কীভাবে হয়েছিল পিতৃপক্ষের সূচনা, জেনে নিন এর অজানা রহস্য

  • জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন
  • এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত
  • সর্বপিতৃ অমাবস্যা দিবসে সকল পূর্বপুরুষেরই শ্রাদ্ধ করা হয়
  • জেনে নিন পিতৃপক্ষের সূচনার অজানা রহস্য

deblina dey | Published : Aug 27, 2020 4:22 AM IST / Updated: Aug 27 2020, 11:16 AM IST

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম। তিনিই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় লীন হন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে; এবং এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সর্বপিতৃ অমাবস্যা দিবসে তিথির নিয়মের বাইরে সকল পূর্বপুরুষেরই শ্রাদ্ধ করা হয়। যাঁরা নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ করতে ভুলে যান, তারা এই দিন শ্রাদ্ধ করতে পারেন। এই দিন গয়ায় শ্রাদ্ধ করলে তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়। উল্লেখ্য, গয়ায় সমগ্র পিতৃপক্ষ জুড়ে মেলা চলে। বাংলায় মহালয়ার দিন দুর্গাপূজার সূচনা হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিন দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হন। মহালয়ার দিন অতি প্রত্যুষে চণ্ডীপাঠ করার রীতি রয়েছে। আশ্বিন শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে দৌহিত্র মাতামহের তর্পণ করেন।

 হিন্দু মহাকাব্য অনুযায়ী, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময় পূর্বপুরুষগণ পিতৃলোক পরিত্যাগ করে তাদের উত্তরপুরুষদের গৃহে অবস্থান করেন। এর পর সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে, তারা পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান। পিতৃগণের অবস্থানের প্রথম পক্ষে হিন্দুদের পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশ্যে তর্পণাদি করতে হয়।

বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাঁরা অপারগ, তারা সর্বপিতৃ অমাবস্যা পালন করে পিতৃদায় থেকে মুক্ত হতে পারেন। শর্মার মতে, শ্রাদ্ধ বংশের প্রধান ধর্মানুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ড ও জল প্রদান করা হয়, তাদের নাম উচ্চারণ করা হয় এবং গোত্রের পিতাকে স্মরণ করা হয়। এই কারণে একজন ব্যক্তির পক্ষে বংশের ছয় প্রজন্মের নাম স্মরণ রাখা সম্ভব হয় এবং এর ফলে বংশের বন্ধন দৃঢ় হয়।

পিতৃপক্ষের সূচনা এভাবেই ঘটেছিল:

দানভীর কর্ণ মহাভারতের যুদ্ধে মারা গেলে তাঁর আত্মা বেহেস্তে পৌঁছেছিল। সেখানে কর্ণকে নিয়মিত খাবারের বদলে খেতে সোনা ও গহনা দেওয়া হয়েছিল। এতে করে হতাশ হয়েছিলেন কর্ণ। তিনি ইন্দ্র দেবকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেছিলেন। ইন্দ্র তখন কর্ণকে বলেছিলেন যে আপনি সারা জীবন অন্যকে সোনার গহনা দান করেছেন। তবে এগুলি কখনও পূর্বপুরুষদের হাতে দেয় নি। কর্ণ উত্তর দিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কর্ণের কথা শোনার পরে, ভগবান ইন্দ্র তাকে ১৫ দিনের জন্য পৃথিবীতে ফিরে আসতে দিয়েছিলেন যাতে তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের জন্য খাদ্য দান করতে পারেন। এই ১৫ দিন পিতৃপক্ষ হিসাবে পরিচিত হয়।

Share this article
click me!