বেগুন আমাদের দেশের রান্নায় বহুল ব্যবহৃত একটি সবজি। গ্রামীণ রান্নায় এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়। যদিও সবার জন্য বেগুন উপকারী নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেগুন খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।

বেগুন একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর সবজি যার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার রয়েছে। তবে, কিছু লোকের বেগুন খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এটি তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারা বেগুন খাওয়া এড়িয়ে চলবেন এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি কী কী, তা জেনে নেওয়া যাক।

বেগুনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Brinjal side effects):

কিডনিতে পাথর এবং অক্সালেট:

বেগুনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অক্সালেট থাকে। অক্সালেট হল এমন একটি যৌগ যা অনেক উদ্ভিদজাত খাবারে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। এটি কিডনিতে পাথর তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। যাদের ইতিমধ্যেই কিডনিতে পাথর আছে, তাদের বেগুন খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

অ্যালার্জি:

বেগুন নাইটশেড পরিবারের সদস্য। বেগুনে হিস্টামিনের মতো যৌগ থাকে যা কিছু লোকের মধ্যে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে রয়েছে ত্বকের চুলকানি, লালচে ভাব, ফুসকুড়ি, ঠোঁট বা জিহ্বা ফুলে যাওয়া, গলা শক্ত হয়ে যাওয়া এবং শ্বাসকষ্ট। কিছু গুরুতর ক্ষেত্রে, অ্যানাফিল্যাক্সিস নামক একটি প্রাণঘাতী অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াও হতে পারে।

পাচনতন্ত্রের সমস্যা:

বেগুনে সোলানাইন নামক অ্যালকালয়েডের সামান্য পরিমাণ থাকে। অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে, সোলানাইন বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যথা সহ পাচনতন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণত, রান্না করা বেগুনে সোলানাইনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তবে, যাদের পাচনতন্ত্রের সমস্যা আছে, তাদের বেগুন কম পরিমাণে খাওয়া বা এড়িয়ে চলা উচিত।

বিষণ্ণতার ওষুধ খাওয়া ব্যক্তিরা:

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে বেগুন বিষণ্ণতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যারা বিষণ্ণতার ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের বেগুন খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

গর্ভবতী মহিলারা:

বেগুনে ফাইটোহরমোন থাকে, যা গর্ভাবস্থায় কিছু জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হয়। তাই, গর্ভবতী মহিলাদের বেগুন খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্তাল্পতা আক্রান্ত ব্যক্তিরা:

বেগুনে থাকা কিছু উপাদান শরীরে আয়রন শোষণে বাধা দিতে পারে। রক্তাল্পতা আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেগুন বেশি পরিমাণে খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

চোখের সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তিরা:

কিছু লোকের নাইটশেড সবজি খাওয়ার ফলে চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হলেও, বিশেষ করে যাদের ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের মতো নির্দিষ্ট চোখের সমস্যা আছে, তাদের বেগুন খাওয়ার ফলে চোখে জ্বালাপোড়া বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।

পাইলস আক্রান্ত ব্যক্তিরা:

কিছু খাবার, বিশেষ করে যেগুলো প্রদাহ বাড়ায়, সেগুলো পাইলসের লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করতে পারে। বেগুন কিছু লোকের মধ্যে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে বলে, পাইলস আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেগুন খাওয়া কমানো বা এড়িয়ে চলা উচিত।

ভুল করে বেগুন খেলে কী করবেন?

যদি আপনি ভুল করে বেগুন খেয়ে ফেলেন, তাহলে আপনার শরীর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেদিকে মনোযোগ দিন। যদি হালকা লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে প্রচুর পানি পান করুন এবং বিশ্রাম নিন। যদি গুরুতর অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া (শ্বাসকষ্ট, জিহ্বা বা গলা ফুলে যাওয়া, অজ্ঞান হওয়া) দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।