সংক্ষিপ্ত

উত্তরবঙ্গের বুকে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা। শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পিছন থেকে ধাক্কা মালগাড়ির। আর এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের চালক আশিস দে।

উত্তরবঙ্গের বুকে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা। শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পিছন থেকে ধাক্কা মালগাড়ির। আর এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড আশিস দে।

সোমবার সকালে, রাঙাপানি স্টেশন পেরোনোর ঠিক পরেই ফাঁসিদেওয়ায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস (Kanchanjunga Express)। এখনও অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী, মোট ৯ জন এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৪১ জন আহত। একই লাইনে দুটি ট্রেন চলে আসার ফলেই এই দুর্ঘটনা। একটি মালগাড়ি পিছন থেকে এসে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। কার্যত, মালগাড়ির ইঞ্জিনের ধাক্কায় কাঞ্চনজঙ্ঘার একাধিক বগি ওপরে উঠে যায়। তার নিচ দিয়ে সজোরে ঢুকে যায় মালগাড়ির ইঞ্জিনটি।

যার ফলেই এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা (Kanchanjunga Express Accident)। আর এই দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ডও। তাঁর নাম আশিস দে। শেষ উইকএন্ডে পরিবারের সঙ্গে দারুণ সময় কাটিয়েছিলেন আশিসবাবু। আর সোমবার থেকে ডিউটি জয়েন করার কথা ছিল। তবে তাঁর ডিউটি ছিল আসলে শতাব্দী এক্সপ্রেসে (Shatabdi Express)। কিন্তু নিজের কাজের জন্যই সেই ডিউটি বদলেছিলেন আশিসবাবু। আর ভাগ্যের কি পরিহাস। ডিউটি বদলে দায়িত্ব পেয়েছিলেন এই অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের(Kanchanjunga Express)।

শিলিগুড়ি থেকে গার্ড (Guard) হিসেবে চড়েন আশিস দে। কেউই যেন মেনে নিতে পারছেন না যে, বছর পঞ্চাশের এক মনখোলা এবং তরতাজা যুবক আশিস আর নেই। কিন্তু এ এক নিষ্ঠুর সত্যি। শিলিগুড়ি (Siliguri) পুরসভার ৩২ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত সুকান্ত পল্লীর বাসিন্দা ছিলেন আশিস দে। মূলত, শতাব্দী এক্সপ্রেসের গার্ড হিসেবেই তাঁর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিজের দরকারেই ডিউটি বদল করে সোমবার, সকালে শিয়ালদহগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড হিসেবে সেই ট্রেনে ওঠেন তিনি।

তার ঠিক দেড় ঘণ্টা পরই, ফাঁসিদেওয়ার কাছে রাঙাপানি এবং নিজবাড়ির মাঝে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। ট্রেনটির পিছনে এসে সজোরে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। গার্ডের কামরা সহ দুটি বগি একেবারে দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ট্রেনের গার্ড আশিস দের। শুধু মৃত্যু নয়, তাঁর দেহ পাকিয়ে গিয়ে প্রায় কুণ্ডলীর আকার ধারণ করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এই ঘটনার পর আশিসবাবুর স্ত্রী দীপিকা দে কান্না চেপে রাখতে পারেননি। বললেন, “বহুদিন পর রবিবার রাতে আমরা গান গাইতে বসেছিলাম দুজনে। একের পর এক ভালোবাসার গান গাইলাম। নিজে কোনওদিন রান্না করত না ও। কিন্তু রবিবার, নিজের হাতেই ডিম ভাজল। আর আজ সব শেষ!”

দুর্ঘটনার পর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে সবার প্রথম ঢুকল আশিসবাবুর নিথর দেহ। খবর পেয়ে সেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেই ভিড় জমাতে শুরু করেন তাঁর পরিচিতরা। কেউ কেউ বলেই ফেললেন, “আজ সকালেই বাজার করতে গিয়ে আমার সঙ্গে দেখা হল আশিসদার। সেই তাঁরই মৃতদেহ নিয়ে ফিরতে হবে? ভাবতে পারছি না।”

একটি দুর্ঘটনা, কেড়ে নিল শিলিগুড়ির আশিসকে।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।