মঙ্গলবার সকালেই সব যুদ্ধ শেষ করে চিরনিদ্রায় প্রবাদ প্রতীম কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ। দীর্ঘ ২৫ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
নারায়ণ দেবনাথের (Narayan Debnath) চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড (Medical Team)। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সমরজিৎ নস্করের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়েও তাঁর জন্য একটি মেডিক্যাল টিম তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এবারের সমস্যা অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। প্রতিবার নারায়ণ দেবনাথ অসুস্থ হলে এই টিমই তাঁর চিকিৎসা করে থাকে। টানা ২৫ দিন ধরে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। তবে শেষ কয়েকদিনে অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। এর আগে শনিবার পর্যন্ত তিনি বাইপ্যাস সাপোর্টে ছিলেন। কিন্তু তাতেও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমছিল।
বাড়ছিল কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ। মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় অসুধ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরা আলোচনা করে আর কোনও ঝুঁকি নেননি। শনিবার রাত থেকেই তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিন চিকিৎসকেরা লক্ষ্য করেছিলেন যে তাঁর শরীরে যে মাল্টি অর্গানে যে সমস্যা রয়েছে তা ক্রমেই বাড়ছে। তার জেরেই ইংলিস ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত।
এরপরই লক্ষ্য করা যায় যে তাঁর শরীরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর জন্য রক্ত প্রতিস্থাপনও করা হয়ে থাকে। এরপরই চিকিৎসকেরা ভাবেন যে নারায়ণ দেবনাথের শরীরে যে অবনতি ঘটছিল, তা খানিকটা প্রতিরোধ করা গিয়েছে। ডাক্তারের কথায় সোমবার রাতেও নারায়ণ দেবনাথ পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলেন, ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকালেই অবস্থার অবনতী ঘটে, হঠাৎই বেড়ে যায় রক্তচাপ। আর সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নারায়ণ দেবনাথ। গত ২৪ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় লড়াই। এক আগে এই একই মেডিক্যাল টিম বারে বারে সুস্থ করেছেন নারায়ণ দেবনাথকে। বারে বারে লড়াই করে জিতে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হল না। মঙ্গলবারই চলে গেলেন কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ।
আরও পড়ুন- CARTOONIST NARAYAN DEBNATH: 'অপূরণীয় ক্ষতি', নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ শিল্পীদের
আরও পড়ুন- শতকের দোরগোড়ায় থামল জীবনের ইনিংস. চলে গেলেন শৈশবের স্বপ্ন জাগানো কার্টুনিস্ট
নারায়ণ দেবনাথ মানেই কার্টুনের দুনিয়ায় এক যুগের গল্প, যাঁর হাত ধরে কমিকস দুনিয়ার নানা অধ্যায় বোনা হয়েছে। ছোটদের প্রিয় চরিত্র নন্টে ফন্টের (Nonte Fonte) সৃষ্টিকর্তা তিনি। সাদা কালো থেকে রঙিন পাতায় ফুঁটে ওঠা চরিত্রেরা প্রতিটা বাঙালির খুব কাছের। মজার এই কমিকসেই (Comics) মেতে রয়েছে বাঙালিরা বছরের পর বছর। তাঁর অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছিলেন ভক্তরা। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেই তাঁর হাতে এসে পৌছে ছিল পদ্মশ্রী সম্মান।