সংক্ষিপ্ত

শিশুরা যখন মোবাইল ফোনে মনোযোগ দেয়, তখন তাদের খাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয় না। এতেই ওদের খাওয়ার বিষয়ে সন্তুষ্ট বোধ করেন। এই কারণে তারা হয় কম খায় নয়তো বেশি খায়।

 

শিশুরা যখন খায় না, বাড়ির বড়তাই তখন তাদের মোবাইল ফোন দেখিয়ে খাওয়ায়। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই 'স্ক্রিন অ্যাডিকশন'-এর কারণে শিশুদের ক্ষুধার্ত হওয়ার প্রবণতা কমছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতেও শিশুরা যখন মোবাইল ফোনে মনোযোগ দেয়, তখন তাদের খাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হয় না। এতেই ওদের খাওয়ার বিষয়ে সন্তুষ্ট বোধ করেন। এই কারণে তারা হয় কম খায় নয়তো বেশি খায়।

অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তের প্রভাব অপুষ্টি এবং স্থূলতা উভয় ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। অন্যদিকে, যেসব শিশু খেতে ইচ্ছুক কিন্তু মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে কখন পেট ভরে তা বলতে পারে না, তখন তাদের বাবা-মা তাদের খুব বেশি খাওয়ান। 'স্ক্রিন আসক্তি শিশুর ক্ষুধা ও তৃপ্তি বোঝার ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। যার কারণে শিশুরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়।

গ্রোথ হরমোনের উপর প্রভাব-

অন্য একটি ক্ষেত্রে, ডাক্তাররা এমন কেসও দেখেছেলেন যেখানে একটি সাত বছর বয়সী শিশু রাতে খিটখিটে হতে শুরু করে। বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, শিশুটি গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে এবং ভোর পর্যন্ত ঘুমায়। ঘুমাতে যাওয়ার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত কার্টুন দেখার অভ্যাস ছিল শিশুটির। একে কাউন্টার প্রোডাক্টিভ বলেছেন। তিনি বলেন, 'সমস্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস নীল আলো নির্গত করে যা স্বাভাবিক ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের ওপর চাপ দেয়। বেশিরভাগ মানুষের বৃদ্ধির হরমোন রাতে বেশি সক্রিয় থাকে। কিন্তু যখন শিশু রাতে কম ঘুমায়, তখন সে পুরোপুরি বিকশিত হতে পারবে না। কম ঘুমের কারণেও তারা খিটখিটে হয়ে পড়ে।

পাঁচটি ইন্দ্রিয় বিকশিত হয় না।-

পর্দার আসক্তির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জিনিগেরি বলেন, 'শিশুরা এখন ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রনিক গ্যাজেট এবং ডিজিটাল মিডিয়ার সংস্পর্শে আসছে। জীবনের প্রথম পাঁচ বছরে দেখা, শ্রবণ, অনুভূতি, গন্ধ এবং স্বাদ সহ পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের বিকাশ প্রয়োজন। কিন্তু ইলেকট্রনিক গ্যাজেট এবং মোবাইল শিশুদের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতি করে। এটি তাদের জীবনে স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় প্রভাব ফেলে। এর স্বল্পমেয়াদী প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে ঘুমের সময় হ্রাস এবং বিরক্তি। একই সময়ে, দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে শিশুদের আচরণগত সমস্যা, মনোযোগ দিতে অসুবিধা, স্কুলের কর্মক্ষমতার উপর প্রভাব এবং মনোযোগ ঘাটতির সমস্যা।

শারীরিক কার্যকলাপ সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক করে তোলে

এই পর্দা আসক্তি শিশুদের বাইরের খেলার উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকরাও বলছেন, শিশুর বিকাশের জন্য শারীরিক পরিশ্রম ও বাইরে খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, 'জীবনের প্রথম কয়েক বছরে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ এবং আউটডোর খেলার সময় মস্তিষ্কের বিকাশের গতি এবং ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পায়। বাইরে খেলার সময় শিশুদের নিউরাল নেটওয়ার্ক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যা শিশুদের সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক হতে সাহায্য করে। যেসব শিশু শৈশবে গ্যাজেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে, তারা এই বিকাশ প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে থাকে। যার কারণে শিশুরা হাইপার অ্যাক্টিভিটি এবং মনোযোগের ঘাটতির মতো রোগে ভুগছে।

শিশুদের কতক্ষণ মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত?

ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের প্রতি আসক্তির কারণে শিশুদের সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের প্রবণতাও কমে যায়। এনআইসিইউ বিশেষজ্ঞ ও ডাঃ গুরুরাজ বিরাদার বলেন, 'ডিজিটাল মিডিয়ার কারণে শিশুরা পুরোপুরি সামাজিক হয়ে উঠতে পারে না এবং এর কারণে কথা বলার প্রক্রিয়াও শৈশবে দেরিতে শুরু হয়। এই শিশুদের বড় হওয়ার পর যোগাযোগ দক্ষতা সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের সময় সম্পর্কে শিশু বিশেষজ্ঞ ডক্টর শেরিল হেইস বলেন, 'পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মাত্র এক ঘণ্টার জন্য মোবাইল ফোন দেওয়া উচিত। শিশুরা পাঁচ বছরের বেশি হলে তাদের ফোনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা সময় দিতে হবে। যেসব শিশু অতিরিক্ত গ্যাজেট ব্যবহার করে তাদের কাউন্সেলিং করা উচিত এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত।

আচরণ সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ে

অনেক গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে বাচ্চাদের খাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা তাদের মধ্যে স্থূলতা, ক্ষুব্ধতা এবং আচরণ সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ায়। মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহার তাদের একাগ্রতা এবং বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে, যার কারণে শিশুদের মধ্যে অতিসক্রিয় আচরণ, হতাশা এবং আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

কিভাবে শিশুদের মোবাইল থেকে দূরে রাখা যায়

মোবাইল এবং টিভি দেখার সময় ঠিক করুন এবং কঠোরভাবে প্রয়োগ করুন।

খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর আগে কখনই বাচ্চাদের মোবাইল ফোন দেবেন না। এই সময় শিশুদের সঙ্গে কথা বলুন।

আপনি বাচ্চাদের জন্য যে নিয়মগুলি সেট করুন না কেন, সেগুলি নিজেই অনুসরণ করুন।

- গল্প বলা, বোর্ড গেমস, বহিরঙ্গন কার্যকলাপের মতো অন্যান্য কাজে শিশুদের নিযুক্ত করুন।

- শিশুদের বোঝানো, খাওয়ানো বা প্রলুব্ধ করার জন্য কখনই মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না।

আরও খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের চ্যানেলের লিঙ্কে-