১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের পর দেশ তখন কার্যত বিধ্বস্ত। তাবড় শিল্পীদের একছাতার নীচে নিয়ে ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ১৯৬৩ সালে দিল্লির রামলীলা ময়দানে তেমনই একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেখানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর।
সালটা ১৯৬২। ভারত-চিন যুদ্ধের (1962 Indo-China war) সময় একের পর এক মৃত্যু বরণ করছেন দেশের বীর সেনারা। তাঁদের উদ্দেশ্যেই 'অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ' (Ae Mere Watan Ke Logon) গানটি লিখেছিলেন সুরকার কবি প্রদীপ (Kavi Pradeep)। আর সেই গানই গাইতে শোনা যায় সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরকে (Lata Mangeshkar)। তাঁর গলায় এই গান শুনে আবেগ আর ধরে রাখতে পারেননি দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু (Prime Minister Pandit Jawaharlal Nehru )। কেঁদেই ফেলেন তিনি।
১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধের পর দেশ তখন কার্যত বিধ্বস্ত। তাবড় শিল্পীদের একছাতার নীচে নিয়ে ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। ১৯৬৩ সালে দিল্লির রামলীলা ময়দানে তেমনই একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেখানে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। সেই মঞ্চেই গান গাইতে উঠেছিলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের মাত্র দিন আগেই কবি প্রদীপ ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগোঁ’ গানটি ধরান লতাকে। এদিকে রিহার্শাল করার মতো সময় নেই তাঁর হাতে, সেই কারণে প্রথমে সেই গান ধরতেই চাননি তিনি। ওদিকে আবার জেদ ধরে বসেছিলেন সুরকার। তাই ইচ্ছে না থাকলেও রাজি হতে হয়েছিল লতাকে। সেই মতো ২৭ জানুয়ারি রামলীলা ময়দানের মঞ্চে ওঠেন তিনি। আর তাঁর গলায় সেই গান দেশাত্মবোধকে যেন আরও অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল। নাড়িয়ে দিয়েছিল জওহরলাল নেহরুকেও। এই গান শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে গানটি নিয়ে অজানা গল্প শুনিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের পর তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু। তারপর জানিয়েছিলেন, ‘খুব ভালো গেয়েছ তুমি। আমার তো চোখে জল চলে এসেছিল।’ কিন্তু, তাঁর গলায় যে এই গান সবার এতটা ভালো লাগবে তা ভাবতেই পারেননি লতা। বুঝতে পারেননি যে দেশাত্মবোধের সঙ্গে পরিপূরক হয়ে উঠবে তাঁর এই গান। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি এস রাধাকৃষ্ণণ, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধীর মতো ব্যক্তিত্বরা।
আরও পড়ুন: লতা মঙ্গেশকরের সম্মানে ২ দিনের জাতীয় শোক, জেনে নিন জাতীয় শোকের নিয়ম
প্রদীপের মাথায় যখন প্রথম এই গানের ভাবনা এসেছিল সেই সময় সমুদ্র সৈকতে ছিলেন তিনি। ফলে হাতের কাছে গান লেখার মতো কিছুই ছিল না। তখন সিগারেটের প্যাকেটের উপর এই গান লিখে রেখেছিলেন তিনি। আর চেয়েছিলেন তাঁর এই গান যেন গান লতা মঙ্গেশকর। এ প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে লতা বলেছিলেন, "প্রদীপজি এই গানটি লিখেছিলেন, আমাকে গাইতে বললেও প্রথমে রেওয়াজের সেভাবে সুযোগ না থাকায় গাওয়ার বিষয়ে রাজি ছিলাম না। এরপর এক প্রকার জোর করেই আমাদের রাজি করেছিলেন প্রদীপ জি। বলেছিলেন আমি ওই গান না গাইলে গোটা পরিকল্পনাই তিনি বাতিল করে দেবেন।" এরপর গীতিকার হেমন্ত কুমার পুরো গানটি তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন। গানটি খুব হিট হয়েছিল। এরপর এই গান প্রজাতন্ত্র দিবসেও গাওয়ার জন্য লতার ডাক পড়েছিল। কিন্তু, আগের দিন থেকেই তাঁর পেটে ব্যথা ছিল।
ফলে পেটে ব্যথা নিয়েই কোনওরকমে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন লতা। অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার পর স্টেজের পিছনে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখন মেহবুব খান (Mehboob Khan) এসে তাঁকে জানান জওহরলাল নেহেরু তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তারপর সাক্ষাৎ হতেই আবেগপ্রবণ হয়ে ওই গান শুনে কেঁদে ফেলার কথা লতাকে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সাড়ে ৬ মিনিট ধরে গানটি গেয়ে লতা যখন মঞ্চ থেকে নেমে আসেন, তারপর নেহরু তাঁকে বলেছিলেন, "সত্যিকারের ভারতীয় হলে, এই গানে মন কাঁদবেই।" এমনকী, সেই অনুষ্ঠানেই রাজীব গান্ধী ও সঞ্জয় গান্ধীর সঙ্গে লতাকে পরিচয় করিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।