মুম্বইয়ে উত্তম কুমারের সফল না হওয়ার পিছনে কি সত্যি রাজ কাপুরের পরিবার, আসল সত্যটা সামনে এনেছিলেন বিশ্বজিৎ

উত্তম কুমারের ৪২-তম প্রয়াণ দিবস। উত্তম কুমার সম্পর্কে আর এক কিংবদন্তি অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং বরেণ্য  পরিচালক শক্তি সামন্ত মুম্বইয়ে আমাকে যে দু'-একটি ঘটনার কথা শুনিয়ে ছিলেন, সেই দুটি ঘটনার বিবরণ রইল এখানে। 

তপন বক্সী:  আজ উত্তম কুমারের ৪২-তম প্রয়াণ দিবস। উত্তম কুমার সম্পর্কে আর এক কিংবদন্তি অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং বরেণ্য  পরিচালক শক্তি সামন্ত মুম্বইয়ে আমাকে যে দু'-একটি ঘটনার কথা শুনিয়ে ছিলেন, সেই দুটি ঘটনার বিবরণ রইল এখানে। 

 

Latest Videos

আরও পড়ুন-শরীরী প্রেমের নেশায় মত্ত অন্তঃসত্ত্বা নুসরত, চাদরে মুড়ে কাকে আদুরে বার্তা দিলেন 'মম টু বি'

আরও পড়ুন-'পর্ন' কান্ডে জেলে স্বামী, হাতজোড় করে কাতর আর্জি, ম্যারাথন প্রশ্নের মুখে শিল্পা, কী বললেন নায়িকা

 

প্রথম ঘটনা, সাতের দশকের শুরুর দিকে, কলকাতায় নকশাল আন্দোলনের সময় উত্তম কুমারকে নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওতেই তাঁর নিজস্ব মেকআপ রুমে সশস্ত্র হানা দিয়েছিল কয়েকজন যুবক। উত্তমকুমারের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছিল তারা। উত্তম কুমার  এতটাই হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন এবং ঝাঁকুনি খেয়েছিলেন যে সেই দিনই মাথার চুল ছোট করে ছেঁটে বম্বে মেল-এ চড়ে বসে ছিলেন তিনি। যাতে ট্রেনে তাঁকে দেখে কেউ চিনতে না পারেন।

 

 

মুম্বই এসে উত্তম কুমার প্রথম উঠেছিলেন অভিনেতা অভি ভট্টাচার্যর বাড়ি। এভাবে মাস খানেক টানা মুম্বইয়ে কাটিয়ে ছিলেন উত্তম কুমার। দ্বিতীয় দিনেই অভি ভট্টাচার্যর বাড়ি থেকে তিনি রওনা দিয়েছিলেন অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। তখন মুম্বইয়ের সান্তাক্রুজের সাত নম্বর রোডের বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে উত্তম কুমার এসেছিলেন সুপ্রিয়া দেবীকে সঙ্গে নিয়ে। বিশ্বজিতের কথায়, 'আমি সেদিন বেনুদিকে(সুপ্রিয়া দেবী) চিনতে পেরেছিলাম। কিন্তু উত্তমদাকে চিনতে পারিনি। মাথার চুল উত্তমদার সৌন্দর্যের একটা বড় ফ্যাক্টর ছিল। সেই চুল তিনি এক রাতের মধ্যে ক্রু-কাট করে, একেবারে ছোট করে ফেলেছিলেন।'

 

 

কলকাতার ওই ঘটনায় এতটাই ভয় পেয়েছিলেন উত্তম কুমার, যে প্রায় ঠিকই করে ফেলেছিলেন আর কলকাতায় ফিরতে পারবেন না। বিশ্বজিতের ফ্ল্যাটে বসে উত্তম কুমার বিশ্বজিৎ-কে বলেছিলেন, 'বিশু, চল, তুই আর আমি মিলে এখান থেকেই বাংলা ছবি বানাব। আর এখানে বসেই বাংলা ছবির শুটিং করব।' সেই ঘটনা উত্তমকুমারকে এতটাই নাড়া দিয়ে গিয়েছিল যে তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে, কলকাতায় আর তাঁর ফেরত যাওয়া হবেনা। বিশ্বজিতের কথায়, 'বেনুদির মুখ থেকেই শুনেছিলাম, সেদিন এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন উত্তমদা, যে ওঁর পুরো শরীর হলুদ হয়ে গিয়েছিল। তার আগেই উত্তমদা হার্ট অ্যাটাকের ঝাপটা সামলে উঠেছিলেন কোনওভাবে। আর তারপরেই ওই ঘটনা।'

 

 

দ্বিতীয় ঘটনাটির কথা মুম্বইয়ে আমি পরিচালক শক্তি সামন্ত এবং অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় এই দুজনের কাছ থেকেই শুনেছি। ছয়ের দশকের মাঝামাঝি উত্তম কুমার তাঁর কিছু 'বিশেষ বন্ধু'-দের পরিচালনায় হিন্দি ছবির নায়ক হওয়ার জন্য মুম্বই এসেছিলেন। তার বছর দুয়েক আগে রাজ কাপুর তাঁর নিজের প্রযোজনায় 'সঙ্গম'(১৯৬৪) ছবিতে উত্তম বাবুকে একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্র অফার করেছিলেন।  'বন্ধু'-দের বুদ্ধিতে উত্তমবাবু 'সঙ্গম' ছবির কাজ নিলেন না। পরিচালক শক্তি সামন্ত এবং অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় এর মতে, "ওইটাই সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে গেল উত্তম বাবুর হিন্দি ছবির কেরিয়ারে। রাজ কাপুরের 'সঙ্গম' ব্লকবাস্টার হয়েছিল। উত্তম কুমার 'না' করে দেওয়ার পর 'সঙ্গম' ছবির ওই চরিত্রটিতে শেষ পর্যন্ত অভিনয় করেছিলেন রাজেন্দ্র কুমার। 

 

 

রাজ কাপুর, রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে 'সঙ্গম'-এ অভিনয় করেছিলেন বৈজয়ন্তী মালা। ছবিতে রাজেন্দ্র কুমারের যে চরিত্রটি উত্তম বাবুর করার কথা ছিল, সেই চরিত্রটি ছবিতে রাজ কাপুরের নিজের অভিনীত চরিত্রের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

উত্তম বাবুর উপর শ্রদ্ধায় রাজ কাপুর ওই চরিত্রটি উত্তমবাবুকে অফার করেছিলেন।" পরিচালক শক্তি সামন্ত এবং অভিনেতা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, 'উত্তম বাবুর বন্ধু মহলের 'ঘনিষ্ঠ  কেউ কেউ' উত্তম বাবুকে বুঝিয়েছিলেন  যে, ওই চরিত্রে অভিনয় করলে তিনি রাজ কাপুরের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাবেন।'

শক্তি সামন্ত এবং বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়--দুজনের মতেই, "উত্তম বাবুর জীবনে এই ডিসিশনটাই ছিল সবচেয়ে ভুল ডিসিশন। যার খেসারত তাঁকে দিতে হয়েছিল পরে। 'ছোটিসি মুলাকাত '-এর সময়।"

নিজের 'তথাকথিত বন্ধু'-দের পরামর্শে উত্তমবাবু নিজের প্রযোজনায় ছবি করবেন বলে ঠিক করলেন। একক নায়ক হিসাবে সেই ছবিতে উত্তম কুমারের নায়িকা নির্বাচিত হলেন বৈজয়ন্তী মালা। মজার ব্যাপার হল, 'সঙ্গম'-এও  নায়িকার ভূমিকায় ছিলেন বৈজয়ন্তী মালা। 

 

 

কিন্তু 'ছোটিসি মুলাকাত' বিশ্রীভাবে ফ্লপ করল। উত্তম কুমার চরম আর্থিক ক্ষতির শিকার হলেন। সেই ক্ষতির ঝাপটায় শরীরের অবনতি হল। উত্তম কুমারের হার্ট অ্যাটাক হল। বিশ্বজিতের কথায়, 'সারা পশ্চিমবঙ্গে রটে গেল, রাজ কাপুরের রাজনীতিতে উত্তমদা মুম্বইয়ে(তখন 'বম্বে') টিকতে পারলেন না। রাজ কাপুরের জন্যই উত্তমদা মুম্বইয়ে জায়গা করতে পারলেন না। আমি ছয়ের দশকের শুরুতেই 'বম্বে' চলে এসেছিলাম। তখন থেকে টানা মুম্বইয়ের বাসিন্দা। অনেক হিন্দি ছবিতেই কাজ করেছি।রাজ কাপুরের বাবা পৃথ্বীরাজ কাপুর এবং  রাজ কাপুর, শাম্মি কাপুরদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে বলতে পারি, রাজ কাপুর কিংবা কাপুররা কখনওই উত্তম কুমারকে মুম্বই থেকে চলে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করেননি। বরং ঘটনাটা উল্টো। 

'৬৪-তে 'সঙ্গম'-এ উত্তমদা ওই অফারটা নিলে হিন্দি ছবিতে উত্তমদার অন্য ইতিহাস লেখা হত। কিন্তু যেটা বাস্তবে ঘটল, সেটা উত্তমদাকে সেই ইতিহাসটা তৈরিই করতে দিল না। 

আমরা সবাই জানি, কাপুর পরিবার মুম্বই আসার আগে কলকাতাতেই থাকত।  'পাপাজি' মানে পৃথ্বীরাজ কাপুরের মুখে আমি কলকাতার নিউ থিয়েটার্স স্টুডিওর বি.এন. সরকারকে 'গুরুদেব' বলে সম্বোধন করতে শুনেছি। উনি নিউ থিয়েটার্সের বি.এন. সরকারকে গুরু বলে মানতেন। বাঙ্গালিদের রাজ কাপুর বিশেষ ভালবাসতেন। শ্রদ্ধা করতেন।

সেই শ্রদ্ধা আর ভালবাসা থেকেই 'সঙ্গম'-এর অফার তিনি উত্তমদাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু 'তথাকথিত বন্ধু'-দের কথায় উত্তমদা ভুল বুঝলেন। বলা ভাল, ওঁকে ভুলটাই বোঝানো হল। সেই ক্ষত আর সারেনি। আমার মনে হয়, উত্তমদার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সেই সময় থেকেই শুরু।'

Share this article
click me!

Latest Videos

ট্যাব কেলেঙ্কারিতে নয়া মোড়! এবার পুলিশের জালে দিনহাটার এক শিক্ষক, দেখুন | Bengal Tab Scam
'ভাইপোকে উপড়ে ফেলবো' রুদ্রমূর্তিতে শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari | BJP | TMC
'উল্টো ধুয়ে সোজা করব' রুদ্রমূর্তিতে শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari
‘মুখ্যমন্ত্রী গরীবদের আশ্বাস নিয়ে সেটা লুঠ করছেন’ ট্যাব দুর্নীতিতে মমতাকে আক্রমণ দিলীপ ঘোষের
ট্যাবের টাকা মুহূর্তে হাওয়া! কাদের অ্যাকাউন্টে যাচ্ছে , এবার গোসাবায় | Bengal Tab Scam | Gosaba