পাহলগামে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) জনগণকে দুই মাসের রসদ মজুত করতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি কতটা গুরুতর?
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা: ভারত এবং পাকিস্তানের সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে। পাহলগামে জঙ্গি হামলার পর কাশ্মীর নিয়ে আবারও যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২২ এপ্রিল পাহলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুতে সারা দেশ ক্ষুব্ধ। এনআইএ তদন্তে এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মিলেছে। হামলার পর জঙ্গিরা এখনও কাশ্মীরে ঘোরাফেরা করছে, কঠোর তল্লাশি সত্ত্বেও তারা ভারতীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়েনি। নিয়ন্ত্রণরেখায় পাকিস্তান গত ৮ রাত ধরে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গুলিবর্ষণ করছে, যার জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনা।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জরুরি প্রস্তুতি
শুক্রবার পাক অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ার উল হক স্থানীয় আইনসভায় জানান, নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন ১৩টি এলাকায় জনগণকে দুই মাসের খাদ্য মজুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এক বিলিয়ন রুপি (প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন ডলার) জরুরি তহবিল গঠন করা হয়েছে যাতে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা যায়। সড়ক মেরামতের জন্য সরকারি ও বেসরকারি যন্ত্রপাতি মোতায়েন করা হয়েছে।
ভারতবিরোধী জিহাদের স্লোগান, মুজাফ্ফরাবাদে বিক্ষোভ
রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী একটি কাশ্মীরি রাজনৈতিক জোটের ব্যানারে বিক্ষোভ করে 'ভারত মুর্দাবাদ' এবং 'জিহাদ করো' স্লোগান দেয়। বিক্ষোভের আয়োজক ফারুক রহমানি বলেন, এই মিছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সমর্থনে। ভারত যদি কোন 'ভুল' করে, তাহলে তার জবাব দেওয়া হবে।
ভারতের সতর্কবার্তা, পাকিস্তানের জবাব
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি ভারতীয় সেনাকে অবাধ ক্ষমতা দিয়েছেন। সেনাবাহিনী এখন নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে এই হামলার জবাব দেবে। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের প্রমাণ রয়েছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, আক্রমণ হলে জবাব দেওয়া হবে।
১০০০ মাদ্রাসা ১০ দিনের জন্য বন্ধ
উত্তেজনার কারণে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ১০০০-এর বেশি ধর্মীয় স্কুল ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পহেলগাঁও আবহে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশই বাড়ছে। দুই দেশই সীমান্তে তৎপর। ভারতীয় সেনাদের মধ্যে জারি করা হয়েছে হাই-অ্যালার্ট। এই অবস্থায় পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে ভারত আক্রমণের হুঁশিয়ারি দিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের টার্গেট উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্য। যদিও এই প্রথম নয়, এর আগে একাধিকবার বাংলাদেশ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির ওপর কু-নজর দিয়েছে।
এদিকে, পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো তাদের দেশের সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন যে, পাকিস্তানের একটি অতীত আছে। আর সেই অতীতের কথা সকলেই জানে। এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন ও অর্থায়নের কথা স্বীকার করার পর এই মন্তব্য পকিস্তানের জঙ্গি যোগ নিয়ে মন্তব্য করেছেন ভুট্টো।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে মদত দেওয়ার অভিযোগ বহু পুরনো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য করে এসেছে। কিন্তু পাকিস্তান সেই অর্থ সন্ত্রাসবাদীদের লালন-পালনেই ব্যয় করেছে বলে অভিযোগ। এঅ বিষয়েই এবার আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে ভারত। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছে ভারত। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্য পাচ্ছে পাকিস্তান।
গত বছরের জুলাইয়ে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তিন বছরে পাকিস্তানকে এই আর্থিক সাহায্য করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পাকিস্তান সরকার এই অর্থ দিয়ে সন্ত্রাসবাদীদের সাহায্য করছে বলে অভিযোগ ভারতের। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে ভারত। এছাড়া ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সেও (Financial Action Task Force) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে ভারত।
এই সংস্থা সারা বিশ্বে অর্থপাচার এবং সন্ত্রাসবাদীদের আর্থিক সাহায্যের বিষয়ে নজরদারি চালায়। ২০১৮ সালের জুনে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। এরপর নিজেদের মুখরক্ষা করতে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থসাহায্য করবে না বলে জানায় পাকিস্তান। বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, জরিমানা, কারাবন্দি করার মতো পদক্ষেপও করে পাকিস্তান। এরপর ২০২২ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকা থেকে বাদ দেয় ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স। এবার ধূসর তালিকায় ফের পাকিস্তানের নাম যোগ করার দাবি জানাচ্ছে ভারত।


