মিত্রা বন্ধ, বাঙালির স্মৃতিপট থেকে হারিয়েছে আরও সিনেমা হল

৩০ মার্চ কেসরি ছবির শেষ স্ক্রিনিং করে বন্ধ করে দেওয়া হয় মিত্রা সিনেমা হল। ১৯৩১ সালে যাত্রা শুরু মিত্রার। সেই সময়ে যদিও এই সিনেমা হলের নাম ছিল চিত্রা। ১৯৬৩সালে জমিদার হেমন্ত কৃ‌ষ্ণ মিত্র এই সিনেমা হল কিনে নেন। নিজের পদহীর সঙ্গে নাম রাখেন মিত্রা। এই ৮৮ বছরে উত্তর কলকাতার সাবেকের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়ে মিত্রা।

swaralipi dasgupta | Published : Apr 22, 2019 10:47 AM IST

লাল মেঝে ওয়ালা বড় বাড়ি, সরু এঁদো গলি, পাড়ার মোড়ে মোড়ে চপ-মুড়ির দোকান, টানা রিক্সা, আর ট্রাম লাইন- কল্পনায় উত্তর কলকাতার এমন ছবিই ঘুরপাক খায় সেই উত্তর কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাস্তা বিধান সরণী জুড়ে ছিল সিনেমা প্রেমীদের আখড়া। এই রাস্তাকে কেন্দ্র করেই ছিল ১০টি জনপ্রিয় সিনেমা হল। তাদের মধ্যে কয়েকটি এখনও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাকিগুলি এখন শুধুই স্মৃতিপটে। এই বাকিদের দলে সম্প্রতি যুক্ত হয়ে গেল উত্তর কলকাতার অন্যতম মিত্রা সিনেমা হল।

৩০ মার্চ কেসরি ছবির শেষ স্ক্রিনিং করে বন্ধ করে দেওয়া হয় মিত্রা সিনেমা হল। ১৯৩১ সালে যাত্রা শুরু মিত্রার। সেই সময়ে যদিও এই সিনেমা হলের নাম ছিল চিত্রা। ১৯৬৩সালে জমিদার হেমন্ত কৃ‌ষ্ণ মিত্র এই সিনেমা হল কিনে নেন। নিজের পদহীর সঙ্গে নাম রাখেন মিত্রা। এই ৮৮ বছরে উত্তর কলকাতার সাবেকের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়ে মিত্রা।

Latest Videos

রোববারের বিকেলে পরিবার নিয়ে একটা ছবি দেখার মধ্যে যে পেলব আনন্দ ছিল, তার সাক্ষী থেকেছে মিত্রা। উত্তর কলকাতার কলেজের পড়ুয়াদের কাছে তীর্থস্থানের মতো ছিল এই সিনেমা হল। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ক্লাস থেকে পড়ে মিত্রার লাল চেয়ারে বসে পায়ের উপরে পা তুলে ছবি দেখার মধ্যে ছিল স্বর্গীয় সুখ। আর সঙ্গে যদি আলুর চিপস আর ভুট্টা থাকত, তা হলে সেই দিন আর জামার কলার নামতো না।

এই সিনেমা হল শুধু ছবি দেখায়নি। বন্ধুত্বের ভাঙা-গড়া, দল বেঁধে সিনেমা দেখা, প্রথম প্রেমের ঝালমুড়ি সব কিছুর স্মৃতি ধরে রেখেছে। উত্তম কুমার থেকে প্রসেনজিৎ-দেব সব অভিনেতার ভক্তদের পাগলামির সাক্ষী দেখেছে। পাগলামি, ঝালমুড়ি, পড়ুয়াদের পকেটে টান সবকিছু মাল্টিপ্লেক্সের ভারে চাপা পড়েছে। তাই হারিয়ে যাচ্ছে মিত্রা, মেট্রো আরও কত সিনেমা হল।

চেন্নাইয়ের এক বেসরকারি সংস্থার জনসংযোগ পরামর্শদাতা মেঘমা মুখোপাধ্যায় বলছেন, এখন কলকাতার বাইরে আছি। কিন্তু মিত্রা সিনেমা হল-এর সঙ্গে শৈশব কাটিয়েছি। উত্তর কলকাতার কলেজে পড়ায় কত স্মৃতি জড়িয়ে মিত্রায়।

উত্তর কলকাতারই এক প্রৌড়া সুমতি সরকারের কথায়, এক সময়ে বাবা মা-র হাত ধরে কত এসেছি এই হলে। এই হলটাও উঠে গেল ভাবতে পারছি না।

মিত্রার বর্তমান মালিক জানিয়েছেন, এই হল ভেঙেই তৈরি হবে একটি শপিং মল। সিঙ্গল স্ক্রিন হওয়ায় এই হলের প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ কমছিল বলে জানান তিনি। তবে তিনি মনে করেন, মাল্টিপ্লেক্স নিয়ে রমরমা তৈরি হওয়ায়ই প্রাচীন হলগুলির এই পরিণতি।

কিছুদিন আগেই মেট্রো সিনেমা হল ভেঙে তৈরি হয়েছে শপিং মল ও মাল্টিপ্লেক্স। বাঙালির স্মৃতিপট থেকে হারিয়ে গিয়েছে রূপবানি, এলিট, বিজলী, ছবিঘর, টকি শো হাউজের মতো সিনেমা হল। এক সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপবাণী সিনেমা হল-এর উদ্বোধন করেছিলেন। মিত্রার কাছেই দর্পণা ও মিনার এখনও জীবিত থাকলেও, সেগুলিকে সরিয়েও যে খুব শীঘ্রই শপিং মল জায়গা করে নেবে তা আন্দাজ করাই যায়।

কিন্তু যতই মাল্টিপ্লেক্স ও শপিং মল জায়গা করে নিক, উত্তর কলকাতার ইতিহাস, মানুষের স্মৃতিতে অবিনশ্বর থেকে যাবে মিত্রার মতো সিনেমা হল।

Share this article
click me!

Latest Videos

ঘটনাকে চাপছে কারা! কার ভয়ে মুখ খুলছে না সঞ্জয়! ভালো করে দেখুন | RG Kar Case | Kolkata Doctor News
৫০০০ টাকা ধার শোধ করতে না পারায় যা ঘটল! দুপক্ষই থানার দ্বারস্থ | Berhampore News Today | Bangla News
Sukanta Majumdar live: কালনায় সদস্যতা অভিযানে সুকান্ত, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
'কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয়না তেমনই মমতার পুলিশকে পরিবর্তন করা যায় না' বিস্ফোরক মন্তব্য শুভেন্দুর
'পুলিশ তৃণমূলের কাউকে টাচ করতেই ভয় পায়' কেন! জানালেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | BJP vs TMC |