ভেন্টিলেশন থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন।
গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতোই ঘটনা! এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে যেন এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। ফেসবুকে সে খবর সবিস্তার জানিয়ে সব্যসাচী চৌধুরীর দাবি, ‘গেছে বললেই ও যাবে না কি? যেতে দিলে তো যাবে।’ সেই বিশ্বাস থেকেই ফের অনুরাগীদের উদ্দেশে বার্তা তাঁর, ‘ঐন্দ্রিলা আছে। ঐন্দ্রিলা থাকবে। রাখে বড়মা তো মারে কোন...’! সেই সঙ্গে আশার খবর, এই মুহূর্তে ঐন্দ্রিলা এক প্রকার সাপোর্ট ছাড়াই আছেন। এমনকি ভেন্টিলেশন থেকেও বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। পরিবারের তাই বক্তব্য, আগে ক্লিনিক্যালি সুস্থ হোন। তার পর না হয় নিউরোর কথা ভাবা যাবে।
সোমবারে এই আশা, এই মনের জোর হারিয়ে ফেলেছিলেন সব্যসাচী। তাঁর পোস্টে মিরাকেলের প্রতি আস্থা রাখার ডাক। ঈশ্বরের কাছে মন থেকে প্রার্থনা করার অনুরোধ। বুধবার সকাল থেকে আচমকাই অবনতি ঐন্দ্রিলার। সব্যসাচীর কথা অনুযায়ী, ‘পরশু দিন সকালে ঐন্দ্রিলার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। চোখের সামনে দেখলাম ওর হার্ট রেট ড্রপ করে চল্লিশের নীচে নেমে তলিয়ে গেল। মনিটরে ব্ল্যাঙ্ক লাইন। কান্নার আওয়াজ। তার মাঝে ডাক্তাররা দৌড়াদৌড়ি করছেন। কয়েক মিনিটের মধ্যে হৃদস্পন্দন ফের ফিরে এল বিভিন্ন সাপোর্টে, হার্টবিট ১২০। তার পরই কে যেন একটা অদৃশ্য বালি ঘড়ি উল্টো করে ঝুলিয়ে দিল। ঝুরো বালির মতন সময় ঝরে পড়ছে। সঙ্গে স্থির ভাবে একটা একটা করে হার্টবিট কমছে, কমছে রক্তচাপ, কমছে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসও। ডাক্তাররা জবাব দিয়েছেন। হাসপাতালের নীচে পুলিশ পোস্টিং। বিভিন্ন বিশিষ্ট মানুষ এসে সমবেদনা জানাচ্ছেন। কিছু উত্তেজিত ইউটিউবার এবং মিডিয়ার লোকজন নীচে ঘোরাঘুরি করছেন। শেষ চেষ্টার জন্য অন্য হাসপাতালের এক নামকরা নিউরো সার্জনকে ডেকে আনা হল। তিনি খানিক নাড়াচাড়া করে জানালেন যে, “ও চলে গেছে অনেক আগেই। শুধু শুধু এইভাবে আটকে রাখছেন কেন? এমনিতেও কালকের মধ্যে সব থেমেই যাবে। লেট্ হার গো পিসফুলি।”
সবাই দমে গেলেও দমেননি সব্যসাচী। রাত বেড়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে ছোট্ট, অসাড় হাতটা ধরে বসে থেকেছেন। অভিনেত্রীর চোখদুটো অনেক আগেই স্থির। একটা করে হৃদস্পন্দন কমছে। অসহায়তা বাড়ছে অভিনেতার। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব আগেই দেখা করে গিয়েছেন। মাঝে মধ্যেই ফোন আসছে, ‘আজ রাতেই হবে? নাকি সকালে আসব?’ ইতিমধ্যে ফেসবুকের কল্যাণে কারা যেন মাঝ রাতে ছড়িয়ে দিয়েছে, ঐন্দ্রিলা আর নেই। বেনো জলের মতন হু হু করে ফোন অভিনেতার ফোনে। বন্ধু সৌরভ দাস শুটিংয়ে দেশের বাইরে। হোঁদল রেস্তরাঁর অন্যতম কর্ণধার এবং সব্যসাচীর বন্ধু দিব্য একা সামলাতে পারছে না। অগত্যা পরিস্থিতি সামলাতে সব্যসাচী পোস্ট করতে বাধ্য হন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের অবস্থার অবনতি। সব্যসাচী জানিয়েছেন, ‘রক্তচাপ কমতে শুরু করল, ওর মা-বাবাকে ডাকলাম, বাকিদের খবর দিলাম। আর বাধা দিইনি কাউকে। সারা দিন ধরে কাছের মানুষেরা এসেছেন, ওকে ছুঁয়েছেন, ডুকরে কেঁদেছেন। কত স্মৃতিচারণ, কত গল্প। বিকেলের পর দেখলাম হাত-পা-মুখ ফুলছে ঐন্দ্রিলার। শরীর ঠান্ডা। হৃদস্পন্দন কমতে কমতে ৪৬, রক্তচাপ ৬০/৩০। আগের দিনের ডাক্তারের কথাটা কেবলই আমার মাথায় ঘুরছিল। ওর শরীরটাকে এভাবে আটকে রাখার জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে। থাকতে না পেরে ওর মাকে বললামও যে, এত কষ্ট আর দেখতে পারছি না। কী দরকার ছিল এত কিছু করার? শান্তিতে যেত। মুখে বলছি বটে, কিন্তু ছাড়তে কি আর পারি? মায়ার টান বড় কঠিন।’
ঠিক রাত আটটায় যখন তিনি বিমর্ষমুখে নীচে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ হাত নড়ে ওঠে ঐন্দ্রিলার। খবর পেয়ে দৌড়ে গিয়ে দেখেন, হৃদস্পন্দন এক লাফে ৯১, রক্তচাপ বেড়ে ১৩০/৮০, শরীর ক্রমশ গরম হচ্ছে। সব্যসাচীকে চোখে আঙুল দিয়ে যেন দেখিয়ে দিল কেউ, ‘কে বলে মিরাকেল হয় না? কে বলে ও চলে গেছে? এক প্রকার অনন্ত শূন্য থেকে এক ধাক্কায় ছিটকে ফিরে এল মেয়েটা। গেছে বললেই ও যাবে না কি? যেতে দিলে তো যাবে!’
আরও পড়ুন
ঐন্দ্রিলার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছেন না অরিজিৎ সিং, মিথ্যা খবরে তোলপাড় নেট দুনিয়া
‘যাদের পথ চলা বাকি তাদের রেখো, আমি প্রস্তুত’, নিজের জীবনের বিনিময়ে ঐন্দ্রিলার প্রাণভিক্ষায় শ্রীলেখা