সংক্ষিপ্ত

শেষকৃত্যের পর গ্রামের মানুষ নিজেরাই চাঁদা তুলে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই টাকা কেন স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার দেওর ফারুক মিঞার হাতে দেওয়া হল না? এই ‘অপরাধে’ বীরভূমের রামপুরহাট থানার পাইকপাড়া গ্রামে শোকস্তব্ধ বাড়িতে চলল তাণ্ডব। 

মৃতদেহ সৎকারের টাকাতেও কাটমানি। টাকা না পেয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার দেওরের দাদাগিরিতে নতুন করে কান্নার রোল উঠলো শোকস্তব্ধ পরিবারে। যদিও দাদাগিরির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্যা কুমেলা বিবি।


ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের রামপুরহাট থানার পাইকপাড়া গ্রামে। নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই গ্রামে ২২০টি পরিবারের বসবাস। গ্রামের কোনও মানুষ মারা গেলে গ্রামে চাঁদা তুলে মৃতদেহ সৎকার এবং আত্মীয় স্বজনদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। 

বুধবার রাতে এই গ্রামে সেফ আলী মিঞা নামে এক যুবক দীর্ঘদিন রোগভোগের পর মারা যান। যথারীতি গ্রামের কিছু মানুষ মিলে বৃহস্পতিবার সকালে চাঁদা তুলে আত্মীয় স্বজনদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেন। রান্না চলাকালীন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যার দেওর ফারুক মিঞা তাঁর দলবল নিয়ে এসে তাণ্ডব চালায়, শোকস্তব্ধ মানুষদের মারধর করে এবং সমস্ত খাবারদাবার নষ্ট করে দিয়ে যায় বলে অভিযোগ। মৃতের পরিবারের ‘অপরাধ’ এই যে, ফারুককে না জানিয়ে চাঁদা তুলে ওই বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ঘটনায় মৃতের বাড়িতে নতুন করে কান্না শুরু হয়ে যায়। খবর পেয়ে গ্রামে যায় রামপুরহাট থানার পুলিশ।


গ্রামের বাসিন্দা কাইমুদ্দিন মিঞা বলেন, “গ্রামের রেওয়াজ কেউ মারা গেলে চাঁদা তুলে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেই মতো আমরা চাঁদা তুলে রান্নার কাজ শুরু করেছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে ফারুক মিঞা দলবল নিয়ে এসে মারধর শুরু করে। খাবার নষ্ট করে দেয়। আমাদের অপরাধ চাঁদার টাকা ওদের হাতে তুলে দিইনি। ওরা নদীর বালি তুলে বিক্রি করছে। গরু পাচার করছে। এবার মরার টাকারও কাটমানি দাবি করছে। ওদের কিছুতেই পেট ভরে না।”


অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যার দেওর ফারুক উদ্দিন মিঞা। তিনি বলেন, "গ্রামে কেউ মারা গেলে আমরাই চাঁদা তুলে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করি। তা নিয়ে আমরা মৃতের বাড়িতে আলোচনা করতে গিয়েছিলাম। সেসময় ওরাই আমাদের মারধর করে। তখনই ঠেলাঠেলিতে খাবার নষ্ট হয়ে থাকতে পারে। আমরা খাবার ফেলে দিইনি।” 

এই ঘটনায় পর অভুক্ত থাকতে হয় মৃতের পরিবারের আত্মীয় স্বজনদের। যদিও এই ঘটনার নিন্দা করেছে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সঞ্জীব মল্লিক বলেন, "তৃণমূল কাটমানি খেতে খেতে মৃতের বাড়ির চাঁদার টাকাও খেতে শুরু করেছে। এরা একদম নির্লজ্জ। এদের কোন মানবিকতা নেই। তাই মৃতের বাড়িতে গিয়ে অশান্তি করে এসেছে।”


আরও পড়ুন-
বৃদ্ধকে রাস্তায় ফেলে লাঠিপেটা, পুলিশ বনাম বাম সমর্থকদের লড়াইয়ে রক্তাক্ত পূর্ব বর্ধমান
পদ্মশিবির ধুলিস্যাৎ, দিল্লির আস্থাভোটে কেজরীওয়ালের জয়জয়কার 
শুধু উৎসবের মরসুমেই ভাইবোনেদের সঙ্গে দেখা হয়: পরিবারের সম্পত্তির প্রসঙ্গ উঠতেই সুর চড়ালেন মমতা