৯৯ বছর পেরিয়ে শতবর্ষে পা দিলেন খ্যাতনামা পরিচালক সত্যজিৎ রায়। এক বাঙালি কিংবদন্তি যিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার । আজ তার জন্মশতবর্ষে শহর কলকাতা জুড়ে সাজো সাজো রব। অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবর্ষ আর এক্সক্লুসিভ কোনও আয়োজন থাকবে না সেটা কখনওনই হতে পারে না। সেইমতো প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে অনেকদিন আগে থেকে। আয়োজনেও কোনও খামতি ছিল না। কিন্তু বাধ সাধল করোনা। গোটা বিশ্ব জুড়ে তার দাপটে কাবু জনজীবন। প্রতিবছর স্কুলের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় যার নাম ' ইস্কুলে বায়োস্কোপ'। বছরের মাঝামাঝি সময় মূলত জুন জুলাই মাসে এই অনুষ্ঠান হয়। প্রতি বছরের মতো এবছরও এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-শেষের দিকে ২ মে গা ঢাকা দিতেন সত্যজিৎ রায়, কীভাবে নিজের জন্মদিন পালন করতেন পরিচালক...
১৯২১ সালে ২ মে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। আজ তার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে সেই অনুষ্ঠান এগিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু করোনা আতঙ্কের জেরে স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকায় অনলাইনের ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর প্রতি বছরের মতোন এই বছরও 'দ্য সস ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন ' ইস্কুলে বায়োস্কোপ নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছে। ' ইস্কুলে বায়োস্কোপ ' এই বছর শুরু হতে চলেছে ৪ মে থেকে। 'দ্য সস ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন ' এর কর্ণধার জানিয়েছেন, 'প্রতিবছর এই শিশু চলচ্চিত্র উৎসব জুন-জুলাইতে হলেও এই বছরটা ভীষণ স্পেশ্যাল। আর অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষের কারণেই এই বছর মে মাসে অনুষ্ঠানটি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে ই-মেল ও হোয়াটসঅ্যাপ মারফৎ পাঁচটি প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে। সেই প্রশ্নের মাধ্যেম সত্যজিৎ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ও ধারণা পাওয়া যাবে। 'সেই তথ্য একত্র করেই বানানো হবে একটি তথ্যচিত্র। যারা নাম হবে 'মহারাজা তোমাকে শতবর্ষের সেলাম '।
আরও পড়ুন-শতবর্ষে সত্যজিৎ, 'মহারাজা'র ১০০ তম জন্মদিনে 'সেলাম' জানিয়ে টুইট মমতার...
এই তথ্যচিত্রই হতে চলেছে সত্যজিৎ রায়ের উপর নির্মিত প্রথম ক্রাউড সোর্সড তথ্যচিত্র। এইবছর সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ১০০টিরও বেশি স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই অনুষ্ঠান। লকডাউনের কারণে বর্ষব্যাপী এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্যায় পুরোটাই অনলাইনে হবে। ছাত্রছাত্রীরা নিজের বাড়িতে বসেই এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মারফত কিছু কাজ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। আর সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে গেলে সবার প্রথমে সত্যজিৎ রায়ের ছ'টি ছায়াছবি মন দিয়ে দেখতে হবে ও বুঝতে হবে। সেই ছ'টি চলচ্চিত্র হল, 'গুপী গাইন বাঘা বাইন', 'হীরক রাজার দেশে', 'গুপী বাঘা ফিরে এল', 'সোনার কেল্লা', 'জয় বাবা ফেলুনাথ' ও 'ফটিকচাঁদ'। তারপর এই ছবিগুলি দেখার পর যে টাস্ক দেওয়া হবে তা অনলাইনেই জমা দিতে হবে। তার মধ্যে থেকে বাছাই করে জুলাই মাসের শেষে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেওয়া হবে। সেখানেই দেখানো হবে বাছাই করা কাজগুলি।
আরও পড়ুন-শতবর্ষে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়, শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে মাতল বাঙালি...
সত্যজিৎ রায়ের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে এটিই একমাত্র অনুষ্ঠান যেখানে এত ছাত্র-ছাত্রী একসঙ্গে অংশগ্রহণ করবে। সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায়ও ভীষণ খুশি হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, 'এটা ভীষণই ভাল একটা বিষয়। বাবাকে নিয়ে স্কুল প্রাঙ্গনে এমন এক অনুষ্ঠানের কথা শুনে ভীষণই ভাল লাগছে। যেকোনও সংস্কৃতি চর্চা অবশ্যই শুরু হওয়া উচিত এই স্কুল স্তর থেকে। এবং এই বিশেষ অনুষ্ঠান শুধুই সত্যজিৎ রায়ের কিছু ছবি দেখানোয় সীমাবদ্ধ নয়। ছবিগুলি নিয়ে ক্যুইজ, নতুন ভাবনা, বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দেওয়া, পোস্টার বানানো , বাছাই চরিত্র নিয়ে আলোচনা তৈরি করার সুযোগ পাবে। সত্যিজিৎ রায়কে এখনকার প্রজন্মের কাছে নতুন রূপে পৌঁছে দেবে এই প্রয়াস।