Pollutions from light: আমরা সভ্যতার আলোয় দিন দিন আরও উজ্জ্বল হচ্ছি ঠিকই, কিন্তু এই আলোই অন্ধকার নামাচ্ছে আমাদের জীবনে। হচ্ছে আলোক দূষণ। সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরও। তাই প্রয়োজন এখনই সচেতন হওয়া। অপ্রয়োজনীয় আলোর ব্যবহার কমানো উচিত।
Pollution caused by street lights: আমরা সভ্যতার আলোয় দিন দিন আরও উজ্জ্বল হচ্ছি ঠিকই, কিন্তু এই আলোই অন্ধকার নামাচ্ছে আমাদের জীবনে, হচ্ছে আলোক দূষণ (Light Pollution)। আধুনিক শহরগুলিতে রাতও দিনের মতো আলোকিত কৃত্রিম আলোর ঝলকে। দেখা মেলে না রাতের আকাশের তারা। স্বস্তির ঘুম নেই বন্যপ্রাণীদের চোখে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি বলছে, এই আলো শুধু চোখ ধাঁধানো নয়, স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, পরিবেশবিধ্বংসী এবং মানসিক শান্তির শত্রুও।
আলোক দূষণ কী ও কেন তা ক্ষতিকর?
আলোক দূষণ বলতে বোঝায় অনিয়ন্ত্রিত, অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় কৃত্রিম আলোর ব্যবহার, যা মানুষের স্বাভাবিক ঘুমের ছন্দ, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং অন্যান্য জীবজগতের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। আলোর উৎস থেকে নিঃসৃত ফোটন কণা রেটিনায় পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে নিউরনের মাধ্যমে সঙ্কেত পৌঁছে যায় দুই গুরুমস্তিষ্কের মাঝে থাকা পিনিয়াল গ্রন্থিতে। পিনিয়াল গ্রন্থি মেলাটোনিন নিঃসরণ করে। রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোকের উপস্থিতি রক্তে মেলাটোনিনের স্বাভাবিক ঘনত্বের পরিবর্তন করে, যা নিদ্রাহীনতা, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়। বিজ্ঞানীরা তো কৃত্রিম আলোকের সঙ্গে স্তন ক্যানসারের যোগসূত্রও পেয়েছেন। দেখা গিয়েছে, যাঁরা বেশি সময় কৃত্রিম আলোয় থাকেন, তাঁদের ক্যানসারের ঝুঁকিও বেশি।
এই আলোক দূষণকে ভাগ করা হয় বিভিন্ন ভাগে-
- Light Trespass: বাইরের রাস্তার বা অন্য উৎসের আলো জানালা পেরিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে।
- Over-illumination: অপ্রয়োজনীয় বা অত্যধিক আলোয় পরিবেশে হস্তক্ষেপ।
- Light Clutter: এলোমেলোভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে বিচ্ছুরিত আলোর ‘জ্যাম’, যা চোখ ধাঁধিয়ে দেয় এবং দিকভ্রান্ত করে।
কী বলছে গবেষণা?
ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস অফ আর্টিফিশিয়াল স্কাই লুমিনিসেন্সের সমীক্ষা বলছে বিশ্বের জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই আলোক দূষণের শিকার। এর থেকে বাড়ছে স্থূলত্ব, টাইপ ২ ডায়াবিটিস ও অ্যালঝাইমার্সের ঝুঁকি। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের গবেষণাতেও উঠে এসেছে আলোক দূষণের কথা। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রাতের অন্ধকারে জোরালো কৃত্রিম আলো শরীরের ‘ঘড়ি’ বা সার্কাডিয়ান রিদ্মকে বদলে দিচ্ছে। ২০২৪ সালে ‘ডায়াবিটিস অ্যান্ড মেটাবলিজ়ম’ জার্নালে আলোক দূষণ নিয়ে বিস্তারিত লেখা হয়েছিল। গবেষকেরা জানিয়েছিলেন, শহর, ছোট জনপদ থেকে গ্রাম— সর্বত্রই সূর্যাস্তের পর থেকে জ্বলছে কৃত্রিম আলো। উৎসব-পার্বণের দিনে তা আরও জোরালো হয়ে ওঠে। ইতালির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ রাতে প্রকৃতির আলো বুঝতে পারেন না। তার কারণ, কৃত্রিম আলোর আধিক্য। ২০১৭ সালে জার্মান বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণা দেখিয়েছিল, কৃত্রিম আলোর দূষণ শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এর থেকে ‘মেটাবলিক ডিজঅর্ডার’ হতে পারে, যা স্থূলত্বের কারণ। কেবল তা-ই নয়, আলোক দূষণ অনিদ্রারও কারণ হয়ে উঠছে দিনে দিনে। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদের মতো শহরগুলি এই দূষণের চরম শিকার। এখন আশঙ্কাজনকভাবে গ্রামাঞ্চলেও রাতের অন্ধকারে কৃত্রিম আলো প্রবেশ করছে। রাস্তার আলো, দোকানের এলইডি লাইট এবং উৎসবে রঙিন আলোর ঘটায় দূষিত গ্রামও।
LED ব্যবহারে ভ্রান্ত ধারণা
বহুজনের ধারণা, LED আলো পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ। তবে এটি আধা-সত্য। এলইডি আলোতে নীল রঙের আলো বেশি থাকে, যা রাতের বেলায় মেলাটোনিন নিঃসরণে সবচেয়ে বেশি বাঁধা সৃষ্টি করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে নিদ্রাহীনতা, মানসিক উদ্বেগ ও হরমোনাল সমস্যা তৈরি করে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।


