২৪ রকমের অত্যাশ্চর্য বাঙালি পদ, যা যুগ যুগ ধরে বাঙালির রসনাকে তৃপ্ত করে চলেছে
কথায় আছে বাঙালি খাদ্যরসিক। বাঙালি রান্নার আলাদাই মাহাত্য। নিরামিষ হোক কিংবা আমিষ সবকিছুতেই আছে অভিনবত্বের ছোঁয়া। সাদা-মাটা কুমড়ো দিয়ে কুমড়োর ছক্কা হোক কিংবা মুরিবিহীন মুড়ি ঘন্ট অথবা কষা মাংস সবেতেই সিদ্ধহস্ত বাঙালিরা। চলুন আজ কিছু জনপ্রিয় বাঙালি পদের বিষয় জেনে নেওয়া যাক। আপনি যদি ভোজনরসিক হন তবে এটি অবশ্যই মিস করবেন না।
- FB
- TW
- Linkdin
শুক্তো বা শুক্তি এমন এক ধরনের পদ যা আহারের শুরুতে পরিবেশন করা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো শুক্তো কিন্তু অতি প্রাচীন একটি বাঙালি পদ, পদ্মপুরাণে বেহুলার বিয়েতে খাবারের মধ্যে শুক্তোর উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়াও মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব সাহিত্যেবেই পদের নাম বহুবার পাওয়া যায়। বর্তমানে শুক্তো বলতে আমরা বুঝি উচ্ছে, করলা, নিম, সিম, বেগুন প্রভৃতি তিক্ত বা তিতো ব্যঞ্জন দিয়ে তৈরি একটি পদ, কিন্তু প্রাচীনকালে তা ছিল না। সকালে বেগুঞ্জ কাঁচকলা, মোচা এই সব্জিগুলিকে গুঁড়ো বা বাটা মশলার সঙ্গে ভালো করে মেখে ঘন পিঠালি মিশিয়ে রান্না করা হত। পড়ে হিং,জিরে ও মেথি দিয়ে ঘিয়ে সাতলিয়ে নামিয়ে ফেলতে হতো। বর্তমানেও কিন্তু বাঙালি যে কোনো অনুষ্ঠানেই খাবারের পাতে সসম্মানে বিরাজ করছে এই পদটি।
জিভে জল আনা একটি লোভনীয় আমিষ পদ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খাসির মাংস দিয়ে এই কষা মাংস তৈরি করা হয়। ছুটির দিনে গরম ভাতের সঙ্গে কষা মাংস হলে আর কিছুই লাগে না, আবার লুচির সঙ্গে গরম গরম কষা মাংসের জোরি কিন্তু দারুন হিট। বাঙালি রান্নার অন্যতম হিট আইটেম এটি।
চিংড়ি মাছকে এত সুন্দর একটি মেকওভার বোধহয় শুধু বাঙালিরাই দিতে পারেন।চিংড়ি দিয়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি বাঙালি রান্না, গলদা চিংড়ি হোক বা বাগদা চিংড়িকে নারকেলের দুধ ও অন্যান্য মশলা সহযোগে তৈরি এত সুন্দর একটি পদ যা একবার খেলে কেউ ভুলবেন না।
ভীষণই কমন একটি বেঙ্গলি ডিশ, বাঙাল বাড়ি হোক বা ঘটি এনার কদর কিন্তু সব বাড়িতেই রয়েছে। পোস্ত সহযোগে সাদামাটা আলুকেও যে এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা যায় তা বাঙালিরাই প্রমাণ করেছেন বারবার।
লুচির প্রেমে পাগল বাঙালিরা। রবিবার দিন সকাল হোক কিংবা স্পেশাল কোনো অনুষ্ঠানে লুচি ইজ মাস্ট। কখনো আলুর দমের সঙ্গে তো কখনো ছোলার ডালের সঙ্গে তো কখনো কষা মাংস সবার সঙ্গেই দারুন কেমিস্ট্রি লুচির। লুচিবিহীন বাঙালি অনুষ্ঠান কল্পনাই করা যায়না।
অত্যন্ত কমন ও জনপ্রিয় একটি পদ যাই ছাড়া একটি দিনও ভাবতে পারেনা বাঙালিরা। রোজকার খাবারের মেনু তেই হোক কিংবা অনুষ্ঠান বাড়ির পাতে কিংবা ঘরে বাজার বিহীন অবস্থার মুশকিল আসন সবেতেই ডাল। বাঙালিরা হরেক রকমের ডাল খান, মুসুর হোক বা মুগ, ছোলা হোক বা অড়হর বা বিউলি সবরকম ডাল বাঙালি বাড়িতে সসম্মানে বিরাজ করছে।
বাঙালি বাড়িতে নিরামিষ পদগুলির মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এই ধোঁকার ডালনা, নামে ধোকা থাকলেও রসনা তৃপ্তিতে আপনাকে একেবারেই ধোকা দেবেনা এই পদটি। ডালবেটে তাঁকে বরফির মতন আকৃতি দিয়ে যে এত সুন্দর একটি পদ বানানো যায় তা বাঙালিরা ছাড়া বোধয় আর কারুর মাথায় আসেনি।
কেউ কখোনো ভেবেছেন যে এইবাবেও চিংড়ি মাছ বানানো যায়?, আস্ত একটি ডাবের মধ্যে রয়েছে পুর সহ চিংড়ি মাছ। দারুন অভিনব একটি বাঙালি ডিশ।
এমন অদ্ভুত নাম বোধহয় শুধু বাঙালি রান্নাতেই হয়।নাম মুড়ি ঘন্ট হলেও মুড়ির কোনো হদিশ পাবেন না এই রান্নায়। মাছের মাথা দিয়ে গোবিন্দভোগ চাল সহযোগে একটি দারুন প্রসিদ্ধ বাঙালি পদ এটি।
সর্ব ঘটের কাঠালি কলার মতন এই বেগুন ভাজা খুবই কমন একটি পদ,বিশেষত দলের সঙ্গে বেগুন ভাজার জুটি যুগ যুগ জিও।এই জুটিকে আজ অবধি কেউ টেক্কা দিতে পারেনি। তবে বোঁটা সুদ্ধ লম্বা লম্বাব গোটা বেগুন ভাজা কিন্তু বাঙালি দের মধ্যে দারুন জনপ্রিয়।
মোচার ঘন্ট একটি বহুল প্রচলিত আইটেম,কেউ কেউ মোচার সঙ্গে ছোলা সহযোগে আবার কেউ ডালের বড়ার দিয়েও বানিয়ে থাকেন এই পদটি।
রাজকীয় একটি বাংলা পদ, মাছের রাজা ইলিশ-এর সঙ্গে সরষের জুটি একেবারে রাজজোটক যাকে বলে, সরষে দিয়ে ইলিশ ভাপা বা সরষে ইলিশ যুগ যুগ ধরে বাঙালির আহারের পাতকে আলোকিত করে রেখেছে। যে কোনো অনুষ্ঠানেই এর জুড়ি মেলা ভার।
পুর সহযোগে ভেটকি মাছকে কলা পাতায় সুতো দিয়ে মুড়ে এইভাবে যে পরিবেশন করা যায়, তা বাঙালিদের কাছ থেকে শিক্ষণীয়। যে কোনো অনুষ্ঠান বিয়ে বাড়ি বা জন্মদিন বা অন্নপ্রশ্ন সবেতেই হিট ভেটকির পাতুরি।
ইলিশ আর সরষের জুটি একেবারে রাজজোটক, ভাপা ইলিশের কদর প্রতি বাঙালি বাড়িতেই সমান। গরম ভাত সঙ্গে ভাপা ইলিশ হলে আর কিছুই দরকার পড়েনা।
বাঙালির বাড়িতে যত ডাল হয় তার মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ডাল এটি। ভাতের সঙ্গে হোক বা লুচি-পরোটা সবার সঙ্গেই হিট ছোলার ডাল। বিশেষ করে নারকেল দেওয়া ছোলার ডাল খুবই প্রসিদ্ধ বাঙালি বাড়িতে।
কথায় আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। মাছের ঝোল ছাড়া বাঙালির খাবার হজমই হতে চায়না, ট্যাংরা হোক বা কাতলা কিংবা রুই,আলু সহযোগে মাছের পাতলা ঝোল বাঙালির গরম ভাতের জন্যে চাইই চাই।
বাঙালি রান্নার মধ্যে এটি নতুন সংযোজন।বিরিয়ানি কে না ভালোবাসেন তবে বাঙালি বিরিয়ানির একটি নিজস্বতা রয়েছে, বিরিয়ানীতে যতই মাটন বা চিকেন থাকুক, বড় বড় সিদ্ধ আলু ও সিদ্ধ ডিম ছাড়া বাঙালি বিরিয়ানি একদমই বেমানান।
ফুচকা খেতে ওস্তাদ বাঙালিরা, শপিং করতে বেরিয়ে হোক কিংবা পাড়া বেড়ানো কিংবা বিয়ে বাড়ি ফুচকা না হলে ঠিক জমে না।
সন্ধ্যেবেলা স্ন্যাক্স এর জায়গায় বাঙালি বাড়িতে কিন্তু ঝালমুড়ির কদর বহুদিনের, মুড়ি দিয়ে এই চটপটা আইটেমটি একমাত্র বাঙালি বাড়িতেই পাবেন।বাঙালির সান্ধ্যকালীন আড্ডা ঝালমুড়ি ছাড়া বেমানান
মিষ্টি দই এর সঙ্গে বাঙালি নামটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বাঙালির সঙ্গে মিষ্টি দই এর মিষ্টি সম্পর্কটি বহুদিনের। বাড়িতেই হোক কিংবা অনুযাঠান বাড়ি, আহারের শেষে ডেজার্ট হিসেবে শেষ পাতে মিষ্টি দই ছাড়া বাঙালির আহার অসম্পূর্ণ থেকে যায়।