ডায়াবেটিস রোগীরা বাধ্য হয়ে চিনি এড়িয়ে চলেন। কিন্তু ৩০ দিন চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করলে শরীরে কী কী উপকার হয়, জানলে অবাক হবেন।

আজকের দুনিয়ায়, চিনি (Sugar) ছাড়া একটা দিন কাটানোই যেন চ্যালেঞ্জ। চা, কফি, বিস্কুট, কেক, সস, জুস, আইসক্রিম, চকোলেট—কিছু না কিছু রূপে আমরা চিনি খেয়েই চলেছি। তাই আমাদের খাবারে চিনি নেই, এটা বলা যায় না। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া শরীরের জন্য অনেকটা ধীরে বিষের মতো। প্রথমে মিষ্টি লাগলেও, ধীরে ধীরে এটাই শরীর ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এটা প্রতিরোধের একটাই উপায়, পুরোপুরি ত্যাগ করা। কিন্তু চিনি ছাড়া, চিনি না খেয়ে কি থাকা যায়? এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে অনেকেই এখন চেষ্টা করছেন। "30 Days No Sugar Challenge" আমাদের শরীরকে পরিষ্কার করতে একটা প্রাকৃতিক ডিটক্সের মতো কাজ করবে। 

৩০ দিনের চিনিবিহীন চ্যালেঞ্জ – সম্পূর্ণ উপকারিতা :

১. ওজন পরিবর্তন:

- এটা অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। ফলে ফ্যাট স্টোরেজ কমে। চিনি এড়িয়ে গেলে ফ্যাট বার্ন হতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
- অনেকে ৩০ দিনে ২–৫ কেজি পর্যন্ত ওজন কমিয়েছেন। এর সাথে সঠিক খাবার যোগ করাও জরুরি।

২. ত্বক, মুখ, সৌন্দর্য উজ্জ্বল হবে :

- চিনিযুক্ত খাবারে ত্বকের কোলাজেন ভেঙে যায়, ফলে বলিরেখা ও ঔজ্জ্বল্য কমে যায়।
- ২ সপ্তাহে ব্রণ কমবে।
- ৩ সপ্তাহে ত্বকে একটা আভা দেখা যাবে।
- ৩০ দিনে আপনার মুখ দেখলে সবাই বলবে যেন কাঁচের মতো চকচক করছে!

৩. ক্লান্তিহীন থাকা যায়:

- চিনি দ্রুত শক্তি দেয়, কিন্তু দ্রুত সেই শক্তি কমেও যায়। 
- চিনি ছাড়া খাবার খেলে না খেয়েও অনেকক্ষণ ক্লান্তি লাগে না।
- তবে রক্তের শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে ৩ বেলা খাবার যথেষ্ট।
- মাঝে মধ্যে স্ন্যাক্সের ক্রেভিং কম হবে।

৪. মনে শান্তি আসবে :

গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিনি মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়ায়।
প্রথম সপ্তাহে চিনি না খেলে মন পরিষ্কার থাকবে।
২য় সপ্তাহ - ঘুম ভালো হবে।
৩য় সপ্তাহ - মানসিক চাপ কমবে।

৫. খাবারে আসল স্বাদ অনুভব করবেন :

- প্রাকৃতিক টক, লবণ, ঝাল স্বাদগুলো অনুভব করতে পারবেন।
- ফলের প্রাকৃতিক মিষ্টি (natural fructose) খুব মিষ্টি লাগবে।

যা এড়িয়ে চলবেন :

- সাদা চিনি, প্যাকেট চিনি
- বিস্কুট, কেক, পাস্তা
- প্যাকেট জুস, এনার্জি ড্রিঙ্কস
- চকোলেট, আইসক্রিম
- গুঁড়ো দুধ, প্রক্রিয়াজাত বাণিজ্যিক খাবার
এগুলো লেবেলে sugar, glucose, syrup, fructose, maltose, sucrose নামে থাকতে পারে।

কী খেতে পারেন (অনুমোদিত তালিকা):

- ফল (নাশপাতি, কলা, ডালিম, আপেল)
- মধু (পরিমাণ মতো), দেশি চিনি, খেজুর গুড় (মাঝে মাঝে)
- গ্রিন টি, লেবু চা
- ডিম, সামা, শাক, ব্রাউন রাইস
- ডাবের জল, ভেটিভার জল
লবণ ও ঝাল তো আমাদের ভালোই লাগে।

সপ্তাহে সপ্তাহে শরীরের প্রতিক্রিয়া:

সপ্তাহ ১ - মাথা ব্যথা কমবে, খিদে বাড়বে
সপ্তাহ ২ - শক্তি স্থিতিশীল হবে, ঘুম ভালো হবে
সপ্তাহ ৩ - মুখে উজ্জ্বলতা, মন পরিষ্কার হবে
সপ্তাহ ৪ - ওজন কমবে, মন আরও পরিষ্কার হবে

কফি, চায়ের বিকল্প :

- মেথি, আদা জল - ক্ষিদের বিকল্প
- লেবুর রস, মধু - সকালের এনার্জি পানীয়
- শুকনো আদা, তুলসী চা - ইমিউনিটি, মুড ব্যালেন্স
- সামা / কোদোর খাবার - গ্যাস নিয়ন্ত্রণ

এটা কোনো ডায়েট নয়, একটা অভ্যাসের পরিবর্তন। আমাদের ত্রুটিহীনভাবে বাঁচিয়ে রাখার একটা চ্যালেঞ্জ। ৩০ দিন পর আপনার শরীর পুরোনো চিনিকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করবে।