মহাভারতে যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে মহাপ্রস্থানের পথে হাঁটা থেকে শুরু করে আজ অবধি একইরকম অনুগামী কুকুরেরা। তাই পাড়ার কুকুরদের হেলাফেলা নয়। নামিদামি ব্রিডের থেকে রাস্তার দেশীয় কুকুরগুলোই আপনার অসময়ের বন্ধু।

অনেকেই আছেন যারা সারমেয় প্রেমী অথচ রাস্তার কুকুর দেখলে তাড়িয়ে দেন। যদি ভেবে থাকেন শুধু নামিদামি ব্রিডের কুকুরেরাই আপনাকে ভালোবাসা, সৌন্দর্য, সঙ্গ, নিরাপত্তা দিতে পারবে - তবে ভুল ভাবছেন। ল্যাব্রাডর, জার্মান শেফার্ড, গোল্ডেন রিট্রিভার - এইসব বিদেশী জাতের কুকুরেরা প্রভুভক্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রভুর উপর প্রভূর ওপর নির্ভরশীল সম্পূর্ণ।

কিন্তু জানেন কি, যারা প্রতিদিন আপনার পাড়ার রাস্তায়-গলিতে ঘুরে বেড়ায়, সেই কালু, লালু, ভুলুরাই হতে পারে আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত আর কৃতজ্ঞ বন্ধু। এদের ‘ইন্ডিয়ান পারিয়া’ বলে, দেশি জাতের রাস্তার কুকুর। ওদের আপনি একটু ভালোবাসা দিলে ওরা তা ঢের গুণ বেশি ফেরত দেবে আপনাকে।

সেই মহাভারতের সময় থেকে মানুষের অনুগামী কুকুর। যুধিষ্ঠিরের সঙ্গে সেই যে মহাপ্রস্থানের পথে হাঁটা থেকে শুরু করেছে, আজও সমানভাবে ভরসা ও বিশ্বাসের সাথে অনুগামী তারা। এই স্বভাবের পেছনে বেশ কিছু কারণও খুঁজে বের করেছেন গবেষকরা।

দামি ব্রিডের থেকে দেশি পারিয়া'দের তফাৎ কেন?

রাস্তার দেশী জাতের কুকুরেরা জন্ম থেকেই লড়াকু। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়, কখনো খেতে না পাওয়া, দিনের পর দিন অযত্ন তাদের সংগ্রামী হতে শিখিয়েছে। ছোটবেলায় মা পাশে থাকলেও পরিস্থিতি খুব একটা সহজ ছিল না। একটু বড়ো হতে না হতেই নিজের খাবার নিজেকেই জোগাড় করতে হয়েছে, হয়তো বন্ধুদের সাথে লড়াই করেই। এই চ্যালেঞ্জই ওদের করে তোলে আরও দৃঢ়, আরও সজাগ।

অথচ, আপনার পোষ্য দামি ব্রিড ২৪ ঘন্টা নির্ভিরশীল আপনার ওপর। তার খাওয়া দাওয়া, দেখভাল সব। একবার বৃষ্টিতে ভিজলেই হলো, ঠান্ডা লেগে ডাক্তারের কাছে নিয়ে ছুটতে হয়, নিজে হাতে খাইয়ে দিতে হয়। জে পোষ্যর জন্য এতটা করবেন সে আপনার প্রতি নির্ভরশীল ও অনুগত তো হবেই।

অন্যদিকে, দিনে একবার হলেও বিস্কুট বা একটা রুটি, গরমের দিনে একবাটি জল, কখনো সময় পেলে একটু আদর করে দিলেই হবে। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে রাস্তার লালু-ভুলু'রা। আহ্লাদে আটখানা হয়ে আপনার পায়ে পায়েই ঘুরবে সারাদিন। আপনাকে একবেলা না দেখলে মুখ ভার হয়ে যায় ওদেরও। তারপরই দেখতে পেলে চোখ দুটো আনন্দে জ্বল জ্বল করবে, আদর খেতে পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়বে। ওদের জন্য খরচ কম, প্রাপ্তি ঢের। আপনি একটু ভালোবাসা ও মায়া দেখালেই ওরা যেন সারাজীবনের জন্য ভালোবাসবে আপনাকে, কৃতজ্ঞ থাকবে আপনার কাছে।

পাড়ার পাহারাদার বন্ধু

প্রতিদিন পাড়ায় নজরদারি চালানো যেন ওদের দায়িত্ব।অপরিচিত কাউকে দেখলেই শব্দ করে সাবধান করে দেয় সবাইকে। জেরা করার মতো পিছু নেয় নবাগতের, সন্দেহভাজন নয় মনে হলে তবেই মেলে ছাড়পত্র। শুধু দিনের বেলাই নয়, রাত জেগে পাহারা দেয় এরা। সজাগ নজর আর চিৎকারে চোর-ডাকাত ঘেঁষার উপায় থাকে না পাড়ায়। অথচ সেই সময় আপনার বাড়ির দামি ব্রিডের সারমেয় হয়তো ঠান্ডা ঘরে আপনার সাথে ঘুমোচ্ছে।

আবার পাড়ার বাচ্চাদের সঙ্গেও খুব মেলামেশা তাদের। ফুটবল, লুকোচুরি সব কিছুতেই বাচ্চাদের সাথে তারা। কারণ ওই নিষ্পাপ বাচ্চাগুলোর ভালোবাসা তারা বোঝে।