হিন্দু ধর্ম অনুসারে, ৫১ টি শক্তিপীঠের একটি হল বাংলাদেশের যশোরেশ্বরী মন্দির। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফর-কে কেন্দ্র করে এই পীঠস্থান উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে। প্রধানমন্ত্রী এই সফরের ফলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এই মন্দিরটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী মোদী এখানকার ভক্তদের জন্য একটি কমিউনিটি হল নির্মাণের কথাও বলেছেন। ৪০০ বছরেরও প্রাচীন এই মন্দির সম্পর্কে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে, যা অনেকেরই অজানা।
আরও পড়ুন- দোল পূর্ণিমার পবিত্র তিথি কোন রাশির কেমন কাটবে, দেখে নিন আপনার রাশিফল
পৌরানিক কাহিনি অনুসারে, শিব যখন সতীর দেহ নিয়ে শোকের মর্মাহত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, তখন সতীদ্বয়ের পতন ঘটে শক্তিপাঠগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত এই মন্দিরটি শক্তিপীঠের মর্যাদা পেয়েছে। এ তো গেল পৌরানিক কাহিনির কথা তবে এই মন্দির সম্পর্কে ইতিহাস কী বলছে? ভারতের বেনাপোল এবং বাংলাদেশের খুলনার সীমান্তের নিকটে অবস্থিত যশোর বাংলা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য পরিচিত। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্বের বহু নিদর্শন রয়েছে। চঞ্চড়া রাজভরি, কালী মন্দির এবং গাজী কালু দরগাহ এমন কয়েকটি স্থান যেখানে অগনিত পর্যটকরা আসেন। এছাড়াও রাজা মুকুট রাইয়ের প্রাসাদ এবং নবাব মীর জুলমার কোঠিও এই নিদর্শনের মধ্যে আকর্ষণীয় কেন্দ্র ছিল।
আরও পড়ুন- হোলি উপলক্ষে রঙ্গোলিতে সেজে উঠছে বৃন্দাবন, প্রেম মন্দিরে শুরু হয়ে গিয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান
দেবী শক্তি পীঠ যশোরের শ্যামনগরের যশোরেশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত যা বৈচিত্র্যের সংস্কৃতিকে চিত্রিত করে। যেখানে সতীর পদ্ম ফুলের মতো বাম তালু পড়েছিল বলে মনে করা হয়। ডাঃ অলকা পান্ডের লেখা বই অনুসারে, প্রতাপ আদিত্যর মন্দিরটি নির্মিত হওয়ার পরে লক্ষ্মণ সেন এতে কিছু পরিবর্তন করেছিলেন। ১৯৭১ এর যুদ্ধের পর বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশে পরিণত হয়, এই সময়ে এই মন্দিরে প্রচুর নাশকতা ঘটেছিল, যার কারণে এর বহু পুরানো কাঠামো ও ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- 'আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা'য় মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী মোদী, বাংলা টুইটে কী জানালেন তিনি
এখানে সতীর বাম তালু পড়েছিল ফলে এই মন্দিরের আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় তাত্পর্য রয়েছে। মানুষ এখানে ভয়, যন্ত্রণা ও রোগ ইত্যাদির হাত থেকে মুক্তি পেতে আসছে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার মন্দিরে পুজা করা হয়ে থাকে, যাতে আশেপাশের অঞ্চলের লোকেরা উপস্থিত হন। প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে আসেন। ভক্তরা কেবল বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য স্থান থেকেও এখানে উপস্থিত হন মায়ের পুজোর জন্য। প্রতি বছর এই মন্দিরে নবরাত্রি উপলক্ষে বিশেষ পুজো এবং মেলার আয়োজন করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে বহু মানুষ এই মেলায় আসেন এবং নবরাত্রি উপলক্ষে এখানে বিশেষ নৈবেদ্য ও পুজো দেন। বিশেষত এই মেলার সময় দর্শনার্থীদের আগত সুবিধার কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশ সফরকালে এখানে একটি বহুমুখী কমিউনিটি হল নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।