টিপ পরার জন্য ঢাকায় এক শিক্ষিকাকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশ।
'টিপ পরা আমার স্বাধীনতা', ফেসবুকে এই কথা লিখে নিজেদের টিপ পরা ছবি দিচ্ছেন মহিলারা। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন পুরুষরাও। রবিবার ফেসবুকের বাইরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ সমাবেশ করলেন সেই দেশের মহিলা অধিকার কর্মীরা। আর এই প্রতিবাদ আন্দোলনের মূলে রয়েছে ঢাকার রাস্তায়, এক বেসরকারি কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের লেকচারার লতা সমাদ্দারের হেনস্থা। তাঁর অভিযোগ, কপালে টিপ পরার জন্য তাঁকে কদর্য ভাষায় গালাগাল করেছে এক পুলিশ কর্মী। আর এই নিয়েই এখন উত্তাল বাংলাদেশ।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার সকালে। লতা সমাদ্দার জানিয়েছেন, কলেজে যাওয়ার পথে পুলিশের পোশাক পরা লম্বা দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি প্রথমে তাঁকে দেখে বলে ওঠে 'টিপ পরছোস কেন'। তারপরই অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে শুরু করে। একটি বাইকের উপর সে লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে বসে ছিল। লেকচারারের বলেও অভিযোগ, এরপর তাঁর পায়ের পাতার উপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে গিয়েছিল ওই ব্যক্তি। এই বিষয়ে ঢাকার শের-ই-বাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। লতা সমাজ্জার আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তাঁকে পুরুষদের বাজে কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে এই আচরণ তিনি আশা করেননি।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই শনিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছিল সোশ্য়াল মিডিয়ায় প্রতিবাদ। রবিবার তা ঢাকার রাস্তায়, এমনকী বাংলাদেশের সংসদেও পৌঁছে গিয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বলেছে, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রে এই ঘটনা উদ্বেগজনক। ঢাকার রাস্তায় আন্দোলনকারীদের দাবি, লতা সমাদ্দারের ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটাকে ধর্মান্ধ ও নারী স্বাধীনতা বিরোধীদের নিরবচ্ছিন্ন ও এক গভীর ষড়যন্ত্র বলেই দাবি করছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে দেশে অসহিষ্ণুতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
এদিন, বাংলাদেশ সংসদে এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ তথা অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাও। বাংলাদেশের সংবিধানে বা কোনও আইনে মহিলাদের টিপ পরার বিষয়ে কিছু লেখা নেই জানিয়ে তিনি মহিলাদের টিপ পরার বিষয়ে সওয়াল করেন। একই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলারক্ষার দায়িত্ব যাদের, তাদেরই একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠাটা সকলের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বলেন তিনি। তবে, ঘটনাটিকে তিনি 'ইভ টিজিং' বলেছেন। লতা সমাদ্দার নিজে অবশ্য তা মনে করছেন না। তাঁর মতে, এটা ওই পুলিশ কর্মীর মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক মনোবৃত্তির পরিচয়।