আজকাল ব্যস্ত জীবনে জিমে গিয়ে শরীরের যত্ন নেওয়া হলেও হাঁটুর যত্ন নেন না বেশিরভাগই। শরীরের ওজন ১ কেজি বাড়লে হাঁটুর উপর ৪ কেজি বাড়তি চাপ পড়ে যা অস্থিসন্ধিকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়। স্থূলতা, ভুল ব্যায়াম, অতিরিক্ত ওজন হাঁটুর ব্যথার অন্যতম কারণ।

আজকাল ব্যাস্ত জীবনে জিমে গিয়ে শরীরের যত্ন নেওয়া হলেও হাঁটুর যত্ন নেন না বেশিরভাগই। আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরায় ও শরীরের ভার বহন করতে পায়ের অস্থি সন্ধি হাঁটুর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের স্বামী ও চিকিৎসক ডঃ শ্রীরাম নেনে সমাজমাধ্যমে জরুরি কিছু পোস্ট করেন। হাঁটুর ওপর ওজন বৃদ্ধি ও ভুল ব্যায়ামের মারাত্মক প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেন সেখানে। তিনি বলেন, শরীরের ওজন ১ কেজি বাড়লে হাঁটুর উপর ৪ কেজি বাড়তি চাপ পড়ে – যা অস্থিসন্ধিকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়।

হাঁটু ক্ষয় ও ব্যাথার কারণ

স্থূলতা বা Obesity হাঁটুর ব্যথার অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত ওজনের কারণে হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে যে তরল (Synovial Fluid) থাকে, তা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। এতে হাড়ে ঘর্ষণ বাড়ে এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো জটিল রোগের জন্ম হয়। হাঁটুর হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি-এর ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে সাধারণ হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা বা বসা-উঠার সময়ও ব্যথা অনুভূত হয়।

এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত বা ভুল শরীরচর্চা হাঁটুর ব্যাথার অন্যতম কারণ হতে পারে। শরীর বুঝেই শরীরচর্চা করা জরুরি। খুব বেশি দৌড়োদৌড়ি, দীর্ঘ সময় ধরে একটানা হাঁটা, জাম্পিং স্কোয়াট— এই ব্যায়ামগুলি প্রশিক্ষকের পরামর্শ ছাড়া করতে থাকলে, হাঁটুতে চাপ পড়ে। বদলে সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ও নিয়ম মেনে হাঁটলে উপকার বেশি হয়। এই ধরনের শারীরিক কসরত হাঁটুতে সাইনুভিয়াল ফ্লুইডের মাত্রা বাড়ায়। ফলে হাড়ের ঘর্ষণজনিত ক্ষয়ের ঝুঁকি কমে।

হাঁটুর ব্যথা কমাতে করণীয়

১। নিয়মিত ওজন নিয়ন্ত্রণ – প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখা জরুরি। ওজন যত বাড়বে, ততই দুই হাঁটুর উপর চাপ পড়বে। তবে ওজন কমাতে গিয়ে একটানা মাইলের পর মাইল জোরে হাঁটা যাবে না। আধ ঘণ্টা-চল্লিশ মিনিটের বেশি হাঁটার দরকার নেই। অপেক্ষাকৃত মসৃণ রাস্তায় হাঁটতে হবে।

২। হালকা ব্যায়াম বেছে নেওয়া – হাঁটুর জন্য উপযোগী ব্যায়াম যেমন সাঁতার ও সাইকেল চালানো করতে হবে। তবে ব্যথা বাড়লে ট্রেডমিলে হাঁটা বা দৌড়ানো না করাই ভালো।

৩। বরফ বা গরম সেঁক – হাঁটুর জায়গাটা যদি ফুলে গরম হয়ে যায়, তা হলে বরফ সেঁক দিতে হবে। আর গরম না-হলে শুধু ব্যথা থাকলে ব্যথা কমানোর মলম লাগিয়ে তার উপর গরম শেঁক দেওয়া যাবে।

৪। ‘ভিসকো সাপ্লিমেন্টেশন’ ইনজেকশন – ভিসকো সাপ্লিমেন্টেশন’ নামে এক ধরনের ইঞ্জেকশন আছে, যেটা অনেকটা জেলির মতো। তাতেও ভাল কাজ হয়। ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর রোগীকে বলে দেওয়া হয়, মাটিতে বসে কাজ করবেন না। তবে এই জাতীয় ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শেই নিতে হবে।

সারাংশ আজকাল মধ্য ত্রিশেও হাঁটুতে অস্ত্রোপচার বা হাঁটু প্রতিস্থাপন করাতে হচ্ছে অনেককেই। এর একটা কারণ যেমন ওজন বৃদ্ধি, তেমনই অন্যটি ভুল পদ্ধতিতে শরীরচর্চা করা। তাই সময় থাকতে সতর্ক হওয়া জরুরি।