সুচরিতা দে, প্রতিনিধি-- শব্দ ভেঙে শব্দ তৈরি করা। সাহিত্যে এমন কাজকর্ম প্রায়শই শোনা যায়। কিন্তু, যে মানুষটি-র নশ্বরদেহ বিলিন হয়ে গিয়েছে তিন দশকেরও বেশি সময় আগে, তিনি আবার কীভাবে সশরীরে ফিরতে পারেন অভিনয়ে। আর সেই ব্যক্তিটির নাম যদি হয় উত্তম কুমার! তাহলে তো প্রশ্ন জাগবেই! উত্তর খোঁজারও চেষ্টা চলবে। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে টাইম মেশিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছেন। মাঝেমাঝেই আবার বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সভ্যতার এমনকিছু ফর্মেশন দেখানো হচ্ছে, সেখানে বলা হচ্ছে আমরা যে সময়টাতে বাস করছি তার আশপাশ দিয়ে আরও কিছু সময় বয়ে যাচ্ছে। সেটা একটা আলাদা জগৎ। আলাদা দুনিয়া। সেখানে সকলের প্রবেশাধিকার নেই। মাঝে-মাঝে কিছু জন সেই সব দুনিয়াতে প্রবেশের অধিকার পান। এমনকী, এই সব ওয়েব সিরিজে আবার এমন জিনিসও দেখানো হচ্ছে এমন এক চরিত্র যিনি একটা দুনিয়ায় মৃত বলে গণ্য হয়েছেন, তিনি আবার একটি প্যারালাল সময়ে দিব্যি খোশমেজাজে পরিবার নিয়ে সংসার করে চলেছেন। কিন্তু, এমন সব ভাবনার এখনও কোনও বাস্তবতা তৈরি হয়নি। তাহলে মহানায়ক সশরীরে ফিরছেন কী করে? তাও আবার বাংলা অভিনয়ের জগতে। আসলে রহস্য ভেদটা হল অবশেষে।
প্রথমে আমরা বলেছিলাম শব্দ ভেঙে শব্দ তৈরি-র কথা। ঠিক- একই ভাবে মহানায়কের অভিনীত ছবিগুলোকে ভেঙে ভেঙে সব টুকরো করে ফেলা হচ্ছে। এবার মহানয়কের অভিনীত বিভিন্ন সেই সব ছবির টুকরোগুলোকে একটা গল্পের আকারে জুডে জুড়ে তৈরি হচ্ছে এক নতুন ছবি। নতুন গল্প। যেখানে নায়ক উত্তম কুমার। আর এভাবেই বাঙালির প্রয়াত মহানায়ককে ফের পর্দায় নতুন কাস্টার হিসাবে সামনে নিয়ে আসছে ক্যামেলিয়া ফিল্মস। আর ছবি ভেঙে নতুন ছবি গড়ার এই শৈলী-র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ছবির নামও ইতিমধ্যে ঘোষিত- 'অতি উত্তম'। কিন্তু উত্তম কুমারের অধিকাংশ ছবির স্বত্ব অ্যাঞ্জেল ডিজিটাল-এর কাছে। আর সেই কারণেই ক্যামেলিয়া ফিল্মসকে অতি উত্তম তৈরি-তে যাবতীয় সাহায্য করছে তারা। এই মুহূর্তে সিনেমার রিলের ডিজিটাল রেস্টোরেশন করছে অ্যাঞ্জেল ডিজিটাল। অতি উত্তম তৈরিতে এই ডিজিটাল রেস্টোরেশনের একটা ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। সেই সব ডিজিটাল রেস্টোরেশনের কয়েক ঝলক এখানে রয়েছে সিনেমাপ্রেমিদের জন্য। যা অ্যাঞ্জেল ডিজিটালের সৌজন্যে পাওয়া গিয়েছে। চার দশকের বাংলা ছবির ৯০ শতাংশ স্বত্ব অ্যাঞ্জেলের কাছে। ফলে ডিজিটাল রেস্টোরেশনে যে এক রাজসূয় যজ্ঞ চলছে তাতে সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন- 'আমায় আর বকবে না কিন্তু', স্বাতীলেখা প্রয়াণে স্মৃতির ভাণ্ডার উজার করলেন শিবপ্রসাদ
অ্যাঞ্জেল ডিজিটালের মালিকানা তাতিয়া পরিবার। বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই পরিবারের নাম।বর্তমান সময়ে যারা অ্যাঞ্জেলের যাত্রাপথকে ডিজিটাল দুনিয়াতেও টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজে সমানভাবে শরিক হয়েছে তাঁদের মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য অভয় তাতিয়া, আকাশ তাতিয়া, নিরজ তাতিয়া, বিকাশ তাতিয়া ও সিদ্ধার্থ তাতিয়া। তাতিয়া পরিবারের কাছে থাকা অধিকাংশ বাংলা ছবি সাদা-কালোয় শ্যুট করা। তাই সেগুলোকে ডিজিটাল রেস্টোরেশন করাতে হচ্ছে। যা অত্যন্ত ব্যয় এবং সময় সাপেক্ষ।
ইতিমধ্যেই অ্যাঞ্জেল তাদের ক্লিক নামে একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম-এর আত্মপ্রকাশও ঘটিয়েছেন। যেখানে পুরনো দিনের অসংখ্য বাংলা ছবি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন সিনেমাপ্রেমীরা। এছাড়াও বেশকিছু ওয়েব সিরিজ-ও ক্লিক-এর প্ল্যাটফর্মে দেখা যাচ্ছে। অ্যাঞ্জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা নতুন আঙ্গিকে ওয়েব সিরিজ-গুলোকে তৈরি করছেন। এছাড়াও ওরিজিনাল ছবি, ছোটদের জন্য অ্যানিমেশন, অডিও স্টোরি-ও দেখা যাচ্ছে ওই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। 'চিকফ্লিক' , ' প্রতিবিম্ব', 'ড্রিম বুটিক ', ' জিঘাংসা', 'এভাবেই গল্প হোক', রূপকথার রেডিও-র মতো ওয়েব সিরিজ বেশ নাম করেছে অ্যাঞ্জেলের ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। এখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনীত একমাত্র ওয়েব সিরিজ 'নেক্সট ' দেখানো শুরু হয়েছে।
এর বাইরে অ্যাঞ্জেল ডিজিটাল তাদের ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য আরও বেশকিছু নতুন ছবি ও ওয়েব সিরিজ এর কাজ শুরু হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- অভিনেতা সমদর্শী দত্ত র প্রথম পরিচালিত ছবি 'গাঙ্গুলিস ওয়েডস গুহোস' এবং সৌপ্তিক চক্রবর্তীর পরিচালনায় 'লাভ গেমস'। সুব্রত গুহ রায়-এর ' টাকি টেলস'। সন্দীপ সরকার-এর 'অন্তর্দ্বন্দ'। পরিচালক অঞ্জন দত্ত ও রাজা চন্দ- তাঁদের দুটি ছবির কাজ ক্লিক-এর সঙ্গে শুরু করতে চলেছেন। নর্থ আমেরিকার বেঙ্গলি কনফারেন্সে-র অফিসিয়াল পার্টনার হয়েছে অ্যাঞ্জেল। এখানে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবর্ষ ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত র স্মরণে কয়েকটি ডিজিটাল সংরক্ষিত ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করেছে তাঁরা।