'সিনেমায় অভিনয়ের মাত্রাটা শিখেছিলাম বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর হাত ধরে', আড্ডায় অকপট সুব্রত দত্ত

  • বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর হাত ধরেই উত্তরা সিনেমাতে অভিনয়ের হাতেখড়ি সুব্রত দত্তর
  • বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত কে হারিয়ে স্মৃতির পাতা থেকে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার অভিনেতার
  • অভিনয় থেকে সংলাপ বলার ধরন সবটাই শিখিয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
  • বুদ্ধদেব  দাশগুপ্তর সঙ্গে কাজ করে  নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয় সুব্রতর

পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত র হাত ধরেই 'উত্তরা'   সিনেমাতে অভিনয়ের সূচনা করেছিলেন অভিনেতা সুব্রত দত্ত।  আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বিভিন্ন ভাষার সিনেমা থেকে  সিরিয়াল , ওয়েব সিরিজ  থেকে মঞ্চ- নাটক সব জায়গাতেই নিজের ছাপ রেখেছেন তিনি। সম্প্রতি পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-কে হারিয়ে স্মৃতির পাতা থেকে সেই প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন এশিয়ানেট  নিউজ  বাংলার পাঠকদের সঙ্গে। মুম্বই থেকে মুঠোফোন-এ  একান্ত সাক্ষাৎকার-এ তাঁর সঙ্গে কথা বললেন প্রতিনিধি সুচরিতা দে।

 

Latest Videos

 

আরও পড়ুন-খুন নাকি আত্মহত্যা, ধোঁয়াশা মৃত্যুরহস্য, সুশান্তের মৃত্যুবার্ষিকীতে ফিরে দেখা অভিশপ্ত ১৪ জুন...

আরও পড়ুন-নুসরতের পর 'Baby Bump' নিয়ে ছবিতে হট পোজ শ্রাবন্তীর, দীর্ঘদিন পর শীঘ্রই মা হচ্ছেন নায়িকা...

আরও পড়ুন-দাগী আসামীরাই সঙ্গী, বদ্ধ কুটুরিতেই ঠাঁই হয়েছিল রিয়ার, আবারও যেতে হবে না তো 'বাইকুল্লা' জেলে...


এশিয়ানেট নিউজ বাংলা: খুব সম্প্রতি পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-কে হারিয়ে স্মৃতির  পাতায় কোন ঘটনাগুলো উঠে আসছে ?কতটা প্রভাব পড়েছিল আগামী দিনে কাজে?

সুব্রত দত্ত: দেখো থিয়েটারের অভিনয় আর সিনেমার অভিনয় একদম অন্যরকম। আর তখন ছিল রিলের যুগ, অসীম দাস ক্যামেরা ম্যান ছিলেন। তখন আমি সত্যিই জানতাম না যে সিনেমার জন্য কতটা কম বা লিমিটেড অভিনয় করতে হয়। জেসচার,পসচার, সংলাপ বলার ধরন সব শিখিয়েছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত । প্রথম দিনের প্রথম শট্ আজও মনে আছে আমার। ট্রেনটা যাবে তাপস পাল একটা ফ্ল্যাট দেখাবেন (আজ উনিও নেই)। সেখানে আমাকে একটা ছোট্ট দুই লাইনের মত ডায়লগ বলতে হবে। কিন্তু সেটা কিছুতেই ওকে হচ্ছিল না। আমিও বুঝতেই পারছি না কেন এমন হচ্ছিল। তখন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পান চিবোতে চিবোতে  আমার কানের কাছে এসে বললেন "দেখ এটা ছবি পর্দায় তোমাকে অনেক বড় দেখাবে। তাই এখানে তুমি যতো কম করবে ততোই রিয়ালেস্টিক মনে হবে।" আমার মনে ওই কথাটাই গেঁথে গেছে। আসলে আমি মঞ্চের অভিনয় জানতাম, মানে বড়ো হাতে 'এ' লিখতে জানতাম, মানে ক্যাপিটাল 'এ'। উনি আমায় স্মল  'এ' লিখতে শেখালেন। এই জন্য আমি কোনওদিন দাদাকে ভুলতে পারবো না। ভোর ৫টা ৪৫ মানে ম্যাজিক আওয়াজ শ্যুট করতাম, সেই সময়ে উনি যা শিখিয়েছেন মনে থেকে গিয়েছে। যদিও পরবর্তি সময়ে কাজ করা আর হয়নি।

এশিয়ানেট নিউজ বাংলা: কেন আর কাজ করেন নি?

সুব্রত দত্ত: কারণ সময় ম্যাচ করেনি। উনি অনেকবার ডেকেছিলেন। "আনোয়ার কি আজব কিস্যা" ছবির একটি চরিত্রের জন্য নিজে ফোন করেছিলেন , কিন্ত সেই সময়ে আমি বম্বেতে রাম গোপাল বর্মার সঙ্গে 'রক্তচরিত্র করছি, তাই সময় দিতে পারিনি। আসলে দাদা টানা ১৫ দিন ধরে শ্যুট করতেন সময় নিয়ে। আমিও নানা কাজে ব্যস্ততার সময়টাই ম্যাচ করেনি।

শিয়ানেট নিউজ বাংলা:   এই যে কাজ করতে না পারা ,খারাপ লাগা আছ?

সুব্রত দত্ত: দেখ খারাপ তো লাগেই। উনি আমার প্রথম পরিচালক।  উত্তরা-তে প্রথম ক্যামেরার সামনে আসি। তার আগে আমি কোনও দিন শ্যুটিং-ই দেখিনি। যখন দাদা ডেকেছে আমি অন্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম হয়তো। এমনিতে যোগাযোগ তো ছিলই।   দাদা বম্বে এলে  রোজই দেখা হতো। দিল্লিতে উত্তরা-র জন্য প্রথমবার জাতীয় পুরস্কার নিতে এসেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। আমি নিজে ওর সঙ্গে ছিলাম। এয়ারপোর্ট পৌঁছে দিয়েছিলাম। ওর চলে যাওয়ার পর সেই কথাই মনে পড়ছে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ছিলেন লিভিং লেজেন্ট। যার ছবি নিয়ে দেশে বিদেশে ফেস্টিভ্যাল  হতো। সত্যজিৎ রায়,  ঋত্বিক ঘটক,মৃণাল সেন এর পর তো বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত র ছবি  নিয়েই বিদেশে চর্চা হয়।


 

এশিয়ানেট নিউজ বাংলা: তোমার কাজে ওর প্রভাব কতোটা ছিল?

সুব্রত দত্ত:  নিশ্চয়ই আছে। মঞ্চ থেকে পর্দায় আসার পর সিনেমাকে অ্যাডোপ্ট করতে আমার আড়াই বছর সময় লেগেছিল। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত সিনেমায় আমার হাতে খড়ি দিয়েছেন। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি। আমার মনে হয় উওরা না করলে আমার মাতৃভাষা বাংলায় এতো কাজ করতেই পারতাম না। 'বিবর ' ও অন্যান্য ছবি সিরিজ যেমন 'ব্যোমকেশ', ' শব্দজব্দ ' কতো কাজ করে ফেললাম। দেখ উনি আমায় চিনতে না। জয়শ্রী ওকে অ্যাসিস্ট্ করতে গিয়ে আমার কথা বলেছিল। উনি আমার নাটক দেখেই বলেছিলেন ,'তুমি কাজ করবে।

এশিয়ানেট নিউজ বাংলা: বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত র কোন ছবি ভাল লাগে? উওরা ছাড়া।

সুব্রত দত্ত:  ওর ছবি দেখে বড় হয়েছি ,ভালোলাগার লিস্ট বেশ বড়।  তবে 'বাগবাহাদুর' , 'তাহাদের কথা ', 'চরাচর' আমার বিশেষ পছন্দের।  কবিতার মতো যে ছবি হতে পারে সেটা আর পাওয়া যাবে না। উনি কলাকুশলীদের সবটা বলে দিলেন সহজ ভাবে কবিতার মত।  'উওরা' র সময় দেখেছি বলে দিতেন ক্যামেরার অসীম দাস-কে পিছনে পাথরটা পাহাড়ের উপর থেকে পড়ছে , এদিকে কুস্তি লড়াই চলছে, আর দূরে লং-শটে কিছু খর্বকায় মানুষ সারি করে চলেছে। জয়া শীল-কে এক-দুই-তিন করে অভিনয় করাতেন। নতুনদের খুবই যত্ন নিয়ে কাজ শিখিয়ে শট্ টা বের করে নিতেন। ছবি তৈরির অনেক ট্রিক ওর কাছেই শেখা।


 

এশিয়ানেট নিউজ বাংলা: সেলুলয়েড থেকে ডিজিটাল এ শ্যুট কতোটা সুবিধা হয়েছে?

সুব্রত দত্ত: বিজ্ঞানটাই বদলে গেছে।  শুধুমাত্র শ্যুট নয় , ডাবিং-এর আনেক সুবিধা হয়ে গিয়েছে। আগে ডাবিং-এর সময় সঠিক ফ্রেম এসে-ই ডায়লগ বলতে হতো। এক ফ্রেম সরে গেলে ম্যাচ করানো যেত না। এখন তো যেখান থেকে খুশি বলা যায়, টেনে নিয়ে ঠিক জায়গায় বসে যাবে। আমার প্রথম ছবি র ডাবিং-এর সময় বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নিজে ছিলেন।  আমি তো ' বিবর '-এ-ও সেলুলয়েডে কাজ করেছি। রিল যাতে নষ্ট  না হয়  বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হতো। 

এশিয়ানেট নিউজ বাংলা: করোনা আগামী দিনে সিনেমাকে কতোটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয়? ও টি টির জন্য কী সিনেমা হল এর অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে?

সুব্রত দত্ত:  যুগের সঙ্গে সবসময়ই তাল মিলিয়ে চলতে হয়। তবে আমার মনে হয় সহাবস্থান করবে। মাল্টিপ্লেক্স আসাতেও সবাই ভয় পেয়েছিল সিঙ্গল স্ক্রিন উঠে যাবে, তাতো হয়নি। আসলে প্রতিটি ছবির নিজের ভাষা আছে। কিছু ছবির কন্টেন্ট মোবাইলের জন্য, কিছু ছবি আবার বড় পর্দাতেই দেখতে হবে , না হলে সেই ম্যাজিক উপভোগ করা যাবে না।সময়ের সঙ্গে নিজেকে বদলাতে হয়, সেটাই সময়ের চাহিদা। আমাদের কাছে উজ্জ্বল উদাহরণ বচ্চন সাহেব। এই অতিমারির সময়ের ওটিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে, ফলে কাজের বাজারও অনেকটা ছ্ড়িয়েছে। সময় স্বাভাবিক হলে দেখবে নানা মাধ্যমের জন্য ছবি হচ্ছে। ওটিটি হলো মূলত প্রাইভেট স্ক্রিনিং। মোবাইলে একা দেখা যায়। তাই অনেক কিছু বিষয় আছে অনেক ওপেনলি দেখানো যায়। আবার সিনেমা হলের বড় পর্দাতেই দেখতে হবে এমন ছবিও থাকবে।

এশিয়ানেট নিউজ বাংলা:  নতুন কী কাজ আসছে?

সুব্রত দত্ত: এই কোভিড সব কিছুই আটকে দিল। কবে যে কাজ করতে পারবো সেটা বলাই মুস্কিল।  দুটো বাংলা ছবির কাজ শুরুর কথা ছিল আর লিড রোল ছিল। বিপরীতে খুব নামকরা একজন অভিনেত্রী কাজ করার কথা। এখনই নাম নিতে পারবো না। কলকাতা গিয়েও ফিরে এলাম। অনেক ওয়েব সিরিজ এর অ্যডভান্স নিয়ে বসে আছি, সেপ্টেম্বর হয়তো কাজ শুরু করবো। অনেক ছবি আটকে আছে। 'টি- ফর তাজমহল' , ' জোসফ', 'বানারস ভ্যানিলা', একটা কমেডি ছবি ' আর্চি'।ভিক্টর বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গেও একটা ছবি আছে। ইতিমধ্যেই অনকগুলি পুরস্কার পেয়েছেন ভিক্টরস্যার। আশাকরি সব স্বাভাবিক হবে। ইন্ডাস্ট্রির অনেক লোকশান হয়েছে। কতো লোকের চাকরি চলেগেছে। বম্বে ছেড়েই চলেগেছে। তবে আশা তো রাখতেই হবে।

Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury