ভারতে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানকার নবাবি বা রাজকীয় খাবারের টানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষ। আপনি হয়তো নিজের শহরেও ওই একই খাবার পাবেন তবে তার স্বাদ একই রকম হবেনা। একে "কালিনরি ট্যুরিজম" বা "গ্যাস্ট্রো ট্যুরিজম" বলে।
"কালিনরি ট্যুরিজম" বা "গ্যাস্ট্রো ট্যুরিজম" - শব্দ দুটির সাথে মানুষ তেমন পরিচিত না থাকলেও, এর জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার অনেকদিন ধরেই মানুষের জীবনে জায়গা করেছে। খাবার নেশায় দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো। আপনি হয়তো পাহাড়, সমুদ্র বা স্থাপত্য দেখতেই ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন তবে এমন অনেক ভোজনরসিকই আছেন আছেন, যারা দেশ অথবা বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় সেখানকার জনপ্রিয় খাবার চেখে দেখার জন্য।
আমাদের ভারতেও এমন অনেক জায়গা আছে যেখানকার নবাবি বা রাজকীয় খাবার দাবারের টানে দূর দুরন্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষ। আপনি হয়তো নিজের শহরেও ওই একই খাবার পাবেন তবে তার স্বাদ একই রকম হবেনা। আমাদের বাংলাতেও এমন অনেক খাবার আছে যা চেখে দেখতে ছুটে আসেন খাদ্যপ্রেমীরা। ফুচকা, ঝালমুড়ি, ফিস ফ্রাই, বিরিয়ানি। এর সাথে পাবেন মিষ্টি দই, রসগোল্লা, ল্যাংচা, পান্তুয়া, কালাকাঁদ, আরো কত কি। তবে ভারতের আরো অনেক জায়গা আছে যা কলকাতার এই খাবারকে টক্কর দিতে পারে। আসুন দেখে নিই কী কী রয়েছে এশিয়ানেটের তালিকায়।
১। লখনউ
'টুন্ডে কবাব' বা 'গলৌটি কবাব' নাম শুনেছেন কখনো? কলকাতায় মিলবে ঠিকই, তবে নবাবদের দেশে আসল স্বাদ কতটাই বা পাবেন এখানে? মুখে দিলে গলে যাবে, অথচ মুখে লেগে থাকার মতো এই স্বাদ পেতে একবার লখনোউ যাওয়াই যায়। তবে একবার গিয়ে উপস্থিত হলে শুধু কাবাব নয়, চেখে দেখুন মোগলাই খাওয়ারের নবাবি স্বাদ। লখনউয়ের নিজস্ব স্টাইলে বানানো বিরিয়ানি, রাত থেকে ভোর অবধি রান্না হওয়া নিহারি, সুগন্ধী কোর্মা, মাখন মালাই, শিরমল এবং শাহি টুকরা - এগুলো না খেলে নবাবের দেশ যেন ঘোরাই বৃথা।
২। অমৃতসর
অমৃতসর বললেই আগে যে খাবার কথাটি মাথায় আসে সেটি হল অমৃতসরি কুলচা। পনির বা নানারকম সবজির পুরে ঠাসা তন্দুরি রুটি মুখে পড়লেই মন ভালো হয়ে যায়। এর সাথে যদি থাকে বাটার চিকেন, তাহলে তো কথাই নেই। ঘুরতে গেলে পাবেন পাঞ্জাবি মক্কি দি রোটি আর সর্ষো দা শাগ, না খেয়ে দেখলে পাঞ্জাব আর গেলেন কই! আরও আছে তালিকায়, সন্ধ্যেয় খিদে পেলে বান টিক্কি মিস করবেন না। পাউরুটির মধ্যে আলুর প্যাটি আর নানানরকম চাটনির স্বাদ। এছাড়া লস্যি, কুলফি, জিলিপিও চেখে দেখুন একবার। তবে খাওয়ার লিস্টের তালিকার শেষে রাখবেন পাঞ্জাবের স্বর্ণ মন্দিরের লঙ্গর আর সুজির হালুয়া বা 'কড়া প্রসাদ', না খেলে ঠাকুরও পাপ দেবে।
৩। ইন্দোর
মধ্যপ্রদেশে যে শহরের খাবার সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত সেটি হল ইন্দোর। বিভিন্ন ধরনের চাট, পোহা-জলেবি ( চিঁড়ের পোলাও আর জিলিপি একসাথে বানানো সুস্বাদু খাবার), ভুট্টে কা কিস ( পুরানো ভুট্টার সাথে মসলা এবং দুধের চমৎকার মিল এই khabar), খোপরা প্যাটিস ( আলুর প্যাটিপ ভিতর নানা ধরনের মসলা ও নারকেল দিয়ে তৈরি খাবার চাটনি দিয়ে পরিবেশন করা হয়) এবং নানা ধরনের কচুরি (কড়াইশুঁটির পুর দেওয়া বাফলা কচুরি)। এছাড়াও জিলিপি, রাবড়ি, মালপোয়া, কুলফি - এগুলো না খেলে তো বেড়ানোই বৃথা, দ্বিতীয়বার যেতেই হবে আবার।
৪। হায়দ্রাবাদ
কলকাতার মানুষ নিজের বিরিয়ানি নিয়ে যতই মাতামাতি করুক, হায়দ্রাবাদের বিরিয়ানিও যথেষ্ট টেক্কা দেয় কলকাতার বিরিয়ানিকে। মশলাদার রাজকীয় স্বাদের বিরিয়ানি, সঙ্গে মিরচি কা সালান - এ স্বাদ ভুলবার নয়। রমজান মাসে সেখানে ঘুরতে গেলে চেখে দেখুন হায়দ্রাবাদের হালিম। তালিকায় রাখুন গরম পাথরের উপর রান্না করা পাত্থার কা গোস্ত। বাঙ্গালীদের সিঙ্গারার থেকে কিছুটা ভিন্ন কিমা সামোসা, কলকাতায় এর স্বাদ পাবেন না। হায়দ্রাবাদের রাস্তায় পুরনো দোকানগুলো থেকে খেতে হবে ইরানি চা, সাথে ওসমানিয়া বিস্কুট। আবার ভাববেন না যে শেষ পাতা মিষ্টি পাবেন না, কুরবানি কা মিঠা এবং ডাবল কা মিঠা দিয়ে শেষ করতে পারেন ভোজ।
৫। দিল্লি
খাবারের কথা উঠবে আর দিল্লি থাকবে না সে তালিকায়, হতেই পারে না। দিল্লির চাঁদনী চকের পরাঠেওয়ালে গলি ঢু না মারলে কী আর খেলেন দিল্লি গিয়ে! মঞ্জু কা টিল্লার মোমো, দরিয়াগঞ্জের বাটার চিকেন, পুরনো দিল্লির কবাব-নিহারি, দৌলত কি চাট, আরও কত কি! আসলে মুঘল বাদশাহদের দিল্লিতেই খাঁটি মোগলাই খাবারের স্বাদ পাবেন। সকালের ছোলে বাটুরে দিয়ে ব্রেকফাস্ট আর রাতে শেষ পাতে রাবড়ি-ফালুদা, শোহ্ন হালুয়া, কুলফি, জিলিপি - সবেতেই পাবেন দিল্লির ছোঁয়া। এক একটা খাবারের গলি যেন এক একটা গল্প বলে যায় এখানে। তাই দিল্লি ঘুরতে গেলে আপনার তালিকায়ভুক্তি করা খাবারগুলো মিস করবেন না।
সারাংশ আমাদের ভারতেও এমন অনেক জায়গা আছে যেখানকার নবাবি বা রাজকীয় খাবার দাবারের টানে দূর দুরন্ত থেকে ছুটে আসেন মানুষ। আপনি হয়তো নিজের শহরেও ওই একই খাবার পাবেন তবে তার স্বাদ একই রকম হবেনা। একে "কালিনরি ট্যুরিজম" বা "গ্যাস্ট্রো ট্যুরিজম" বলে।


