চিনির মতোই দেখতে, চিনির মতোই খেতে, তবে চিনি নয়। বাণিজ্যকভবে তৈরী এই চিনির বিকল্প এখন মিলছে বাজারেও। 

চিনি এখন শরীরের জন্য বিষ। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে স্থূলতা— সবকিছুর পিছনে অন্যতম কারণ এই চিনি। তাই ঝোঁক বেড়েছে চিনির পরিবর্তে কৃত্রিম সুইটেনার বা মধু, গুড় বা মিষ্টি সিরাপে। তবে তাতেও সুক্রোজের মাত্রা বেশি। এমতাবস্থায়, বিজ্ঞানীরা এমন এক চিনির সন্ধান পেয়েছেন যা খেতে মিষ্টি হলেও চিনির মতো বিষ নয়। এটি হলো অ্যালুলোজ।

ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রেও অ্যালুলোজ নিয়ে লেখা হয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি রাখেন, চিনির বিকল্প হিসেবে অ্যালুলোজ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে না, ডায়াবিটিসের ঝুঁকি কমায়। ওজন কমায়, এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সও।

অ্যালুলোজ কী?

অ্যালুলোজ এক ধরনের মনোস্যাকারাইড, অর্থাৎ বা ফ্রুক্টোজ -এর মতোই চিনির সরলতম রূপ এটি। চিনির মতো গঠন তবে এর ঘনত্ব চিনির থেকে কম, আর কার্যকারিতাও অন্য রকম।

প্রতি গ্রাম অ্যালুলোজে মাত্র ০.২ থেকে ০.৪ ক্যালোরি থাকে— যা সাধারণ চিনির তুলনায় প্রায় ৯০% কম। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম, তাই এটি রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধির আশঙ্কা দূর করে।

অ্যালুলোজের উপকারিতা

* ওজন কমাতে উপযোগী অ্যালুলোজ। শরীরে জমা বাড়তি মেদ ঝরাতে পারে

* শরীরে প্রদাহের মাত্রাও কমাতে পারে

* অ্যালুলোজ খেলে শরীরে শক্তি তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি পুড়ে যায়

* বেশি চিনি খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়, কিন্তু অ্যালুলোজ খেলে তা হয় না

* অ্যালুলোজ মেশানো খবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

* এই ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স

অ্যালুলোজ কীভাবে পাবেন?

১। প্রাকৃতিক উৎস

প্রাকৃতিক ভাবে অ্যালুলোজ পেতে হলে খেতে হবে কিশমিশ, শুকনো ডুমুর, কাঁঠাল বীজ, গুড়। ম্যাপেল সিরাপে অল্প পরিমাণে অ্যালুলোজ থাকে।

২। প্রক্রিয়াজাত উৎস

চিনির প্রক্রিয়াকরণের সময়ে অ্যালুলোজ তৈরি করা হয় বাণিজ্যকভাবে, তা বিক্রিও হচ্ছে বাজারে। বেকারির খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবারে এখন চিনির বদলে অ্যালুলোজ মেশাচ্ছেন অনেকে। আবার ফ্রুক্টোজ বা কর্ন সিরাপ থেকেও অ্যালুলোজ তৈরি করা হয়, সে ক্ষেত্রে ফ্রুক্টোজের রাসায়নিক গঠন বদলে দেওয়া হয়।

সতর্কতা

অ্যালুলোজ চিনির থেকে নিরাপদ বলে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। এটি বেশি খেতে শুরু করলে ঘন ঘন পেটের সমস্যা, ডায়ারিয়া দেখা দিতে পারে। কতটা খাওয়া উচিত বা উচিত নয়, কীভাবেই বা খাওয়া উচিত, জানার জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।