ফোর্ডের গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করছিলেন, তাহলে জানুন যে ১০টি কারণে ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল এই সংস্থা

২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ফোর্ড গুজরাটের সানন্দে থাকা কারখানাকে পুরোপুরি বন্ধ করবে। ২০২২ সালের মধ্যে চেন্নাইয়ে থাকা কারখানাকে বন্ধ করবে তারা। এই কারখানায় গাড়ি অ্যাসেম্বল এবং ইঞ্জিন তৈরি করত ফোর্ড। ভারতে তাদের দুটো কারখানা থেকে বছরে ৪৪০,০০০ গাড়ি তৈরি করতে পারে এই মার্কিন সংস্থা। কিন্তু এই মুহূর্তে এর মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যবহার করছে।

এক বিশাল স্বপ্ন নিয়ে ভারতের বুকে ব্যবসা করতে এসেছিল ফোর্ড। মার্কিন এই গাড়ি তৈরি সংস্থার নাম জগতজোড়া খ্যাত। তাদের একাধিক ব্র্যা্ন্ডের গাড়ি ভারতে বিক্রি হয়েছে বিগত ২৫ বছর ধরে। বিশেষ করে স্মল-কার সেকশনে ফোর্ড ফিগো খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল একটি সময়ে। এছাড়াও সেমি স্পোর্টস-কার কাম লিটল এসইউভি-তে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ফোর্ডের ইকো-স্পোর্টস। এছাড়াও ফুল এসইউভি রেঞ্জে ফোর্ড এনডেভর একটি জনপ্রিয় নাম। বিশেষ করে তার ইনটেরিয়ার কমফোর্ট, রোবাস্ট স্ট্রাকচার এবং স্মুথ লং-ড্রাইভিং-এর জন্য এনডেভর আদর্শ বলেই সার্টিফিকেট পেয়ে এসেছে গাড়ি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। কিন্তু, এর সত্ত্বেও নাকি ভারতে সেভাবে মুনাফা অর্জন করতে পারেনি ফোর্ড। তাই মার্কিন এই গাড়ি তৈরির সংস্থার মূল মালিকদের সঙ্গে ভারতের আধ্যাত্মিকতার একটা যোগ থাকলেও এবং এই দেশের বুকে তাদের একাধিক সমাজকল্যাণ কর্মসূচি থাকলেও পৌরাণিক অ্যাখানমতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি-তে টিকতে ব্যর্থ হল ফোর্ড।  যে ১০টি কারণে ফোর্ড ভারত ছাড়ল তার নিম্নলিখিতরূপ- 

১। ২ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি- ২৫ বছর আগে ভারতে পা রাখে গাড়ি তৈরির সংস্থা ফোর্ড। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সংস্থার পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে গত ১০ বছরে এই সংস্থার ভারতে ২ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। গাড়ি বিক্রি করে ভারতের বাজার থেকে কোনও মুনাফাই নাকি অর্জন করতে পারেনি তারা। 
আরও পড়ুন- Ola Electric scooter - বাজারে এল 'ওলা'র প্রথম স্কুটার, মালিক কাছে এলে নিজেই বলে ওঠে 'হাই'

Latest Videos

২। মাত্র ২ শতাংশ বাজার- ২৫ বছরে ফোর্ড ভারতে মাত্র ২ শতাংশ বাজার ধরতে পেরেছিল। তাও ক্রমশ সেই অংশটুকুও আস্তে আস্তে হাতের বাইরে যাচ্ছিল ফোর্ডের। বোঝাই যাচ্ছে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের বাজারে গাড়ি ক্রেতাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করলেও তাতে সফল হয়নি ফোর্ড। 

৩।  ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন ব্র্যান্ডের গাড়িতে দুর্বলের তকমা- এমনিতেই ভারতের গাড়ি বাজারে একটি ধুকতে থাকা সংস্থায় পরিণত হয়েছিল ফোর্ড। এরমধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া যে তারা যে নতুন ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো বাজারে ছেড়েছিল তার কোয়ালিটি রিপোর্ট লেগেটিভ এসেছে। এমনিতেই ফোর্ডের কয়েকটি সেগমেন্টের গাড়ির উপরে ওভার-প্রাইসড-এর তকমা ছিল। কোয়ালিটি রিপোর্টের পরীক্ষায় ফোর্ডের গাড়িগুলি-র না উত্তীর্ণ তহতে পারাটা এক অন্য বিপদের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। 

৪। ফোর্ড ইন্ডিয়াকে বাঁচানোর রাস্তা ছিল না- ফোর্ড ইন্ডিয়ার হেড অনুরাগ মেহরোত্রা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, তারা ফোর্ড ইন্ডিয়াকে রক্ষা করার সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এরপরেও তারা এমন কোনও রাস্তা খুঁজে বের করতে পারেননি যেটা ফোর্ড ইন্ডিয়াপ অস্তিত্বকে রক্ষা করতে সমর্থ হয় এবং লাভদায়ক হিসাবে সংস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়। 

৫। ইলেক্ট্রিক কার মেকিং এবং নিত্য-নতুন প্রযুক্তির খরচ- ভারতে ব্যবসা গোটানোর আগে ব্রাজিলেও তাদের সংস্থার পাততাড়ি গুটিয়েছে ফোর্ড। সূত্রের খবর যে দীর্ঘদিন ধরেই ফোর্ড আর বিপুল আর্থিক ক্ষতির বহর গুনতে পারছিল না। বিশেষ করে ইলেক্ট্রিক কার তৈরিতে সংস্থাকে প্রচুর অর্থ ঢালতে হচ্ছে। কারণ এটাই ফিউচার অব দ্য কার-এর জ্বালানী সাশ্রয় ও পরিবেশ বান্ধবের ক্ষেত্রে একটা বড় পদক্ষেপ। এর সঙ্গে বর্তমানে যে প্রযুক্তি মেনে বেশি গাড়ি তৈরি হয় সেখানেও নিত্য-নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগে খরচ বাড়ছে। ফলে, আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন দিশায়া সংস্থাকে টেনে নিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। 

৬। মেকিং ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন- ফোর্ডের আগে গত কয়েক বছরে ভারত থেকে ব্যবসা গুটিয়েছে হার্লে ডেভিডসন ও জেনারেল মোটরস। এদের সকলেরই যুক্তি ছিল যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেভাবে মেকিং ইন্ডিয়া ক্যাম্পেন করেছেন তাতে ভারতীয়রা বেশি করে দেশীয় সংস্থার তৈরি করা গাড়ির দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে বিদেশি সংস্থা প্রতিযোগিতায় দেশীয় সংস্থার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না। ফোর্ডের অন্দরের খবর যে তারা এই মেকিং ইন্ডিয়ার ক্যাম্পেনে কার্যত হতাশ হয়ে পড়ে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে যা অনেকটা প্রভাবিত করে। 

৭। ভারতে থমকে যাওয়া গাড়ি শিল্প- ফোর্ড ইন্ডিয়ার প্রধান অনুরাগ মেহরোত্রা  জানিয়েছেন, যেভাবে গত কয়েক বছর ধরে ভারতে গাড়ি শিল্পের বৃদ্ধির হারে ধাক্কা লেগেছে এবং পুরো পরিস্থিতি স্থবির হয়ে গিয়েছে তাতে এই সিদ্ধান্ত না নেওয়া ছাড়া কোনও গতি ছিল না। 

৮। ভারতে গাড়ি শিল্পের আশানুরূপ বৃদ্ধি না হওয়া- বিভিন্ন সমীক্ষায় বারবার দাবি করা হয়েছিল যে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের গাড়ি শিল্প বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ বাজার হিসাবে স্থান করে নিতে চলেছে। আমেরিকা ও চিনের গাড়ির শিল্পের পরই ভারত হয়ে উঠবে গাড়ি কেনা-বেচায় বিশ্বের তৃতীয় স্থানাধিকারী। কারণ, ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের গাড়ির বিক্রির হার ৫০ লক্ষে পৌঁছানোর কথা ছিল। অথচ ২০২০ সালের মধ্যে ভারত বার্ষিকভাবে শুধুমাত্র ৩০ লক্ষ গাড়ি বিক্রির খাতায় নাম লেখাতে পেরেছে। যা ইউরোপ এবং জাপানে বিক্রি হওয়া গাড়ির সংখ্যা থেকে অনেকটাই কম। 

৯। স্মল কারে ভারতের বাজারে সুজুকি ও হুন্ডাই-এর আধিপত্য- ভারতের বাজারে সবচেয়ে বড় হল স্মল-কার মার্কেট। আর এই বাজারের অধিকাংশটাই নিয়ন্ত্রণ করে জাপানের সুজকি তাদের মারুতি সুজুকি সংস্থার নামে এবং অন্যটি হল দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্ডাই। স্মল কার সেগমেন্টে বিক্রির তালিকায় থাকা  সেরা ১০টি গাড়ির মধ্যে ৭টি গাড়ি মারুতি সুজুকি-র। আর বাকি তিনটি গাড়ি হুন্ডাই-এর। 

১০। ফোর্ডের লক্ষ্য ইলেক্ট্রিক কার মেকিং-এ বিনিয়োগ বাড়ানো- ২০৩০ সালের মধ্যে ইলেক্ট্রিক কার মেকিং-এ ফোর্ড তাদের বিনিয়োগ ৩০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাবে। সুতরাং এর জন্য অর্থের জোগান তৈরি করতে অলাভদায়ক সংস্থাগুলিকে যে বন্ধ করা হবে তার নীতিগত সিদ্ধান্ত কয়েক বছর আগেই নিয়ে নিয়েছিল ফোর্ড। 

১১। ফোর্ডের প্রায়োরিটি লিস্টে নাম নেই ভারতের- গত বছর ফোর্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পরই চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার জিম ফারলে পরিস্কার করে দিয়েছিলেন যে কোনওভাবেই তারা বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ভারতে ব্যবসার বৃদ্ধি নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। 

১২। মহিন্দার সঙ্গে চুক্তি ভেস্তে যায়- শেষরক্ষা হিসাবে মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কম দামি গাড়ির একটা চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল ফোর্ডের। কিন্তু সেটাও ভেস্তে যায়। 

ধাপে ধাপে কীভাবে ভারতে তাদের ব্যবসা বন্ধ করবে ফোর্ড- 
২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ফোর্ড গুজরাটের সানন্দে থাকা কারখানাকে পুরোপুরি বন্ধ করবে। ২০২২ সালের মধ্যে চেন্নাইয়ে থাকা কারখানাকে বন্ধ করবে তারা। এই কারখানায় গাড়ি অ্যাসেম্বল এবং ইঞ্জিন তৈরি করত ফোর্ড। ভারতে তাদের দুটো কারখানা থেকে বছরে ৪৪০,০০০ গাড়ি তৈরি করতে পারে এই মার্কিন সংস্থা। কিন্তু এই মুহূর্তে এর মাত্র ২৫ শতাংশ ব্যবহার করছে। যদিও ফোর্ড এখন ভারতে গাড়ি বিক্রি করবে। এর জন্য তারা ভারতের বাইরে থাকা অন্য দেশের প্ল্যান্ট থেকে গাড়ি ইমপোর্ট করবে তারা। এমনকী আপাতত ডিলারর্স এবং ক্রেতাদের পরিষেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে। ফোর্ড ভারতে ব্যবসা গোটানোয় অন্তত ৪০০০ লোক কাজ হারাবেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। 
আরও পড়ুন- পরিবেশ সুরক্ষায় জোর রয়্যাল এনফিল্ডের, জিটি ৬৫০ মডেলের বাইক শুধু তেলে নয় চলবে বিদ্যুতেও

ফোর্ড যদিও বেশকিছু সম্ভাবনা এখনও খতিয়ে দেখছে। যেমন- পার্টনারশিপের মাধ্যমে ভারতে তাদের সংস্থাকে বাঁচিয়ে রাখা, প্ল্যাটফর্ম শেয়ারিং, কনট্র্যাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এবং কারখানাগুলো পুরোপুরি বিক্রি করে দেওয়া। তবে, সানন্দে তাদের ইঞ্জিন তৈরির কারখানা চালু রাখবে ফোর্ড। কারণ ফোর্ড তাদের রেনগার ট্রাকের ইঞ্জিন এই প্ল্যান্ট থেকেই তৈরি করে এবং তা বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তে ফোর্ডের বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করা হয়। 
আরও পড়ুন- ই-স্কুটার কিনবেন বলে ঠিক করেছেন, কেনার সময় এগুলি অবশ্যই মাথায় রাখুন

ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে ফোর্ডের এই সিদ্ধান্ত ভারতের গাড়ি শিল্পের পক্ষে এক বড় ধাক্কা। এটা অত্যন্ত প্রভাব ফেলার মতো খবর বলে তারা জানিয়েছে। দেশজুড়ে ফোর্ডের ৪০০ কার আউটলেট রয়েছে। যার পিছনে ডিলার্সদের ২৭২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়ে রয়েছে। এমনকী, পাঁচ মাস আগেও নতুন ডিলার্স নিয়েছে ফোর্ড। এমন সিদ্ধান্ত যদি নেওয়ারই ছিল তাহলে নতুন ডিলার্স কেন নেওয়া হল। এমন প্রশ্নও বিবৃতিতে তুলে ধরেছে  ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন। 



 

Share this article
click me!

Latest Videos

Narendra Modi : কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কে জোর ভারতের, দেখুন কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
'উল্টো ঝুলিয়ে সোজা করব', এগরার জনসভায় এসে কাকে বললেন Suvendu Adhikari ?
অনলাইনে পুজোর দেওয়ার নামে প্রতারণা! ঘাড় ধরে নিয়ে গেল পুলিশ | Hooghly News Today
'একটা আস্ত অশিক্ষিত...গোটা রাজ্যটাই জঙ্গিদের হাতে' কড়া বার্তা শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari
লজ্জা মমতার! জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্য এই বাংলা!| Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari