আক্ষরিক অর্থে মহালয়া থেকেই দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। হিন্দু ধর্মে মহালয়ার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, মহালয়া তিথি ও দেবীপক্ষের মাহাত্ম্য।
পূব আকাশে তখন ভোরের আলোর সবে একটা রেখা দেখা গিয়েছে। আর ঠিক সেই সময়ই প্রায় সব বাড়ি থেকেই ভেসে আসে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের (Birendra Krishna Bhadra) গলায়, 'আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর; ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।' বেশিরভাগ বাঙালির মহালয়ার দিনটা ঠিক এভাবেই শুরু হয়। আসলে এই দিনই পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে ও দেবীপক্ষের (Devi Paksha) সূচনা হয়। আর সেই সূচনা লগ্নই মহালয়া (Mahalaya) নামে পরিচিত। আক্ষরিক অর্থে মহালয়া থেকেই দুর্গাপুজোর (Durga Puja) সূচনা হয়। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। হিন্দু ধর্মে মহালয়ার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, মহালয়া তিথিটি ও দেবীপক্ষের মাহাত্ম্য।
মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। অনেকেই এই কথার নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কারও মতে মহালয়াকেই যেহেতু দুর্গাপুজোর সূচনা হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তাই দেবী দুর্গাই হলেন এই আশ্রয় বা আলয়। আবার কারও মতে, এই মহান আলয় হল পিতৃলোক। যেহেতু এটি পিতৃপক্ষের অবসান চিহ্নিত করে। পুরাণে এই দিনটিকে কেন্দ্র করে একাধিক গল্প রয়েছে। আর এই বিশেষ দিনই দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়।
আরও পড়ুন- শিকেয় কোভিড বিধি, মহালয়ায় মা দুর্গার চক্ষুদান দেখতে ভিড় উপচে পড়ল কুমোরটুলিতে
মনে করা হয়, দেবীর চক্ষুদানের মাধ্যমেই দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। আর সেই কারণেই রামায়ণ অনুসারে, রাবণ বসন্তকালে দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেন, যা বর্তমানে বাসন্তী পুজো নাম পরিচিত। শ্রীরামচন্দ্র পরবর্তীকালে শরৎকালে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেন, যা অকালবোধন নামে পরিচিত। এরপর থেকেই শারদীয়া দুর্গাপুজো চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আর মহালয়ার দিনকেই দুর্গাপুজোর সূচনা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। যার ফলে এই দিনই দেবীর চক্ষু দান করার নিয়ম রয়েছে।
আরও পড়ুন, Durga Puja 2021: 'শুভ মহালয়া', 'মা দুর্গাকে প্রণাম' জানিয়ে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা মোদী-মমতার
শাস্ত্রে বলা আছে, এই দিনই মহিষাসুর বধের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। আর মহিষাসুরের কবল থেকে দেবগণকে উদ্ধার করার লগ্নের সূচনা যেহেতু এখান থেকেই হচ্ছে তাই দেবী দুর্গাকেই মহান আলয় হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।
আগে রাজবাড়ি কিংবা জমিদার বাড়িতেই দুর্গাপুজো হত। রথের দিন কাঠামো পুজো হত এবং মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর দেবীর চক্ষুদান পর্ব হত। এরপর বদলে যায় সেই নিয়ম। যেহেতু মহালয়ার দিনই দেবীপক্ষের সূচনা হয় তাই প্রতিমার চোখ আঁকার চল শুরু হয় ওই দিন থেকেই।
আরও পড়ুন, Mahalaya: আজ মহালয়া, ভোর রাত থেকেই শুরু তর্পণ, কড়া নিরাপত্তা বাংলার ঘাটগুলিতে
বলা হয়, চক্ষুদানের পরই দেবীদুর্গার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর মহাসপ্তমীর সকালে শুদ্ধাচারে ডান হাতে কুশের অগ্রভাগ নিয়ে দেবী দুর্গাকে কাজল পরানো হয়। প্রথমে ত্রিনয়ন, তারপর বাম চক্ষু ও শেষে ডান চক্ষু আঁকা হয়। তবে শুধুমাত্র দুর্গাই নয়, তাঁর চার ছেলে মেয়ে-লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী ও কার্তিক সহ তাঁদের বাহনদেরও এভাবেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এছাড়া এই দিন পিতৃপুরুষরা মনুষ্যলোকের অনেক কাছাকাছি চলে আসেন। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার নির্দেশেই এই মিলন ক্ষেত্রটি তৈরি হয়েছিল। তাই এই দিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন অনেকেই। তর্পণ কথার অর্থ হল, যাতে অন্যের তৃপ্তি হয় সেই উদ্দেশ্যে জলদান। তর্পণ তাই শুধু পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যেই নয়, সর্বভূতের উদ্দেশেই করতে হয়।
আসলে মহালয়া নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। অনেক মত বিরোধও রয়েছে। আসলে মহালয়ার তর্পণের মধ্য দিয়েও সর্বভূতের সঙ্গে মানুষের একাত্মতার কথা বলা হয়েছে। আর বিষয়টিই মহলয়াকে সবথেকে বেশি সুন্দর করে তুলেছে।