রহস্য ঘনাচ্ছে: কারেলিয়ার জঙ্গলে রাশিয়ার Su-30 কেন ভেঙে পড়ল? প্রশিক্ষণের সময় কি হঠাৎ প্রযুক্তিগত ত্রুটি হয়েছিল, নাকি অন্য কোনো কারণ? দুই পাইলট কেন ইজেক্ট করতে পারলেন না? এই দুর্ঘটনার তদন্তে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর প্রশ্ন উঠছে।
নয়াদিল্লি। রাশিয়ার কারেলিয়া অঞ্চল থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি চাঞ্চল্যকর খবর এসেছে। একটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে থাকা রাশিয়ান Su-30SM যুদ্ধবিমান হঠাৎ আকাশে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং গভীর জঙ্গলে ভেঙে পড়ে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা দুই পাইলটেরই মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় মাটিতে কেউ উপস্থিত না থাকায় কোনো সাধারণ নাগরিক হতাহত হননি। কিন্তু এই দুর্ঘটনাটি অনেক বড় প্রশ্ন তুলেছে—বিমানটি হঠাৎ কেন ভেঙে পড়ল? এর কারণ কি প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল, নাকি উড়ানের সময় কোনো সিস্টেম কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল?
জঙ্গলে কেন পাঠানো হয়েছিল Su-30 যুদ্ধবিমান?
কারেলিয়ার গভর্নর আর্তুর পারফেনচিকভ টেলিগ্রামে নিশ্চিত করেছেন যে দুর্ঘটনার পরপরই প্রিয়নেজস্কি জেলার জঙ্গল এলাকায় জরুরি পরিষেবা পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, বিমানটি জঙ্গলে ভেঙে পড়েছে এবং আশেপাশের জনবসতির কোনো ক্ষতি হয়নি। গভর্নর আরও বলেন যে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ধ্বংসাবশেষ থেকে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
কারেলিয়ার আকাশে आखिर কী ঘটেছিল? Su-30 হঠাৎ কীভাবে ভেঙে পড়ল?
এই দুর্ঘটনাটি ঘটে যখন বিমানটি একটি সাধারণ প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে ছিল। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে সন্ধ্যা প্রায় ৭টায় (মস্কোর সময়) বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং সরাসরি জঙ্গলে আছড়ে পড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফ্লাইটটি কোনো অস্ত্র বা গোলাবারুদ ছাড়াই ছিল, তাই দুর্ঘটনার পর কোনো বিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
এই প্রশ্নগুলো উঠছে
- ফ্লাইটের সময় কি প্রযুক্তিগত ত্রুটি হয়েছিল?
- ইঞ্জিন কি হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল?
- নাকি এটি মানবিক ভুল, অর্থাৎ পাইলটের ভুল হতে পারে?
- এই সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য একটি বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছে।
পাইলটরা কেন ইজেক্ট করতে পারলেন না-সিস্টেম কি ফেল করেছিল?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এত উন্নত Su-30 বিমান থেকে দুই পাইলট কেন নিজেদের বের করতে পারলেন না। Su-30SM হলো দুটি আসন, দুটি ইঞ্জিনযুক্ত একটি আধুনিক মাল্টি-রোল ফাইটার জেট। এতে ইজেকশন সিট সিস্টেম রয়েছে, যা সাধারণত পাইলটের জীবন বাঁচায়। কিন্তু এই ঘটনায় দুই পাইলটই ককপিটে আটকে পড়েন এবং দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়। এটি একটি বড় ইঙ্গিত যে হয় ইজেকশন সিস্টেম ব্যর্থ হয়েছে অথবা বিমানটি এত দ্রুত নীচে পড়তে শুরু করেছিল যে পাইলটরা প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় পাননি।
রাশিয়ায় যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা কেন বাড়ছে?
- গত কয়েক মাসে রাশিয়ায় বেশ কয়েকটি সামরিক বিমান দুর্ঘটনার খবর সামনে এসেছে।
- জুলাই মাসে নিজনি নভগোরোড অঞ্চলে একটি Su-34 বিমান ক্র্যাশ হয়েছিল।
- ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার অনেক বিমানের ওপর চাপ বেড়েছে এবং রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
- ইউক্রেনের দাবি অনুযায়ী, রাশিয়া এখন পর্যন্ত ৪২৮টি বিমান হারিয়েছে, যদিও এই তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা হয়নি।
- সামরিক বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে এর মধ্যে প্রায় ১৫টি Su-30SM বিমান থাকতে পারে।
Su-30SM-এর ওপর অতিরিক্ত চাপের কারণে কি ত্রুটি বাড়ছে?
- Su-30SM রাশিয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং শক্তিশালী যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে একটি।
- এটি আকাশ থেকে আকাশে এবং আকাশ থেকে মাটিতে আক্রমণের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং এটি রাশিয়ার ফ্রন্টলাইন ফোর্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুদ্ধবিমানগুলোর ওপর কি প্রযুক্তিগত চাপ বাড়ছে?
- কারেলিয়ায় এই Su-30SM ক্র্যাশ শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি রাশিয়ার সামরিক বিমান চলাচল ব্যবস্থার ওপর অনেক গুরুতর প্রশ্ন রেখে গেছে।
- পাইলটদের মৃত্যু, ইজেকশন সিস্টেম কাজ না করা এবং সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি—এইসব ইঙ্গিত দেয় যে সমস্যাটি আরও গভীর হতে পারে।
- কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এই দুর্ঘটনার আসল কারণ রহস্যই থেকে যাবে।


