দীর্ঘ কয়েক দশকের লড়াইয়ের অবসান। আদালতের নির্দেশে হলো আজ বস্তি উচ্ছেদ ! ঘটনাস্থলে আরামবাগ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী সহ আরামবাগ মহকুমার বিচারপতি ! 

আইনি নোটিশ আগেই দেয়া হয়েছিল । এবার আদালতের নির্দেশে হুগলি জেলার আরামবাগ পৌরসভার অন্তর্গত ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আন্দীমহল্লা এলাকায় একটি বস্তি উচ্ছেদ শুরু করলো প্রশাসন । বস্তি উচ্ছেদের সময় যাতে করে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে ,এলাকায় মোতায়েন ছিল আরামবাগ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এবং খোদ উপস্থিত ছিলেন আরামবাগ থানার আইসি রাকেশ সিং । কার্যত এছাড়াও এই দিনে উপস্থিত ছিলেন আরামবাগ মহকুমা আদালতের কর্মীরা। বস্তি উচ্ছেদের ঘটনা জেরে এলাকায় জানাজানি হতেই শোরগোল পড়ে যায় আরামবাগ শহর জুড়ে ।

জানা গিয়ছে জমির মালিক, একটি জেসিবিকে নিয়ে এনে সেই জায়গাতে যাবতীয় যা কিছু দোকানপাট ,বাড়িঘর থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসপত্র স্থায়ীভাবে নির্মাণ করেছিল সমস্ত কিছুই জেসিবি দিয়ে ভেঙে ফেলেন। দীর্ঘ জটিলতা কাটিয়ে জমির প্রকৃত মালিক তার নিজের জমি ফিরে পেতে চলেছে।

ঘটনা প্রসঙ্গে জানা যায়, যার জায়গা যিনি প্রকৃত মালিক তিনি ১৯৬০ সালে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ।

তখন থেকেই চলছিল আইনি লড়াই। আইনি জটিলতায় পদে পদে বারবার বাধা সৃষ্টি হয়েছিল তারপর তিনি এই বিষয়টি ১৯৮৫ সালে আবারও আদালত জানান। তার পরবর্তীতে আদালতে অর্ডারের দেয়, যিনি প্রকৃত মালিক তিনি ফিরে পাবেন। এরকমটাই রায় দেয় বিচারপতি।

কার্যত পরবর্তীতে ১৯৮৫ থেকে শুরু করে ২০২৫ সালে এসে বারংবার সেই জায়গা নিজস্ব অধীনে দখল করতে গেলেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টির লোক তাদেরকে সাহায্য করেছিল বলে অভিযোগ বস্তির বাসিন্দাদের। তারপর আজকে একেবারে কোটের অর্ডারের নোটিশ নিয়ে, আরামবাগ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনীর সহ আরামবাগ মহকুমা আদালতের বিচারপতি কে নিয়ে বস্তি উচ্ছেদ করতে আসে যিনি প্রকৃত মালিক । অবশেষে যার জায়গা তিনিই এবারে ফিরে পেতে চলেছে ।

পাশাপাশি বসবাসকারী কিছু মহিলার দাবি উনাদেরকে পুনর্বাসন দেওয়া হোক । ওনারা বহু বছর ধরে এখানে তে স্থায়ী ভাবে বসতি স্থাপন করে রয়েছিল । এছাড়াও যাদের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে তারা জানান, তাদেরকে কোনো রকম আইনি নোটিশ দেওয়া হয়নি আগে থেকে । দেখতে চাওয়া হলেও ,দেখতে দেওয়া হয়নি । তারা আরও বলেন আপনারা কোর্টে যেতে পারেন আমার নামে কেস করতে পারেন। কিন্তু আজকে উচ্ছেদ হবে।

এছাড়াও যাদের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, তাদের মধ্যে আরও এক মহিলা জানাই মাথার ওপরে ছাদটাই সরে গেল । আমরা বিগত ৫০ বছর ধরে আছি এই জায়গায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে । আমাদেরকে কোন রকম ভাবে আইনি নোটিশ দেয়া হয়নি এবং দেখানো পর্যন্ত হয়নি। এর আগে একবার ভাঙতে এসেছিল, তখন তাদের কাছে কোনরকম কোর্টের অর্ডার ছিল না । সেই মোতাবিক তারা পুলিশ নিয়ে তাদের দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। তখন স্থানীয় মানুষেরা সাহায্য করেছিল, কিন্তু আজকে হঠাৎই বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এসে, জেসিবি নিয়ে বাড়িঘর ভাঙতে শুরু করল পুলিশ । শুধুমাত্র একবারই বলল তোমাদের জিনিসপত্র বাইরে বার করে দাও। বাড়ি ভাঙা হবে কিছুক্ষণের মধ্যে ।

বস্তিবাসীদের কথায় হঠাৎ করেই তাদের উচ্ছেদ করে দেওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। তাঁরা জানিয়েছন, তিল তিল করে তারা এই জমিতে তাদের বাড়িগুলি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু এখন সব হারিয়ে বস্তির বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, 'আজকে মাথার উপর ছাদ সরে গেল । আমার সন্তানেরা কোথায় আশ্রয় নেবে, কোথায় যাবে ,কিছুই আর বুঝে উঠতে পারছি না । এভাবেই পড়াশোনাটা শেষ হয়ে যাবে বাচ্চাদের । তার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও আজকে নিঃস্ব হয়ে গেলাম , ভগমান বোধহয় এটাই চেয়েছিল। '