সংক্ষিপ্ত

যে কোনও বিষয়ে অতি সহজেই অনেক কিছু লিখে ফেলতে পারতেন স্বর্ণেন্দু। ফিল্ড সাংবাদিকতায় যে জিনিসটা সবার আগে প্রয়োজন খবরকে তাড়া করার ক্ষমতা এবং নেটওয়ার্ক-দুটোই ছিল তাঁর কয়রাত্ত। কিন্তু, ক্যানসারকে কিছুতেই জয় করতে পারলেন না স্বর্ণেন্দু। ৮ বছরেরর এক তীব্র লড়াই-এর যবনিকা ঘটল ২৩ অগাস্ট, ২০২২। 
 

সাংবাদিকতার উত্তেজনাকে চেটেপুটে নিতে ভালোবাসতেন স্বর্ণেন্দু। যে কোনও পরিস্থিতিতেই তিনি ছুট লাগাতে পারতেন খবরের পিছু পিছু। খবরের খবরিয়া ছিলেন তিনি। কাজ করতেন বাংলায়। কিন্তু, দিল্লির বুকে কোনও ঘটনা হয়েছে, বা উত্তরের কোনও রাজ্যে কিছু হয়েছে, মুহূর্তের মধ্যে সেখান থেকে ফার্স্টহ্যান্ড রিপোর্ট সংগ্রহ করে খসখস করে লিখে ফেলতে পারতেন একটা পূর্ণ রিপোর্ট। এবারের ১৫ অগাস্ট ছিল স্বর্ণেন্দুর কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। বিছানায় শয্যাশায়ী স্বর্ণেন্দু সেদিন অন্য বছরগুলোর মতো ২ বছরের মেয়েকে নিয়ে দেশবরেণ্য মহাত্মাদের ছবিতে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করাতে পারেননি। সেই বেদনার কথাই একজন বাবা হিসাবে ফেসবুকে ব্যক্ত করেছিলেন স্বর্ণেন্দু। 

কীভাবে স্বাধীনতা দিবসের সকালে মেয়ে কুহুকে স্কুটারের সামনে বসিয়ে তিনি পাড়ার স্কুল থেকে ক্লাবে, সমবায়-সহ আরও কত জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন সেই কথা লেখেন স্বর্ণেন্দু। আর এই ফেসবুক পোস্টের শেষে স্বর্ণেন্দুর এক বার্তা ছিল মেয়ের প্রতি, 'জানিনা সোনা আমার জীবনে আর তোমাকে কোনও দিন পতাকা উত্তোলন করাতে নিয়ে যেতে পারবো কি না। যদি না পারি আমার কথা মনে রেখে আজকের দিনটা কাটিয়ে দিও।'

দুরারোগ্য ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইটা যে আরও তীব্র হয়েছে তা বুঝতে পেরেছিল স্বর্ণেন্দু। কিন্তু সব সময় একটা আশা নিয়ে বারবার সে এবং তাঁর নিকট জনেরা এক অসম লড়াইয়ে সামিল হয়েছিল। এই লড়াইয়ে হয়তো অনেকটাই নিশ্চিত ছিল জয় -পরাজয়ের হিসেবটা। তাও একটা আশা যদি কিছু মিরাক্যল হয়! যদি কিছু সময় না হয় রহিবে সয়ে- এমন কিছু ঘটে যায়। ফেসবুক পোস্টে জানা গিয়েছে ২২ অগাস্ট থেকে স্বর্ণেন্দুর শারীরিক অবস্থা চরমে ওঠে। সন্ধ্যার সময়ই প্রায় আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল যখন চিকিৎসকরা স্বর্ণেন্দুর জীবন আলোর সময়টাও মেপে দিয়েছিলেন। ২৩ অগাস্ট সকালে সব শেষ। এক প্রতিভার উন্মেষের আবেগের স্মৃতি সকলের মনে গেঁথে দিয়ে স্বর্ণেন্দু পাড়ি জমালেন অমৃতলোকে। মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই শেষ হয়ে গেল এক তরুণ প্রতিভাবান সাংবাদিকের জীবন।  

পড়াশোনা পাঠ চুকিয়ে ২০০৯ সালে আর প্লাস চ্যানেল দিয়ে সাংবাদিককতায় ইন্টার্নশিপ জীবন শুরু হয়েছিল স্বর্ণেন্দুর। ২০২১ সালে তিনি আর প্লাস থেকে যোগ দিয়েছিলেন টিভি ৯ বাংলা নিউজ চ্যানেলে। রাজনৈতিক খবরে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন স্বর্ণেন্দু। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে সদ্য বাংলা খবরের ময়দানে প্রবেশ করা তাঁর নিউজ চ্যানেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। কিন্তু ২০২১-এর শেষ থেকেই শরীরে ফের থাবা বসায় ক্যানসার। হুহু করে কমতে থাকে ওজন। 

২০১৪ সালেই ধরা পড়েছিল শরীরে কর্কট রোগ বাসের হালহকিকত। সেই সময় তরুণ বিক্রমে লড়াই করেছিল স্বর্ণেন্দু এবং তাঁর পরিবার ও নিকট জনেরা। জানা গিয়েছিল এই ক্যানসারের নাম  মেট্যাস্টিক ম্যালিগন্যান্ট মেলনোমা। হার মানেনি স্বর্ণেন্দু। ক্যানসার জয় করে ফিরে এসেছিলেন জীবনের আনন্দে। কিন্তু, ২০২১-এর শেষ দিকটা সব হিসেব-ই উল্টে পাল্টে দেয়। মাঝে মুম্বই কলকাতা করেছেন চিকিৎসার স্বার্থে। মাঝে-মাঝেই বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে যেন নিশ্চূপ হয়ে যেতেন স্বর্ণেন্দু। পরে এর কারণ দর্শাতে গিয়ে বলতেন ওই একটু অসুস্থ ছিলাম। কিন্তু, মুখ ফুটে কোনও দিনই বলেননি যে তিনি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ছেন। ২০২২-এর শুরুতে টাটা মেমোরিয়াল ক্যানসারে বেডে শুয়ে থাকা স্বর্ণেন্দু ফোনটা ধরে জানান তাঁর সঙ্কটের কথা। কীভাবে তিনি লড়াই করছেন সে কথাও জানিয়েছিলেন। জীবনের আলোয় ফিরে আসার এক তীব্র জেদ দেখিয়েছিলেন স্বর্ণেন্দু।  

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও স্বর্ণেন্দুর মৃত্যুতে টুইট করেছেন। লিখেছেন তরুণ প্রতিভাবান সাংবাদিক স্বর্ণেন্দু দাসের প্রয়াণ তাঁকে কতটা শোকাহত করেছে। 

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও টুইট বার্তায় স্বর্ণেন্দুর প্রয়াণের কথা শেয়ার করে শোকজ্ঞাপন করেছেন। 

 

বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও টুইটার পোস্টে স্বর্ণেন্দুর পরিরাবের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেন। 

 

২৩ অগাস্ট সকালে স্বর্ণেন্দুর প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভরে যায় পোস্টে। যাঁরা স্বর্ণেন্দুকে কাছ থেকে দেখেছে, তাঁক প্রত্যক্ষ করেছে- তাঁরা প্রত্যেকেই ব্যক্ত করেন তাঁদের প্রিয় স্বর্ণেন্দু-কে নিয়ে অনুভূতির কথা। এক তরুণ সহকর্মীর এই মর্মান্তিক প্রয়াণ স্বাভাবিকভাবেই সাংবাদিক কূলকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে। 
আরও পড়ুন- 
অনুব্রতর সম্পত্তির খোঁজে এবার বোলপুরের জমি রেজিস্ট্রি অফিসে সিবিআই, চালকলের মালিকানা নিয়েও চলল জিজ্ঞাসাবাদ 
"আমরা কাউকে খুশি করার জন্য রাজনীতি করছি না", দলের অস্বস্তির পরোয়া না করে দিলীপ রইলেন দিলীপেই 
'ঝান্ডার সঙ্গে ডান্ডা নিয়ে যাব', বর্ধমানে তৃণমূল কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষীর