Lychee consumption: লিচু যতই উপকারী ফল হোক না কেন, তা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। সচেতনভাবে বাছাই করে লিচু কিনলে এবং সঠিকভাবে খেলে এই সুস্বাদু ফল থেকে উপকার পাওয়া সম্ভব, বিপদের আশঙ্কা থাকে না।
Effects of lychee on health: গ্রীষ্মকালের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুস্বাদু ফল লিচু (Lychee)। রসাল ও মিষ্টি স্বাদের জন্য ছোট থেকে বড় সবাই এই ফলটি খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু এই ফলের যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, তেমনই কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে। যেগুলি বিশেষভাবে সতর্ক না থাকলে মারাত্মক স্বাস্থ্যর ক্ষতি করতে পারে। ২০১১ সালে বিহারে লিচু থেকে এনসেফেলাইটিসের সংক্রমণ ঘটে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। সেবার চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, লিচুর টক্সিন থেকে মৃত্যু হয়েছিল তাঁদের। আসলে লিচুর টক্সিন মস্তিষ্কে চলে গেলে জ্বর, খিঁচুনি, পেটের সংক্রমণ হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি শিশু ও বয়স্কদের জন্য। তবে লিচু খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর। এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ও ম্যাঙ্গানিজ—যা হাড়ের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফ্ল্যাভেনল উপাদান শরীরের প্রদাহ কমায়, এবং অলিগোনল নামক অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট নাইট্রিক অক্সাইড তৈরিতে সাহায্য করে। যার ফলে হৃদ্যন্ত্রে রক্ত চলাচল উন্নত হয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও ক্যালোরি খুব কম, ফাইবার বেশি থাকে। এক কাপ লিচুতে ক্যালোরির পরিমাণ ১২৫। ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা কম।
স্বাস্থ্যের উপর লিচুর প্রভাব
ভারতে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত একটু গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অধিক পরিমাণে লিচু খাওয়া, বিশেষ করে খালি পেটে লিচু খেলে হাইপোগ্লাইসিন এ ও মিথিলিন সাইক্লোপ্রোপাইল-গ্লাইসিন, এই দুই রাসায়নিকের প্রভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা আচমকা কমে যায়। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেবে। এর থেকে জ্বর, ঘন ঘন বমি, খিঁচুনি, মাথা যন্ত্রণা শুরু হতে পারে। মস্তিষ্কে প্রদাহ, পেট ব্যথা, বমি, ডায়রিয়া ও খাদ্যনালিতে সংক্রমণ দেখা দেবে। এমনকী, সমস্যা মারাত্মক হলে মৃত্যু অবধি ঘটতে পারে। যা বিহারের গণ-মৃত্যুর প্রমাণ দেয়। লিচুর বিষাক্ত উপাদানগুলি লিভারে জমে গিয়ে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। যাঁরা আগে থেকেই লিভারের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। লিচুতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে অনেকটা। অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে পারে। ফলে ডায়াবেটিকদের সতর্কতা জরুরি। কিছু মানুষের মধ্যে লিচু অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। ফলে ত্বকে চুলকানি, র্যাশ, শ্বাসকষ্ট বা ফোলা দেখা দিতে পারে।
লিচু কেনার সময় সতর্কতা জরুরি
কাঁচা বা আধপাকা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন এ নামক টক্সিনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই দেখে ভালো পাকা লিচু কিনুন। এছাড়াও পচা লিচুতে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্ম নিতে পারে, যা খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। লিচুর বীজ ও শাঁসে মিথিলিন সাইক্লোপ্রোপাইল-গ্লাইসিন (MCPG) থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে গেলে এনসেফেলাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
লিচু খাওয়ার সঠিক নিয়ম কী?
- খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ কমে যেতে পারে। যা শিশুদের জন্য বিশেষ বিপজ্জনক। তাই খালি পেটে খাবেন না।
- দুপুরে বা বিকেলে খাবারের পর লিচু খাওয়া নিরাপদ। রাতে লিচু খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, পাশাপাশি রক্তে শর্করার তারতম্য দেখা দিতে পারে।
- দিনে সর্বোচ্চ ৭–৮টি লিচু খাওয়া নিরাপদ। ডায়াবেটিস থাকলে, ভরা পেটে সর্বোচ্চ ৫–৬টি লিচু খাওয়াই যথেষ্ট।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।


